,

রাজনৈতিক অস্তিরতার সুযোগে হবিগঞ্জ শহরে বেড়েছে ভূয়া ডাক্তারদের দৌরাত্ম ভুল চিকিৎসা প্রদানকারী মমতাজ এখনও লাপাত্তা

সজিব ইসলাম ॥ হবিগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাতুড়ে ডাক্তার ও দাওয়াখানা থেকে ওষুধ কিনে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন সহজ-সরল মানুষ। জাতীয়, স্থানীয়সহ পত্রিকায় একাধিকবার ভুয়া চিকিৎসক ও হেকিমদের দৌরাত্ম সম্পর্কে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসনের অভিযানে একাধিক ভূয়া ও হাইফাই পদবীধারী ডাক্তারদের জরিমানাও করা হয়। সম্প্রতি রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে এ বিষয়টি আড়ালে চলে যাওয়ায় তারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। উল্লেখ্য গত সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকার স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হাতুড়ে ডাক্তার মমতাজ বেগম রিনার ভুল চিকিৎসায় তুলনা বেগম (২৫) নামে এক প্রবাসির স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। মৃত গৃহবধু বানিয়াচং উপজেলার রঘু চৌধুরীপাড়া গ্রামের নেপাল প্রবাসী রুবেল মিয়ার স্ত্রী। তুলনার স্বজনরা জানায়, একমাস পূর্বে প্রসুতি ব্যথা উঠলে তুলনাকে কথিত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ মমতাজ বেগম রীনার নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক চেষ্টার পর রীনা ব্যর্থ হলে তুলনাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে তুলনা একটি মৃত নবজাতকের জন্ম দেন। সিজার শেষে বাড়িতে যাওয়ার কিছুদিন পর তুলনা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার স্বজনরা মমতাজ বেগম রীনার নিকট আসেন। এসময় মমতাজ বেগম রীনা, তুলনার স্বজনদের জানান, সিজারের সেলাই খোলে যাওয়ায় তুলনা অসুস্থ হয়েছে। অপারেশনের মাধ্যমে পুনরায় সেলাই করে দিতে হবে। সহজ সরল তুলনার স্বজনরা রাজি হলে কথিত স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মমতাজ বেগম রিনা ইনজেকশন পুশ করে তুলনার খোলে যাওয়া সেলাই মেরামতের কাজ শুরু করে। সেলাইয়ের ঘন্টাখানেক পরও জ্ঞান না ফেরায় তুলনার স্বজনরা চেচাঁমেচি শুরু করে। তড়িগড়ি করে তুলনাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গোলাম মহিউদ্দিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে ঘটনার পর থেকে কথিত ডাক্তার মমতাজকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। গত মঙ্গলবার সরেজমিন মমতাজের চেম্বারে তার খোঁজে গেলে আশপাশের বাসিন্দারা জানান, ঘটনা ঘটিয়েই তল্পিতল্পা নিয়ে পালিয়েছে মমতাজ। এরপর থেকে তার চেম্বার তালাবদ্ধ রয়েছে। মোবাইলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। উল্লেখ্য মমতাজ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার একটি বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। ইতোপূর্বে ভ্রাম্যমান আদালত তাকে জরিমানা করলে কিছুদিন সে তার আনাড়ি চিকিৎসাবিদ্যা বন্ধ রাখে। কিছুদিন যাওয়ার পর মমতাজ বেগম রিনা নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে একই বাসায় একটি মিনি হাসপাতাল খোলে বসে। সেখানে তিনি গর্ভপাত থেকে শুরু করে নানা অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। এ ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করছে ওই এলাকার কতিপয় দালাল, নেশাখোর, ও রিকশাচালক। এরা টাকার বিনিময়ে গ্রামের সহজ-সরল মহিলাদের সরকারি হাসপাতাল কিংবা বাড়ি থেকে এনে চিকিৎসার নামে সর্বস্বান্ত করছে। এর আগেও মমতাজকে ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার জরিমানা করেছেন। এদিকে যৌন অম পুরুষদের শক্তি বৃদ্ধি, ক্যান্সার, চর্মরোগ, হাঁপানি, গেজসহ সব রোগ নিরাময়ের দাওয়াই দিচ্ছে একশ্রেণীর ভুয়া হারবাল চিকিৎসক। কিন্তু এদের অধিকাংশেরই হেকিমি কিংবা হারবাল শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান নেই। হারবাল সম্পর্কে কোনো জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও তারা গ্রামের লোকদের ফতুর করছে। এদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে অল্প শিক্ষিত ও দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন। এসব রোগীর কাছে চড়ামূল্যে ওষুধ বিক্রি করে নিজেদের পকেট মোটা করছে তথাকথিত এই চিকিৎসকরা। ওষুধ সেবন করে কোনো ফল না পেয়েও লোকলজ্জার ভয়ে তা হজম করে যাচ্ছেন অনেকে। মোটা অঙ্কের ভিজিট ও ওষুধ বিক্রি করে এই চিকিৎসকদের কেউ কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বার ও বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। এসব ভূয়া ডাক্তার সংগঠন তৈরি করে নিজেদের ভিতকে শক্ত করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার কেউ কেউ এ ব্যবসার আড়ালে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছে।


     এই বিভাগের আরো খবর