,

বাহুবলে মাধক বিক্রেতার বাড়িঘরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও গণধোলাই…হামিদের অবস্থা আশংকাজনক ॥ সন্দেহভাজন ২ মহিলা ও যুবককে আটক ॥ পুলিশে সোপর্দ

রাজন আহমেদ, বাহুবল থেকে ফিরে ॥ বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী মন্ডলকাপন গ্রামের মৃত জব্বার মিয়ার পুত্র বহু অপকর্মের নায়ক আব্দুল হামিদ (৪৫) এর বাড়িঘর, ফার্ণিচার দোকানের মালামাল, একটি প্রাইভেট কার ভাংচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। এসময় জনতার পিটুনিতে হামিদের অবস্থা আশংকাজনক। তার বসত বাড়িতে জনতা তল্লাশী চালিয়ে সন্দেহভাজন ২ মহিলা ও ১ যুবককে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ২৫ ফেব্র“য়ারি বুধবার সকাল ১০ টারদিকে। সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ হামিদ মরণ নেশা হিরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, পতিতা নারী ব্যবসা, গাঁজা, হত্যা, অপহরণ, ডাকাতির মত জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত। সে ১৫/১৬ বছর যাবৎ এসব অপকর্ম করে আসছে বলে জানান এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে সে উল্লেখিত অপরাধের দায়ে বহুবার কারাভোগ করেছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে অসংখ্যবার। তার এসব অপকর্মের পিছনে অনেক রাঘব বোয়ালও জড়িত বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে হামিদ নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইহাল গ্রামের তরুণ সাংবাদিক জুনাইদ হত্যা মামলায় বেশ কয়েকমাস কারাভোগ করে। পরে সে সিন্ডিকেট চক্রের সহায়তায় আইনের ফাঁকফোকরে জামিনে বেরিয়ে আসে। কিন্তু কোন অবস্থায়ই সে অপরাধকর্ম ত্যাগ করতে পারেনি। পুটিজুরী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই তার বাড়ি। এই মহাসড়কের সাথে যুক্ত রয়েছে তার ফার্ণিচার দোকান। রাতের আধাঁরে ওই দোকানে বসেই চলে অপরাধ জগতের সব পরিকল্পনা। এলাকার সচেতন মহলের দেয়া সূত্রমতে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই তার বাসা ও দোকানে বিভিন্ন প্রকার প্রাইভেট কার, নোহা ও কালো গ্লাসের হাইয়েস কার যোগে সুন্দরী রমণীসহ বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওইরকম গাড়িতে করে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের মত ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসীর বদ্ধমূল ধারণা, ওইসব অপকর্মে হামিদও জড়িত থাকতে পারে। যেভাবে ঘটে হামিদের গণপিটুনি ও অগ্নিসংযোগ ঃ গতকাল বুধবার সকাল ১০ টারদিকে গোপনসূত্রে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন তার দোকান ও বসতবাড়ি ঘেরাও করে ফেলেন। এরই মাঝে তার দোকানের সমুদয় ফার্ণিচার আসবাবপত্র, মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেট কার আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। অবস্থা বেগতিক দেখে হামিদ তার বসতঘর থেকে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাড়ির পশ্চিমে একটি ঝোপে আত্মগোপন করে। ঝোপে লুকানো অবস্থা থেকেই তার দোকান ও বাড়ির তান্ডব অবলোকন করতে থাকে। এমতাবস্থায় হঠাৎ স্থানীয় কয়েক যুবক তাকে দেখে ফেললে শোর চিৎকার দিয়ে জনতা তাকে ধাওয়া করে হাতে নাতে ধরে প্রচন্ড গণধোলাই দেন। এতে অবস্থা আশংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছে। এসময় উত্তেজিত যুবকরা, সে মারা গেছে মনে করে তাকে টেনে হেচড়ে মহাসড়কে মাঝখানে রেখে দেন। এ অবস্থায় ক্ষণিক সময় যানচলাচল বন্ধ থাকে। এঘটনা শুরুর কিছু সময় পরই খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও বাহুবল মডেল থানার ওসিসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও উত্তেজিত জনতার মাঝে পুলিশ ছিল প্রায় অসহায়। পরে পুলিশ হামিদকে জনতার কবল থেকে একটি সিএনজি যোগে পুলিশ প্রহরায় বাহুবল হাসপাতালে প্রেরণ করেন। আটককৃতরা হল, নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামের মৃত মোতালেব মিয়ার স্ত্রী আয়ফুল বিবি (৫৫), তছলিব উদ্দিনের পুত্র এনাজ উদ্দিন (৩২) ও বড়চর গ্রামের মৃত জমির আলীর কন্যা ও লন্ডনপ্রবাসী আবুল হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার (২৬)। থানায় আটক সীমা জানায়, সে পথচারী। হামিদের দোকান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের কারণে গাড়ি চলাচল করছিল না। এমতাবস্থায় সে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় লোকজন সন্দেহভাজন হিসেবে রাস্তা থেকেই আটক করেন। আটককৃতদের থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। আগুণে পুড়িয়ে যাওয়া কারের চালক পালিয়ে গেছে। এদিকে গত মঙ্গলবার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আনসার মিয়ার ২য় শ্রেণি পড়ুয়া পুত্র শাহীন (১১) স্কুল থেকে নিখোঁজ হয়। হামিদের এ অবস্থার খবর পেয়ে নাতির সন্ধান পেতে শাহীনের নানি বানেছা খাতুন হামিদের বাড়িতে মুর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি নাতি শাহীনের সন্ধান চান। তার ধারণা হয়ত শাহীন অপহরণে হামিদও জড়িত থাকতে পারে।


     এই বিভাগের আরো খবর