,

কার সিদ্ধান্ত বড়? মেয়র নাকি কম্পিউটার ম্যানের! সৌদি আরব গমনেচ্ছুদের নিবন্ধনের ফরম বিতরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়

জুয়েল চৌধুরী ॥ সৌদি আরব গমনেচ্ছু কর্মীদের নাম নিবন্ধনের ফরম বিতরণ নিয়ে রমরমা ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভা থেকে শুরু করে জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে এই ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি কর্মীর নাম নিবন্ধনে বিতরণকৃত ফরমে এক থেকে দেড়’শ টাকা বেশি নিচ্ছে নিবন্ধন কাজে নিয়োজিত কতিপয় কর্মচারী ও দালাল চক্র। এই চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে, তাদের বাড়তি টাকা না দিলে নাম নিবন্ধন করতে পারছেন না কোন কর্মী। গত ৯ ফেব্র“য়ারি থেকে নাম নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জ পৌরসভার কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ নাম নিবন্ধনের জন্য হবিগঞ্জ পৌরসভায় ভিড় করেছেন। প্রতি কর্মীকেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনলাইনে নাম নিবন্ধনের জন্য ফরম ক্রয় করতে হয়েছে। গতকাল বুধবার হবিগঞ্জ পৌরসভার সামনে শত শত কর্মী সাংবাদিকদের এমনই অভিযোগ করেছেন। কম্পিউটারে পূরণকৃত প্রিন্টিং কপি দিলে সার্ভিস চার্জ স্বরূপ ১শ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র। পৌরসভার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কম্পিউটার অপারেটর শেখ তানভীর আহমেদ নিবন্ধন ফরম ফটোকপি করে কর্মীদের নিকট থেকে ১শ থেকে দেড়শ টাকা করে নিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পৌরসভার অনেক কর্মী যারা ফরম পুরণ করতে পারছেন না, তাদের কাছ থেকে ফরম পুরণের নামে আরো ৫০ থেকে ১শ টাকা বেশি নিতে দেখা গেছে। এজন্য কম্পিউটার অপারেটর তানভীর তার নিয়োজিত ২ জন দালাল নিয়োগ করেছেন যে, ফরম পুরণের নাম করে উল্লেখিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে এমন চিত্র পৌরসভায় দেখা গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে পৌরসভার বিএমইটির রেজিস্ট্রেশন বিভাগ ও কম্পিউটার অপারেটর যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত সহস্রাধিকেরও বেশি কর্মী রেজিস্ট্রেশন বা নাম নিবন্ধন করেছেন। এদের প্রতিজনের কাছ থেকেও যদি ১শ টাকা করে বেশি নেয়া হয় তাহলে প্রায় ১ লক্ষ টাকার হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এই বিপুল অঙ্কের টাকা পৌরসভার দরিদ্র নাগরিক নিরীহ মানুষের পকেট থেকে গচ্ছা গেছে। নিবন্ধন কার্যক্রম যতদিন চলবে টাকার পরিমাণ ততদিন বাড়বে। উল্লেখ্য সৌদি প্রতিনিধি দল ১০ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় আসে। তার আগের দিন থেকে সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের জন্য নিবন্ধন করা কেন্দ্রীয়ভাবে শুরু করে বিএমইটি। প্রথমে চার দিনের জন্য নাম নিবন্ধনের জন্য সময় ঠিক করা হয়। পরে কর্মী সংখ্যা ব্যাপক হওয়াতে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আর এ সুযোগটি কাজে লাগায় জেলার বিভিন্ন পৌরসভার কতিপয় অসাধু কর্মচারি। পৌর কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষরাও বিষয়টি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। প্রতিকর্মী নাম নিবন্ধনের জন্য এক শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা বেশি নিয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ শুরু করেন। যারা বাড়তি টাকা দেন তাদের আর কোন বেগ পেতে হয়না। পরে এক পর্যায়ে নিবন্ধন ফরম শেষ হয়ে গেলে ওই ফরম আবারো ফটো কপি থেকে ফটোকপি করে বিক্রি করা হচ্ছে। যার কোন বিধান নেই। গতকাল বুধবার হবিগঞ্জ পৌরসভায় বিনামূল্যে নিবন্ধন ফরম ফটোকপি করে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত মূল্যে নিবন্ধন ফরমের ফটোকপি বিক্রির টাকা পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটর তানভীর থেকে শুরু করে অসাধু কর্মচারিরা ভাগ নিচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলো থেকেও বিদেশ গমনেচ্ছুরা নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য ঢাকা ও জেলা শহরে আসতে হবে না। এই ঘোষণার পর জেলা শহরগুলোতে নিবন্ধনের জন্য ভিড় কমে যায়। একটি সূত্র জানায়, দেশে বেকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সৌদি যাওয়ার জন্য অনেক শিক্ষিতরা নাম নিবন্ধন করছেন। তাছাড়া সৌদি যেতে আগে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হতো। এখন এই খরচ কমে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় চলে এসেছে। কম খরচে সৌদি যাওয়ার সুযোগ পেয়ে বেকার যুবক যুবতীরা নাম নিবন্ধন করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের নিবন্ধন নিয়ে এমন ব্যবসার খবর মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ঠ সব মহল জানলেও কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। নাম নিবন্ধনের জন্য সরকারের ঘরে ২শ’ টাকা ফি জমা দিতে হচ্ছে। আবার কর্মীদের বাড়তি এক দেড় শ’ টাকা দিতে হচ্ছে। এতে নিবন্ধন কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে কর্মীরা কি লাভবান হতে পারবেন? যদি তাদের নাম নিবন্ধন হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি টাকা দিয়েও খুশি থাকবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র পিয়ারা বেগমকে জানালে তিনি জানান, ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোন নিয়ম নেই। তিনি সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত তানভীরকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। এসময় তানভীর জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাইমুজ্জামান মুক্ত স্বাক্ষরিত একসেস টু ইনফরমেশন এটুআই প্রোগ্রামের একটি কাগজ নিয়ে হাজির হয়। এতে লেখা আছে, আবেদনের সকল কার্যাবলী সম্পাদনের লক্ষ্যে উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ ১শ টাকা করে সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিতে পারবেন। তবে কেউ যদি না দিতে চান, তবে বিনামূল্যে দিতে হবে। কিন্তু তিনি কাজ না করেই শুধু ফরমের মূল্য হিসেবে কেন ১শ থেকে দেড়শ টাকা নিচ্ছেন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সুদত্তর দিতে পারেননি। এ নিয়ে হবিগঞ্জ পৌরবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কে বড়? তানভীর না মেয়র, নাকি সরকার?


     এই বিভাগের আরো খবর