,

মাধবপুরে দুই সন্তানসহ মায়ের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল, সন্দেহের তীর স্বামীর দিকে ॥ আটক ১

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাধবপুর উপজেলার নিজনগর গ্রাম থেকে গলাকাটা অবস্থায় দুই শিশু ও ঝুলন্ত অবস্থায় তাদের মায়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি দুই শিশুকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন এ নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী
ও স্বজনদের সন্দেহের তীর ওই নারীর স্বামী মজিবুর রহমান মজিদের দিকে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক থাকায় সন্দেহে আরও ঘণীভুত হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ও এলাকাবাসী প্রথমে ধারণা করেছিল, দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে মা আত্মহত্যা করেছেন। তবে পরে গৃহবধূর স্বজনরা দাবি করেন, তাদের তিন জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাস বলছেন, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে এটি হত্যাকান্ড। নিহত মা হাদিছা বেগমের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক জনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। তবে তার নাম-পরিচয় এখন বলা যাচ্ছে না। এছাড়া নিহত নারীর মাথার পেছনের দিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড না, আত্মহত্যা তা এখন বলা যাচ্ছে না। পুলিশ রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের নিজনগর গ্রাম থেকে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ ওই গ্রামের ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান মজিদের স্ত্রী হাদিছা বেগম (২৫), তার শিশু কন্যা মিম (৩) এবং ৭ মাসের শিশু পুত্র মোজাহিদের লাশ উদ্ধার করে শনিবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করে। এ ঘটনার পর পরিবারের অন্য সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রতিবেশী পুরুষরাও ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। শনিবার সকালে নিজনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুল মজিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কোনো লোকজন নেই। প্রতিবেশী খোর্শেদা বেগম নামে এক নারী জানান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ তার স্ত্রী রাজিয়াকে ও ছোট মেয়ে কলেজছাত্রী মিতুকে নিয়ে আলাদা একটি মাটির ঘরে বসবাস করেন। শুক্রবার রাত ৯টায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নাতনি মিমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে কি-না জানতে চেয়ে মিমের মা হাদিছাকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করেন। কিন্তু ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাননি। ঘরের ভেতর দিয়ে কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে গিয়ে দেখতে পান মিমের গলা বিচ্ছিন্ন লাশ খাটের ওপর এবং হাদিছার লাশ ঝুলছে। নাতনি ও পুত্রবধূর এ অবস্থা দেখে রাজিয়া বেগম চিৎকার করে ওঠেন। তার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা গিয়ে মিমের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ এবং পুত্রবধূর লাশ দেখতে পান। কিন্তু ওই কক্ষে তাদের ৭ মাসের শিশু পুত্র মোজাহিদকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনাটি মিমের বাবা আব্দুল মজিদকে জানালে তিনি ধর্মঘর বাজার থেকে দ্রুত বাড়িতে এসে এ দৃশ্য দেখতে পান। ধর্মঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম কামাল জানান, মাধবপুর থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১১টায় একটি কক্ষ থেকে মেয়ে মিমসহ মায়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই ঘরের পূর্ব দিকের অপর একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে তালা ভেঙে ৭ মাসের শিশু মুজাহিদের গলা বিচ্ছিন্ন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের কেনা পূর্বপাড়ার শামিম মিয়ার মেয়ে হাদিছা আক্তারের সঙ্গে মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের নিজনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের ছেলে মজিবুর রহমান মজিদের বিয়ে হয়। হাদিছার বাবা শামিম মিয়া জানান, মেয়ের বিয়ের সময় তিনি সাধ্য অনুযায়ী যৌতুক দেন। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই মজিদ যৌতুকের জন্য হাদিছাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ নিয়ে ৭ দফা সালিশ বৈঠক হয়েছে। মেয়ের সুখ শান্তির কথা চিন্তা করে একাধিক বার টাকা দিয়েছেন। এমনকি সর্বশেষ ঘর তৈরির জন্য ইট ও রড দিয়েছেন। এরপরও তার ওপর নির্যাতন করা হতো। তাছাড়া জামাই মজিদ পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। এ ঘটনা হাদিছা কয়েকবার আমাদের কাছে বলেছে। যৌতুক ও পরকীয়ার কারণেই হাদিছা ও তার সন্তানদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে আব্দুল মজিদের স্বজনদের অভিযোগ, হাদিছা খুবই জেদি স্বভাবের নারী ছিল। স্বামীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অভিমান করে তার দুই সন্তানকে সে নিজ হাতে খুন করে নিজে সিলিং ফ্যানে রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মাধবপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, শিশু দু’টির মৃত্যু নিঃসন্দেহে হত্যাকান্ড। হাদিছার মৃত্যুটি হত্যা না আত্মহত্যা এটি এখনো স্পষ্ট নয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে পর্যন্ত মামলা হয়নি। তবে পুলিশ সুপারের নির্দেশে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করছে।


     এই বিভাগের আরো খবর