,

আউশকান্দি অরবিট হসপিটালের ডাঃ খায়রুল বাশারের প্রতারনা

ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ক‚চক্রি মহলের দৌড়ঝাপ

মতিউর রহমান মুন্না: নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি-হীরাগঞ্জ বাজারে অবস্থিত অরবিট হসপিটালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ.এইচ.এম খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি ক‚চক্রি মহল মরিয়া হয়ে উঠেছে। হসপিটাল কর্তৃপক্ষের ভাড়াটিয়া লোকদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে বলে
অভিযোগ করেন শিশু ইসমত নাহার জিবার মা শিরিন আক্তার। এ ছাড়াও ওই সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রীতিমত ভাইরাল হয়। দেশ ও বিদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজনও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই ওই চিকিৎসককে ‘প্রতারক’ আখ্যায়িত করে তার শাস্তি দাবী করেছেন। এমনকি এ ঘটনার পর ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা তথাকথিত হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোকে অপ চিকিৎসার জন্য দায়ী করছেন সচেতন মহল।
শিশুর মা শিরিন আক্তার জানান, এ ঘটনার পর থেকে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য তাকে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর ওই হসপিটালের পরিচালক মুহিবুর রহমান হারুন তার স্বামী রুবেল মিয়াকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেছেন ‘ডাক্তাররা বলে এক রকম করে আরেক রকম।’
এনিয়ে গত শনি ও রোববার টিভি চ্যানেলসহ স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচারের পর অরবিট হসপিটালের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়ে তারা তাকে হয়রানীসহ বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো জানান, ‘মরে যাবো তবু টাকা বা অন্যায়ের কাছে নত হবো না।’
এদিকে অরবিট হসপিটালের চিকিৎকের অপকর্মের খবর প্রকাশ হওয়ার পর নবীগঞ্জ শহরে গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রাইভেট হসপিটাল ও ডায়গনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
নবীগঞ্জ শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো ডায়গনষ্টিক সেন্টার রয়েছে। যেখানে প্যাথলজিকেল কাজ করার কথা থাকলেও ওই সমস্ত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে প্যাথলজিকেল পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারসহ বিভিন্ন ডিগ্রীধারী ডাক্তাররা মোটা অংকের ভিজিটের বিনিময়ে নিয়মিত রোগী দেখে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ডাক্তারদের সাথে ডায়াগনষ্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে প্রয়োজন ছাড়াও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়। যে কারণে ওইসব হসপিটাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আতংক দেখা দিয়েছে। অরবিট হসপিটালের চিকিৎসকের প্রতারণার সংবাদটি গতকাল ছিল নবীগঞ্জ শহরের টক অব দ্যা টাউন। অনেকেই সরাসরি পত্রিকা অফিসে এসে এবং কেউ কেউ মোবাইল ফোনে সংবাদ প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এ ধরণের প্রতারকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশের অনুরোধ করেন। আলোচিত চিকিৎসক ডাঃ এ.এইচ.এম খায়রুল বাশার সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট হলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে অবস্থিত অরবিট হসপিটালে নিয়মিত রোগী দেখে আসছেন। এ ছাড়া অপর চিকিৎসক বিশ্বজিৎ দেব মৌলভীবাজার সদর সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক হওয়া সত্তে¡ও তিনিও মামুন হসপিটালে নিয়মিত রোগী দেখে আসছেন। উল্লেখ্য, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা প্রাণ কোম্পানীর শ্রমিক রুবেল মিয়ার দেড় মাস বয়সী শিশু ইসমত নাহার জিবা ঘনঘন হেচকি দেওয়ার কারণে গত ৩১ আগস্ট সকালে আউশকান্দি বাজারের অরবিট হসপিটালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ.এইচ.এম খায়রুল বাশারের কাছে নিয়ে যান শিশুর মা শিরিন আক্তার। ডাঃ খায়রুল বাশার ৫ শ টাকা ভিজিট রেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে পরদিন শিশুর অবস্থা জানানোর জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু পর দিন শিশুটি আগের মতোই রয়েছে এ কথা জানালে ডাঃ খায়রুল বাশার শিশুটির অবস্থা আশংকাজনক বলে উল্লেখ করে বলেন টাকার দিকে না তাকিয়ে দ্রæত মৌলভীবাজারের মামুন হসপিটালে ভর্তি করে সেখানের ডাঃ বিশ্বজিতের কাছে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে ডাঃ বিশ^জিতের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্যও বলে দেন ওই শিশুর মাকে। আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও শিশুর প্রাণ রক্ষার্থে ওই দিনই রাত ১২ টার দিকে মৌলভীবাজার ছুটে যান শিশুর মা। সেখানে যাওয়ার পর খোঁজে বের করেন ডাঃ বিশ্বজিতকে। এমনকি তার সাথে শিরিনা আক্তারের মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলেন ডাঃ খায়রুল বাশার। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাঃ বিশ^জিৎ মোবাইল ফোনে ডাঃ খায়রুল বাশারকে জানান ‘শিশু জিবা পুরো সুস্থ আছে। কিন্তু এ সময় সম্পূর্ণ সুস্থ জিবাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ডাঃ খায়রুল বাশার।’ সে অনুযায়ী রাতে ওই ক্লিনিকের ভিআইপি রুমে ভর্তি করা হয় জিবাকে। মোবাইল ফোনে তাদের কথোপকথনে শিশুর মা শিরিনা আক্তারের মনে নানা সন্দেহের দানা বাঁধে। শিরিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে অটো কল রেকর্ড অ্যাপস ইনস্টল করা ছিল। তা জানতোনা ওই দুই চিকিৎসক। তাদের কথা বার্তায় সন্দেহ হওয়ায় মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডটি শুনে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন জিবার মা। তাই পরদিন ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফেরে আসেন। কিন্তু জীবন রক্ষা যাদের কাজ, তাদের একজনের এমন কাজে বিষ্মিত হয়ে পরেন তিনি। তিনি পরদিন অরবিট হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে তার করুণ কাহিনীর চিত্র তুলে ধরেন। কিন্তু তারাও ওই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বিমূখ হয়ে বাড়ি ফিরেন। অবশেষে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ জানতে পেরে গত শুক্রবার অনুসন্ধানে নামেন। তারা বিভিন্ন তথ্য উদঘাটন করে ওই চিকিৎসক ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়ে অরবিট হসপিটালে যান। কিন্তু প্রথমে ডাঃ খায়রুল বাশার মিডিয়ার সামনে আসতে অপারগতা প্রকাশ করলেও শেষে হসপিটালের পরিচালক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুনের উপস্থিতিতে শুধু শিকার করেন ওই শিশুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাত্র। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মামুন হসপিটালের চিকিৎসক ডাঃ বিশ্বজিৎ দেব বলেন, মেয়েটির মা ১ সেপ্টেম্বর রাত ১১ টায় হাসপাতালে গিয়ে তার সঙ্গে পরামর্শ না করেই মেয়েকে ভর্তি করে ফেলেন। তিনি খবর পেয়ে রাত পনে ১২ টায় সেখানে গিয়ে দেখেন শিশুটির অবস্থা ভালো, তেমন কোন সমস্যা নেই। কিন্তু কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যায় যায় অবস্থা। তিনি শিশুটির মাকে ১৫ মিনিট বুঝানোর চেষ্টা করেন এবং বলেন সকালে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবেন। ক্লিনিকের বিল মাত্র দেড় হাজার টাকা। ডাঃ খায়রুল বাশারের সঙ্গে ফোন কথোপকথনটি তার বলে স্বীকার করেন ডাঃ বিশ্বজিৎ দেব। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছিনা আমার দোষ কোথায়? আমি শিশুটিকে ড্রপ দিয়েছি কোন অ্যান্টিবায়োটিক ও ইনজেকশন দেইনি।


     এই বিভাগের আরো খবর