,

উদ্দেশ্যমূলক বিতর্ক ও এর ফলাফল

(প্রবাসী লেখক এর দৃষ্টিতে রম্য রচনা)

বর্তমান সময়ে লেখিকা মাসুদা ভাট্রির সাথে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের কুরুচিকর বক্তৃতা বেফাস কথা নিয়ে একের পর এক পক্ষে বিপক্ষে বক্তৃতা বিবৃতি আর মামলার পর মামলা চলছেই। ইহা আমার মতো ক্ষুদ্র প্রবাসীর খুবই মনো কষ্ঠের কারন। এমনিতেই আমি ডিপ্রেসন ও অন্যান্য রোগে ভুগিতেছি তার মধ্যে ইন্টারনেটের কল্যানে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাল মন্দের খবরে আরও বেশী আশাহত হই। কোটি কোটি টাকা বানানো স্বপ্ন আমার নেই বা ছিলনা, শুধু দু’মোটো ডাল ভাত খেয়ে যতদিন হায়াত আছে বাচাঁর স্বপ্ন দেখি। সময় কাটাতে এমনও খবরা খবর নজরে আসে যা মাথায় ধরেনা। বাধ্য হয়ে গরুর রাখাল শাহ আব্দুল করিমের সেই বিখ্যাত গান, “গান গাইয়া মোর মনরে বুঝাই মন থাকে পাগল পারা” আমি গান শুনিয়া বুঝাইতে পারিনা শুধু চিন্তাগুলোকে এলোমেলো করে তুলি। অর্থাৎ কনফিউজ হয়ে যাই। যাই হোক প্রবাসীই হই আর নন প্রবাসীই হই তাসলিমা নাসরীন সমন্ধে কমবেশী জানি, আর কিছুটা জানি ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন সাহেবের সম্পর্কে। তসলিমা নাসরীন সমন্ধে আমার বেশী কিছু বলার নাই। ভিন্নধর্মী লেখার জন্য মৃত্যুদন্ড না দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া সঠিক মনে করিনা। কোরআন শরীফের সমালোচনা যে সব মূর্খেরা করে তাদের চেয়েও মূর্খ হল তাসলিমা নাসরীন। তাসলিমা নাসরিনের সাথে সামনা সামনি তর্ক বিতর্কে না গিয়ে শুধু কল্লা কাট, মৃত্যুদন্ড দাও এসব যুক্তির কথা নয়। আমি মূর্খ লেখক, আর তাই আমার সাথে তর্কযুদ্ধে লন্ডনে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী ছাড়া কেহই ভয়ে আসতে চায়না। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন একজন অত্যান্ত ধুরন্দর প্রকৃতির লোক। আমার লেখা “বাংলাদেশের জেনারেলদের ষড়যন্ত্র” যা লন্ডনের নতুনদিন পত্রিকা ও ভারতে বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে একজন লেখক ও একজন বিএনপি নেতা ৩ লক্ষ পাউন্ড ঘুষ নেন। লন্ডনে ওয়ারেন্ট ষ্ট্রেট এর হোয়াইট হাউস হোটেলের লবীতে টাকার বস্তা হস্তান্তর করেন এরশাদের একজন মন্ত্রী। তিনি বর্তমানে আর বেঁচে নেই। এখানে একদিন হিথ্রো বিমান এয়ারপোর্ট থেকে আমার এক ছোট বোনের জামাই নাম মোহাম্মদ ইকবাল ফোন করে বলেন, আমি হিথ্রো বিমান বন্দর থেকে কথা বলছি ভাই আপনি আমার মামাতো বোনের স্বামী মইনুল হোসেন সাহেবের সাথে কথা বলুন। আমি বললাম কেন? কারন হল আপনার লেখা লন্ডন, কলকাতা. বাংলাদেশ এমনকি কানাডায় সাড়া পরেছে। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বলেছেন যে, লেখাটি অত্যান্ত সাহসী কিন্তু একটি নাম ভুল হয়েছে। আমি বললাম, জানি কিন্তু সেটা প্রিন্টিং মিসটেক। যেহেতু আমি লেখক সেজন্য দুঃখিত। ব্যারিষ্টার মুইনুল হোসেনের সাথে শেষ কথা এমনই ছিল। যা হোক কথার উত্তর না দিয়ে চরিত্র ভাল নয় বলাটা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলা ঠিক হয়নি। এখন আসি মাসুদা ভাট্টির কিছু কথা। লন্ডনে থাকার কারনে আমি মাসুদা ভাট্টিকে যতটুকু জানি স্বাধীনতা পক্ষের একজন শক্তিশালী লেখক। তবুও মাসুদা ভাট্টির অনেক কাজ আমার পছন্দ হয়নি। তিনি লন্ডনে ভেকটন নামে একটি বাংলা চ্যানেলে কাজ করতেন এবং প্রোগ্রাম করতেন। মানুষ আমাকে প্রশ্ন করতো সে তো স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তি হিসেবে জানি, তার নামের সাথে ভাট্টি নামটা কেন থাকে, ইহাতো পাকিস্তানি নাম। আমি বললাম, এর উত্তর দিবার জন্য আমার ফুফাতো বোন জনপ্রিয় লেখিকা শামীমা আজাদকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে। এর একদিন পরেই পূর্ব লন্ডনে বিখ্যাত লেখক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে পেয়ে বললাম, মাসুদা ভাট্টির লেখার ভক্ত আমরা কিন্তু পাকি ব্যাটার নাম কেন মাসুদার নামের সাথে লেখা হয়। তিনি বললেন, এই মহিলা খুব সম্ভবত পাবনা বা ফরিদপুরের মেয়ে। রাশিয়ায় পড়তে গিয়ে সেখানে এক পাকিস্তানি ছেলে ভাট্টির সাথে প্রেম করে বিয়ে হয়। আমি বললাম, মানলাম কিন্তু যেহেতু বর্তমানে ভাট্টির সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনি লেখে সেহেতু ভাট্টির লেজ ধরে আছে কেন? গাফ্ফার চৌধুরী বললেন, আমি সঠিক জানিনা। একদিন পূর্ব লন্ডনে একটি দোকানে লম্বা একজন লোক আমাকে দেখে বলল, ভাই আপনার নাম কি অমুক? আমি বললাম, হ্যা আপনার জন্য কি করতে পারি। আমি আপনার সহপাঠি নারায়ণগঞ্জের বিএনপির নেতা কামাল আহমেদ আপনার কথা বলেছেন। আমি বললাম ঠিক আছে। সে বলল, আমার নাম মেজর অমুক, আপনার লেখা আমি পড়ি এবং বিশ্বাস করি। আমি বললাম, ভাল কথা তবে শুনুন আপনার বাড়ী কি ব্রাহ্মনবাড়িয়া? তিনি বললেন, আপনি কি করে জানলেন? আমি বললাম, আপনি লন্ডনে ফ্রিডম পার্টির লোক এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোকদের নজরে রাখেন তা আমি জানি। আপনাকে চিনিনা কিন্তু আপনার আমলনামা আমার সাথে আছে। আরও একদিন দেখা হলে সে বলল, মাসুদা ভাট্টিকে আপনি চিনেন? আমি বললাম, কেন? সে বলল, আমি জানি মাসুদা ভাট্টির প্রতি আপনার পূর্ণ সমর্তন আছে এবং আপনি কামালের বন্ধু তাই বলতে চাই মাসুদা ভাট্টি বেশী বাড়াবাড়ি করছে। ইহা ভাল কিছু নয় তা মাসুদা ভাট্টিকে বলে দিবেন। আমি বললাম, দেখুন সে আমার কথা শুনার কেহ নয়, তবুও আমি তাকে বলে দিব। তখন কিন্তু ফ্রিডম পার্টির লোকেরা মাসুদা ভাট্টিকে ভিকটন নামীয় টিভি চ্যানেল থেকে তাকে সরাতে বা মেরে উধাও করার জন্য ঘুরছে। আমি সর্ব চেষ্টা করলাম মাসুদা ভাট্টিকে খবর দেওয়ার জন্য। কিন্তু সে বার বার আমাকে সময় দিয়ে সামনা সামনি আসলনা। পরে লন্ডন ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন। লন্ডনে থাকার পরামর্শটা পেয়েও সে আর আসেনি। লন্ডনে ছাত্র অবস্থায় তাসলিমা নাসরীনের প্রকাশক হিসেবে তার নাম নিয়ে বৃটিশ সরকারের সাথে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মাসুদা ভাট্টির নাগরিত্ব লাভে সমর্থ হয়। যেহেতু তাসলিমা নাসরিন প্রাণ হাতে নিয়ে চলাফেরা করতে হয় সেহেতু তিনি তাসলিমা নাসরিনের প্রকাশক হওয়ার কারনে মাসুদা ভাট্টির জীবনও বিপদের মধ্যে আছে এই যুক্তি দেখিয়ে মাসুদা ভাট্টির নাগরিত্ব লাভে সমর্ত হন। মজার ব্যপার হল তাসলিমা নাসরিনের দুর্ধর্র্ষ লেখা এর কোনটাই মাসুদা ভাট্টির নয়। উপকারের উপকার যে স্বীকার না করে আজ বাজে সমালোচনা করে তার মাটির উপরে এবং মাটির নীচেও আল্লাহ কাছে এর হিসাব দিতে হবে।

দেওয়ান কাইয়ুম, “বাংলাদেশের জেনারেলদের ষড়যন্ত্র” বইয়ের প্রবাসী লেখক।


     এই বিভাগের আরো খবর