,

হবিগঞ্জে শচীন্দ্র লাল সরকারের সাংবাদিক সম্মেলন শচীন্দ্র কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টার অভিযোগ এমপি মজিদ খানের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শচীন্দ্র কলেজের নাম পরিবর্তন ও বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শচীন্দ্র লাল সরকার। তিনি নিজেকে অসহায় দাবী করে কলেজটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেন। গতকাল শনিবার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শচীন্দ্র লাল সরকার বলেন- আমি ১৯৯৮ সালে সকলের সহযোগিতায় শচীন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করি এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০০ সালে কলেজটি এম.পি.ও ভূক্ত হয়। ঐ সময় কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান মরহুম প্রফেসর মোহাম্মদ আলী। মাত্র ৬৫ জন ছাত্র নিয়ে শুরু হয়ে বিগত   ১৬ বছরের ধারাবহিকতায় আজ কলেজটি পূর্ণাঙ্গরূপ ধারণ করে অনার্স কলেজে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ঐ কলেজের ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৫শ। ১৯৯৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে আমার নামে শচীন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রানালয়ের ডি.আই এর অডিটে কলেজের নামকরণ বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সংসদ সদস্য এডভোকেট মোঃ মজিদ খান প্রথম এম.পি নির্বাচিত হয়েই শরীফ উল্লাহ গংদের কলেজের পুকুরের প্রতি কুদৃষ্টি পড়ে। ভিন্ন নামে পুকুরটি লিজ নিয়ে তারা লটারি জাতীয় বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিটি লটারি খেলায় ৫৬টি সিটের প্রতিটিতে সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে ৪ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করে। এভাবে প্রতি বছর প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি খেলা থেকে লকষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। এতে কলেজের পুকুরের পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কলেজ পুকুর পাড়ে ৩টি ৩তলা ভবন হুমকীর মুখে পড়েছে এবং পুকুরের মাছ বড় হওয়ার বিভিন্ন মেডিসিন প্রয়োগের ফলে পুকুরের পানি ছাত্রদের গোসলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আমি এই লিজ বাতিল করার অনুরোধ করাতে এম.পিসহ শরীফউল্লাহ আমার উপর অসন্তুষ্ঠ হন। এই ধারাবাহিকতায় আমাকে উপক্ষো করে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দুর্নীতিবাজ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে চলতে থাকেন। সাবেক অধ্যক্ষ হরেকৃষ্ণ রায় এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এম.পির সহযোগিতায় কলেজের টাকা বিভিন্ন ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেন। ঐ অধ্যক্ষকে অপকৌশলে চাকরীর মেয়াদ শেষে এম.পি নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট প্রদান করেন। পরবর্তীতে আমার পীড়া পিড়ীতে এ অধ্যক্ষের চাকরীকালীন সময় অডিট হলে অডিটে অধ্যক্ষের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপরও এম.পি অডিট রিপোর্ট পাস কাটিয়ে অবসর ভাতা প্রায় ১৬ লাখ টাকার চেক গোপনে হস্থান্তর করেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরপর দুই বার মাউশিতে পত্র দিয়েছেন। কলেজের দুইজন শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও প্রমোদ সাহাজী ২০০৯ সালের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের স্বারিত বেতন বিল ফরজারী করে অর্ধিত টাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরও এমপি মহোদয় প্রতিকার না নিয়ে বরং তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহিত করেন। বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা কলেজের বিভিন্ন অনিয়ম হবিগঞ্জবাসীর দৃষ্টিতে আনার চেষ্টা করেন। আমি আপনাদের সংবাদ আমলে নিয়ে প্রতিকারের জন্য এমপি মহোদয়কে অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছি। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিকার চাওয়াতে আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এমনকি গর্ভনিংবডির সভাতেও মানসিক ভাবে হেয় করা হয়েছে। সর্বশেষে আমার দেওয়া শচীন্দ্র কলেজের নামটিও মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই নাম পরিবর্তনের প্রচেষ্টা কিছুদিন ধরেই এম.পিসহ গংরা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে নাম পরিবর্তন করা যাবে এই কথা বলে বিভিন্ন ভাবে প্রচারনা করা হচ্ছে। গত ২২ অক্টোবর গর্ভনিংবডি ৯২তম সভার অধ্যক্ষের পত্র পাই। এতে কলেজের নাম করণ ও পুকুর লিজ সহ বিভিন্ন এজেন্ড নিয়ে ২৫ অক্টোবর গর্ভনিংবডির সভা আহব্বান করা হয়। পত্র পাওয়ার পরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই চ্যান্সেলার, কলেজ ইনস্পেক্টর, জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, এম.পি এডভোকেট আবু জাহির, এম.পি এডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান, অধ্যক্ষ মহোদয় কলেজের নামাকরণ সংক্রান্ত এজেন্ডা বাদ দিয়ে নতুন করে সভা আহব্বানের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু এরপরও এম.পি মজিদ খান গর্ভনিংবডির সভা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন- আমি জীবনে কিছুই চাইনি। সারা জীবন সৎপথে যা উপার্জন করেছি তা হবিগঞ্জের গরীব দুঃখী মানুষের স্বার্থে শিক্ষা প্রসারনের লক্ষ্যে আপনাদের সহযোগিতায় এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছি। আমার চোখের সামনে আমার স্বপ্নের লালিত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও বক্তব্য যখন শুনি তখণ আমি স্থির থাকতে পারি না। আমার মনে হয় এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে আপনারা আমাকে মুক্তি না দিলে আমি মৃত্যুবরণ করেও শান্তি পাব না। আমার বয়স প্রায় ৯০ এর কাছাকাছি। আমার একার পক্ষে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি অসহায় হয়ে আপনাদের মাধ্যমে সবার কাছে আকূল আবেদন জানাচ্ছি- যে যে অবস্থান আছেন সে অবস্থান থেকে আমাকে সহযোগিতা করুন এবং শচীন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষা করুন।


     এই বিভাগের আরো খবর