,

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কারো চাকুরী যাবেনা সকলকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের অহবান -তারেক রহমান

 

মতিয়ার চৌধুরী,  লন্ডন :: লন্ডনে পলাতক একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী বিএনপি‘র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে  তাদের জন্যে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ আখ্যায়িত করে বলেন  “যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি তাদের জন্য আজ সামনে সুযোগ এসেছে।”তিনি দশ কোটি ভোটারকে এই মুক্তিযুদ্ধের যোদ্ধা আখ্যায়িত করে বলেন, “এই যুদ্ধের অস্ত্র হবে ব্যালট। প্রতিটি কেন্দ্রে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দশ কোটি ভোটারে সঙ্গে থাকবে।” গতকাল ১৩ নভেম্বর ২০১৮ বিকেলে ইষ্ট লন্ডনের রয়েল রিজেন্সী হলে (তাদের ভাষায় জাতীয়  বিপ্লব ও সংহতি দিবসের আলোচনা সভায়) প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। যদিও আলোচনা সভাটি ছিল বিপ্লব ও সংহতি দিবসের উপর তার পরেও তারেক রহমানের পুরো বক্তব্যটাই ছিল সরকারের সমালোচনা ও মিথ্যাচারে ভরপুর।

যুক্তরাজ্য বিএনপি‘র সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তারেক রহমান সরকারকে অবৈধ আখ্যায়িত করে নানা  সমালোচনা করে বলেন  বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিএনপির হাজার-হাজার, লক্ষ নেতা-কর্মীকে গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যখনি সুযোগ পাচ্ছে, এ সরকার চেষ্টা করেছে, কিভাবে গুম-খুনের মাধ্যমে বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মীদের গায়েব করে দিতে। কারণ এই একটি দল (আওয়ামী লীগ), যারা বাংলাদেশে ক্ষমতাকে ধরে রেখেছ অবৈধভাবে।  তিনি ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের  ঘটনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন সিপাহি জনতা তার পিতা জিয়াউর রহমানকে অপশাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্যে ক্ষমতায় বসিয়ে ছিল। তিনি সেই সময় এবং দেশের চলমান অবস্থা একই আখ্যায়িত করে বলেন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ পেছেন ফিরে তাকালেই দেখতে পাবেন যত বারই আওয়ামীলীগ দেশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়েছে প্রত্যেক বারের পরিস্থিতি একিরকম।”তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন সরকার জানে কিভাবে সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরতে হবে, একিভাবে তারা চেষ্টা করেছে কিভাবে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরতে হবে, তারা চেষ্টা করেছে কিভাবে জনগণের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের স্টীম-রোলার চালাতে হবে।”

তিনি বলেন  এই সরকার অপপ্রচার করছে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সবার চাকুরী চলে যাবে, তিনি বিভিন্ন পেশায় বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অন্যায় ভাবে কারো চাকুরী যাবেনা, যেকোন সরকারের আমলের চাকুরী হোক। তিনি বলেন বিএনপি কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নির্যাতিত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্বাচন করছে। তাদের ন্যায্য দাবীর প্রতিফলন ঘটাতে চাই। নতুন প্রজন্মের পাশে থাকতে অঙ্গীকার করছি।
একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সন্তান হিসাবে দেশের সেনা সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন এই লুটেরা সরকারের অপরাধের ভাগ নিবেন না।সেনাবাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “আপনারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, আপনাদের প্রতি জনগণের সম্মান রয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রধানের একজন সন্তান হিসেবে আমি আপনাদের আহবান জানাবো এই অবৈধ সরকারের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে আপনারা কাজ করবেননা। নির্বাচনে ভোট ডাকাতির যে উদ্যেগ সরকার গ্রহণ করছে তাতে আপনারা সামিল হবেননা। ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার হরণের যে নীল নকশা সরকার প্রণয়ন করছে তাতে আপনারা জড়াবেননা। গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের পক্ষে থাকুন। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হোন।”
তরুন প্রজন্মের যারা নিরাপদ সড়কের দাবী করেছিলে তোমাদের কাছে আমার দাবী তোমরা নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে দাও। সারা বাংলাদেশ তোমাদের কাছে সাহায্য চায়।

বেসামরিক প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “সরকার পরিকল্পিতভাবে একটি অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিগত দশ বছরে চাকরি পাওয়া কারোরিই চাকরি থাকবেনা-এটি মিথ্যা প্রচারণা। কারো কোনো ভয় নেই, আপনারা নির্ভয়ে, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন, বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপনাদের পাশে থাকবে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা জানি অবৈধ সরকারের হুকুম তামিল করতে গিয়ে অনেক অনৈতিক কাজ কাউকে কাউকে করতে হয়েছে। যার জন্য আপনারা প্রস্তুত ছিলেননা। এবং এর দায়ভারও আপনাদের নয়।”
ছাত্র, যুবকসহ সকলের উদ্দেশ্য  তারেক বলেন, “আসন্ন নির্বাচন নিছক একটি নির্বাচন নয়। এটি একটি আন্দোলন। এ আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের, মানুষের মৌলিক, মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার, গুম-খুনের জবাব, বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসার ও সাগর-রুনিসহ অসংখ্য হত্যার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, লুটপাট-দুর্নীতি, আর লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের জবাব, সীমান্তে গুলি করে ফালানি হত্যার জবাব, নিরাপদ সড়ক শুধু নয় নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার বৃহত্তর আন্দোলন।”

তারেক ইলেকশনে্  ইবিএম পদ্দতির সমালোচনা করে বলেন বিশ্বের কোন দেশে এর প্রচলন নেই এমনকি সরকারের বন্ধু প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নেই। ইবিএম পদ্দতির মা্ধ্যমে  ভোট কারচুপির প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।  কোন ধরনের কারচুপি দেশের মানুষ মেনে নিবেনা। তিনি সকলকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবার আহবান জানান, তিনি বলেন ডাক আসলে আমাদের দেশ মুক্তির আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে হবে, দেশের মানুষকে তাবেদার সরকারের হাত থেতে রক্ষা করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এম এ মালেক প্রতিটি ভোট কেন্দ্র তাদের দখলে নেবার আহবান জানিয়ে বলেন যে কোন উপায়েই হোক বিজয় আমাদের ছিনিয়ে আনতে হবে।  আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন  যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহিদুর রহমান, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক এম এ মালেক, সাবেক সভাপতি সায়েস্থা চৌধুরী কুদ্দুস বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংদগঠনের  ২৪জন বক্তা। এই সমাবেশে বৃটেনের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে আগত বিএনপি তাদের অঙ্গ সংগঠন ও মিত্র জামাতের প্রায় চার শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

 


     এই বিভাগের আরো খবর