,

জোর লবিংয়ে কেয়া ও মিলাদ, জাপায় বাবু না আতিক?

হবিগঞ্জের ৩টি আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা
চিঠি পেলেও পাননি হবিগঞ্জ-১ আসনের কেউ

মতিউর রহমান মুন্না :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের ২ শত ৩০ জনকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে মহাজোটের শরিকদের জন্য ৬৫-৭০টি আসন ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, মহাজোটের শরিক দল এবং আওয়ামী লীগ থেকে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটি আজ সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। গতকাল হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনের মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দেয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তারাহলেন- হবিগঞ্জ-২, (বানিয়াচং-আজমিরিগঞ্জ) আসনে এডভোকেট মোঃ আব্দুল মজিদ খান এমপি (হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই)-৩, আসনে এডভোকেট মোঃ আবু জাহির এমপি (মাধবপুর-চুনারুঘাট) হবিগঞ্জ-৪, আসনে এডভোকেট মোঃ মাহবুব আলী এমপি। কিন্তু হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন প্রার্থী চিঠি পাননি এমনকি কারো নাম ঘোষণা করা হয়নি। একটি সূত্র জানায় হবিগঞ্জ-১ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষনা না করায় এ আসনটি আবারো শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানেও রয়েছেন জাপার এমপি এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু। প্রবাসী অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ হবিগঞ্জ-১ আসনটিকে ঘিরে আলোচনা থাকে সর্বত্র। প্রবাসে রাজনীতি করেও জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। দীর্ঘদিন ধরেই মাঠ চষে বেড়াচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক ত্যাগী নেতা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পাবেন এমন আশায় দিবারাত্রী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন প্রচারনা। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের স্বার্থে এ আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছিল জাতীয় পার্টিকে। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় তখন নির্বাচিত হন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নেতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করছিলেন এবার হয়তো আসনটিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে কোন প্রার্থী থাকবে। কিন্তু গতকাল সারা দেশেই প্রার্থীদের চিঠি ও নাম ঘোষনা করা হলেও এ আসনের কোন প্রার্থী চিঠি না পাওয়ায় সাধারণ নেতাকর্মীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন জোটগত কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী থাকবে এই আসনে। তবে কে হচ্ছেন প্রার্থী এমন প্রশ্ন সবার মনে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ আসনে আগেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপ এবং তৃণমূলের মতামত নিয়ে প্রার্থী ঠিক করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। মনোনয়ন নির্ধারণে শেখ হাসিনার কথাই ছিল শেষ কথা। দলীয় মনোনয়ন ঠিক হয়ে গেলে মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে এতদিন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে হবিগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, হবিগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এড. আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া ও সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর তনয় জেলা আওয়ামীলীগ নেতা দেওয়ান শাহ নেওয়াজ ফরিদ গাজী, জাতীয় পার্টি থেকে আলোচনায় রয়েছেন, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান সংসদ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী এম.এ মুনিম চৌধুরী বাবু ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক। অপর দিকে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় জনসংযোগ করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছিলেন সাবেক এমপি বিএনপি নেতা আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া। সম্প্রতি সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের সব হিসাব-নিকাশ। তবে জাতীয় পার্টি থেকে কে হচ্ছেন প্রার্থী বাবু না আতিক এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মনে। অপর দিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন কেয়া চৌধুরী ও মিলাদ গাজী। সবাই অপেক্ষায় আছেন চ‚ড়ান্ত তালিকা ঘোষনার। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৯ শ ৪৫ জন। পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৮ শ ২৬ জন। মহিলা ভোটার সংখ্যা হলো ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১ শ ১৯ জন। ইতিমধ্যে এ আসন থেকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয় ফরম ক্রয় করেছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. আলমগীর চৌধুরী, সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন যুক্তরাস্ট্র বিএনপির সভাপতি শাহ মোজাম্মেল নান্টু, প্রবাসী কমিউনিটি লিডার শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ জাহেদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এড. খালেকুজ্জামানের সহধর্মীনি এড. রুখসানা জাহান চৌধুরী। এছাড়া এ আসনে গতকাল নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এএমএস কিবরিয়ার তনয় অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। গতকাল রবিবার সকালে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মনির উজ্জামানের কাছ থেকে ড. রেজা কিবরিয়ার পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন তাঁর চাচাতো ভাই শাহ গোলাম মোর্শেদ, শাহ মোস্তাকিন আলী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নবীগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোশাহিদ আলম মুরাদ প্রমুখ। এছাড়া বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়ার পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লন্ডন প্রবাসী সমাজ সেবক অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও আবু হানিফ আহমদ হোসেন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর