,

নবীগঞ্জের প্রাইমারী স্কুলে মিড-ডে মিলের সফলতা

শিক্ষার্থীরা এখন পড়া-লেখায় মন দিচ্ছে, বেড়েছে উপস্থিতি

মতিউর রহমান মুন্না :: নবীগঞ্জ উপজেলার প্রাইমারী স্কুল গুলোতে মিড-ডে মিল চালু করায় ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাজারের খোলা খাবার খেয়ে যেন অসুস্থ হয় সেজন্য ২০১৬ সালে বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে কমেছে পুষ্টিহীনতা, বিদ্যালয়গুলোতে বেড়েছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এসব কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও প্রতিষ্টানের শিক্ষকরা। তাই যে সব স্কুলে মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু হয়নি এসব স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। সূত্রে প্রকাশ, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও পুষ্টিহীনতা রোধে বিগত ২০১৬ সাল থেকে  নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের বড় শাখোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু হয়। তৎকালিন জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নবীগঞ্জ উপজেলার ১৮২টি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির চিত্র পাল্টে গেছে। কমেছে ঝরে পরার হার। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। ফলে অনেকে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হননা। মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু হওয়ায় গত ২ বছর যাবত স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার সন্তোষজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে পুষ্ঠিহীনতার প্রবণতা।

Nabiganj Pic Mid day mil 3

এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে শিক্ষারমান বাড়বে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ। অভিভাবক ডাঃ কিরণ সুত্রধর জানান, সন্তানদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ ছিল না তেমন। কিন্তু স্কুলে এখন মিড-ডে মিল চালু হওয়ায় প্রতিদিন সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে। ফলে পড়া-লেখায় তাদের আগ্রহ বেড়েছে। শাখোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা অজন্তা বণিক বলেন, মিড ডে মিল চালুর পূর্বে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। টিফিনের পরে উপস্থিতি আরো কমে যেতো। এখন সব শ্রেণিতেই নব্বই থেকে পচান্নব্বই ভাগের উপর শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ফারহানা আক্তার জানায়, আগে অনেক দিন না খেয়ে দিন কেটেছে। ক্ষুধা পেটে নিয়ে স্কুলে আসা হতো না। পড়ালেখায় মনোযোগ থাকতো না। এখন মিড ডে মিল সাথে নিয়ে আসি। টিফিনের সময় সবাই একসাথে বসে খাই। ভালো লাগে। তাই স্কুল ফাঁকি দিতে আর ভালো লাগে না। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী উদিত ভাস্কর পাল তমাল জানায়, তার বাড়ী স্কুল থেকে অনেক দূরে, তাই টিফিনের সময় বাড়ীতে গিয়ে খাবার খেয়ে এসে ক্লাস পেতো না। মিড-ডে মিল চালু হওয়ার পর স্কুলে খাবার খেয়ে সে এখন নিশ্চিন্তে পড়া-লেখা করতে পারছে। নবীগঞ্জ উপজেলায় এ কার্যক্রমে সফলতা পাওয়ায় আনন্দিত শিক্ষক সমিতির নেতারা। এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এবং বড় শাখোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রুবেল মিয়া জানান, মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে এবং পুষ্টিহীনতা রোধ হয়েছে। ঝড়ে পড়ার হার শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। আগের তুলনায় শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাসে অনেক মনযোগী হয়েছেন। এক সময় যেসব শিক্ষার্থীদের বাড়ী দূরে তারা টিফিনের পর এসে দেখতো ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, এখন তা হয়না। এ ছাড়াও মিড-ডে মিল চালু হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এক আন্তরিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালে বড় শাখোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নবীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ট বিদ্যালয় হিসেবে খ্যাতি হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রঞ্চনন কুমার সানা বলেন, উপজেলায় মোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮২টি। প্রত্যেকটিতে মিড-ডে মিল কার্যক্রম চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পড়া-লেখায় মনযোগী হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চালুর দাবি সচেতন মহলের।


     এই বিভাগের আরো খবর