,

নবীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহি পলো বাইচ উৎসব

নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ প্রতি বছর ন্যায়  শীত মওসুমে হাওরের পানি কমলে শুরু হয় পলো বাওয়া বা পলো দিয়ে মাছ ধরা। মুরুব্বীয়ানদের পরামর্শক্রমে গতকাল মঙ্গলবার ভোর সকালে নবীগঞ্জ উপজেলার বিজনা নদীর নোয়াগাও থেকে ইলামপুর পর্যন্ত পাঁচ গ্রামের প্রায় তিন শতাদিক মানুষ পলো, জাল, দঁড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বিজনা নদীতে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব উপলক্ষে আশপাশের গ্রামগুলোতে বিরাজ করে উৎসবমূখর পরিবেশ। শিকারীদের অনেকেই বোয়াল, গজার, শোলসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরেন। এই উৎসবে প্রায় তিন শতাদিক  সৌখিন মৎস্য শিকারী কয়েক লাখ টাকার মাছ শিকার করেন। মাছ ধরা পড়ার সাথে সাথে তাদের আনন্দে শরীক হন পাশের লোকজন। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক ঝাপ দেওয়া আর হৈহুল্লোর করে সামনের দিকে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় এক দৃশ্য। মাছ শিকার উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল, পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে। পলো বাওয়া বা পলো দিয়ে মাছ ধরা বাংলার প্রাচীন এক ঐতিহ্য। বাঁশ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ঝাঁপিকেই বলা হয় পলো। আর পলো বাওয়া উৎসবের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে দলবেঁধে পলো নিয়ে মাছ ধরা। একটা সময় মৌসুম এলেই শৌখিন মাছ শিকারিরা নদী নালার পানিতে দলবেঁধে নেমে পড়তেন মাছ শিকারে। নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিন তারিখ ঠিক করে পর্যায়ক্রমে ছোট ছোট সব নদী ও বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে শিকার করা হতো ছোট বড় মাছ। শুকনো জলাশয়ে প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে সৌখিন মাছ শিকারিদের এই পলো বাওয়া উৎসব। দখল, দুষণ ও ভরাটসহ নদীর অস্তিত্ব সংকটের কারণে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না ঐতিহ্যবাহি এই উৎসব। পলো সহ দেশীয় উপকরণ দিয়ে মাছ শিকার করলে যেমন খরচ কম তেমনি মাছের বংশ বিনাশ হয় না। নবীগঞ্জের নদী ও হাওর গুলোতে মাছ শিকারের জন্য পলোর ব্যবহার হয়ে আসছে বহু পুরনোকাল থেকে। বাঁশের তৈরি এই পলো মাছ শিকারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেন কৃষকরা।


     এই বিভাগের আরো খবর