,

ওমানে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মহানুভবতা

সময় ডেস্ক ॥ ওমানের মাসকটে শয্যাশায়ী বাংলাদেশী শ্রমিক মোহাম্মদ লিটন (৩২)। শুধু যে শয্যাশায়ী তা নয়, তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ বিকল বা প্যারালাইজড। কাঁধের নিচ থেকে শরীরের নিচের অংশের এই অবস্থা। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন তাকে বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা করাতে। কিন্তু লিটনকে দেশে আনা সহজ কথা নয়। বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে আনতে হবে ঢাকায়। এ জন্য পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক একটি বিমান সংস্থা চেয়েছে ১৫০০ ওমানি রিয়াল। এত টাকা তার পক্ষে যোগাড় করা অসম্ভব। এ খবর ছড়িয়ে পড়লো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অমনি এগিয়ে এলেন বাংলাদেশী অভিবাসীরা। তারা স্বদেশী ভাইয়ের জন্য মন উজার করে সংগ্রহ করলেন তহবিল। তাতে ওই ১৫০০ ওমানি রিয়াল সংগ্রহ হয়ে গেছে। ফলে লিটন এখন দেশে ফিরে মা-বাবা, স্বজনের মুখ দেখার স্বপ্ন দেখছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন মাসকট ডেইলি। লিটন একটি ফার্মে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস আগে তার শরীরের নিচের অংশে অস্বাভাবিক এক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি শরীর নাড়াতে পারেন না। এ অবস্থায় মাসকটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। প্যারালাইজড হয়ে যায় তার শরীরের নিচের অংশ। তারপর থেকে গত দেড় মাসের মতো বিছানায় পড়ে আছেন লিটন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দেশে ফিরে আরো চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যোগাযোগ করা হয় বিমান সংস্থার সঙ্গে। তারা লিটনকে ঢাকা পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থায় পৌঁছে দেয়ার জন্য চেয়ে বসে ১৫০০ ওমানি রিয়াল। এ অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা এবং আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে। আর মানবতার স্বার্থে এগিয়ে আসেন বাংলাদেশী অভিবাসীদের একটি দল। তারা লিটনকে দেশে ফেরত পাঠানোর টিকেট কিনতে সংগ্রহ করতে থাকেন তহবিল। টাওয়েল অটো সেন্টারের মাসকট সেলসের প্রধান সুদীপ ব্যানার্জী বলেন, লিটন হলেন তাদের একজন সাপোর্ট স্টাফের ভাই। তার ভাষায়, আমরা জানতে পারি লিটন অসুস্থ। তার শরীরের নিচের অংশ প্যারালাইজড। এখন এ অবস্থার বিস্তার লাভ করেছে। শরীরের উপরের অংশও প্যারালাইজড। কাঁধের নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে তা। লিটনের এমন অবস্থার কথা শুনতে পেয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে দেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা আমাদেরকে নিতেই হবে। এ সময়ে দিনরাত ২৪ ঘন্টা লিটনের পাশে একজন কারো থাকা উচিত, তার দেখাশোনার জন্য। তা ছাড়া এই বেসরকারি হাসপাতালে অবস্থান করাও ব্যয়বহুল। এ জন্য তার আত্মীয়-স্বজনরা বেশ কিছু বিমান সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে। বাংলাদেশের একটি বিমান সংস্থা তাদেরকে জানায়, এমন রোগিকে পরিবহন করতে যে সরঞ্জাম প্রয়োজন তা তাদের কাছে নেই। অন্যরা বিমান ভাড়া এতটা হাঁকালো যে তা তার বা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। লিটনকে দেশে পাঠাতে হলে কমপক্ষে ১৫০০ রিয়াল প্রয়োজন। সুদীপ ব্যানার্জী বলেন, এ নিয়ে আমি সহকর্মী ও অন্যান্য কোম্পানিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করি। সবার কাছে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানাই, যাতে আমরা লিটনকে তার মায়ের কাছে ফেরত পাঠাতে পারি। অবশেষে সবার মনখোলা সহযোগিতায় লিটনকে দেশে পাঠানোর মতো অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। এখন তাকে দেশে পাঠানোর জন্য সঙ্গে যাওয়া একদল ডাক্তারও ঠিক করা হয়েছে। সব ডকুমেন্ট প্রস্তুত। লিটন অপেক্ষা করছে দেশের উদ্দেশে যাত্রার জন্য।


     এই বিভাগের আরো খবর