,

নবীগঞ্জের এক আসামীর স্বজনদের সাথে প্রতারণা ॥ হাতিয়ে নিয়েছে ৩০ হাজার টাকা

‘আমি জেল সুপার বলছি- নোমান হার্ট এ্যাটাক করেছে, তাকে বাচাঁতে চাইলে তাড়াতাড়ি বিকাশে ৬০ হাজার টাকা পাঠান’

মতিউর রহমান মুন্না ॥ “হ্যালো আমি নবীগঞ্জ থানা থেকে বলছি, আপনার এলাকার আসামী নোমান হার্ট এ্যাটাক করেছে তার চিকিৎসা করাতে টাকা লাগবে তাড়াতাড়ি জেল সুপারের নাম্বার নেন যোগাযোগ করে, বিকাশে টাকা পাঠান”। হবিগঞ্জের জেল সুপার সেজে কারাগারে থাকা নবীগঞ্জের এক আসামির পরিবারের সঙ্গে এমন অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের হরিধরপুর গ্রামে। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। তারা প্রতারক চক্রকে ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি ওই গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলায় ‘ধর্ষণকারীর সহযোগী’ হিসেবে গত রোববার দুপুরে সুফি মিয়ার পুত্র নোমান
আহমেদ (১৮) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। পরের দিন থাকে হবিগঞ্জ আদালতে সোর্পদ করলে বিজ্ঞ আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এরপর থেকেই হবিগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছে নোমান। এদিকে গতকাল রাত ৯ টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য দীপ্তেন্দু দাশ বিধুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একটি কল আসে। কলদাতা নবীগঞ্জ থানা থেকে কল দিয়েছে দাবী করে বলে ‘আমি নবীগঞ্জ থানা থেকে কল দিয়েছি আপনাদের গ্রামের ছেলে আসামী নোমান জেলে হার্ট এ্যাটাক করেছে। তাড়াতাড়ি জেল সুপারের মোবাইলে কল দেন’ এ কথা বলে একটি মোবাইল নম্বর দেয় পুলিশ পরিচয়দারী প্রতারক। এরপর বিধু মেম্বার ডেকে আনেন নোমারের পরিবারের লোকজনকে। তারা ওই প্রতারকের দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিলে, সে নিজেকে জেল সুপার দাবী করে বলে ‘নোমান বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে, তার হার্টের দুইটা রিং লাগবে। সরকারীভাবে কিছু সহায়তা করা হবে। আপনারা ৬০ হাজার টাকা তাড়াতাড়ি বিকাশে পাঠান। এই প্রতারক চক্রের কথামতো বিকাশের মাধ্যমে ০১৯১৮৮৭২৭২৮ ও ০১৭১৬০৮৫৬১২ নাম্বারে ৩০ হাজার টাকা পাঠান পরিবারের লোকজন। টাকা পাঠিয়েই নোমানের মা-বাবা গাড়ী ভাড়া করে রওয়ানা দেন সিলেট হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। এরপর থেকে বার বার চেষ্টা করেও ওই নাম্বার গুলোতে কল দিয়ে কাউকে পাচ্ছিলেন না তারা। এক পর্যায়ে নাম্বারগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। এ দিকে এ খবরে উভয় পক্ষের লোকজন হাক ডাক দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নোমানের চাচা ছালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিধু মেম্বার তাদের পরিবারে খবর পাঠান থানা থেকে ফোন দিয়ে বলেছে নোমান হার্ট এ্যাটাক করেছে। জেল সুপারের নাম্বারে টাকা পাঠানোর জন্য বলেন। ওই নাম্বারে যোগাযোগ করে পরে ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর পর থেকেই সকল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে নোমান সুস্থ্য আছে।
ইউপি সদস্য দীপ্তেন্দু দাশ বিধুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘আমি অসুস্থ্য মানুষ, রাতে ভাত খাওয়ার সময় একটি নাম্বার থেকে কল আসে, ওই লোক থানা থেকে কল দিয়েছেন দাবী করে বলেন, নোমান হার্ট এ্যাটাক করেছে, তার অবস্থা খুবই খারাপ তাকে বাঁচাতে হলে জেল সুপারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতে হবে। এরপর নোমানের পরিবারের লোকজনকে খবর দিলে তারা যোগাযোগ করে ওই নাম্বারে। পরে কি হয়েছে আমি আর কিছু জানিনা।’
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, গত রবিবার একটি ধর্ষন মামলার আসামী নোমামকে গ্রেফতার করি। সে বর্তমানে জেল হাজতে আছে। গতকাল রাতে একটি প্রতারক চক্র কল দিয়ে নোমানের পরিবারের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। প্রতারকদের মোবাইল নাম্বার ট্রাকিং করে তাদেরকে গ্রেফতার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর