,

বাসচাপায় নিহত সিকৃবির ছাত্র নবীগঞ্জের ওয়াসিমের দাফন সম্পন্ন

‘আমার সব শেষ হয়ে গেলো, এখন আমারে কে মা ডাকবে?

মতিউর রহমান মুন্না ॥ ভাড়া নিয়ে তর্কবিতর্কের জের ধরে বাসচাপায় নিহত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াসিম আফনানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার বাদ জোহর জানাজা শেষে তার গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের রুদ্র গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বিকেলে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাসহ স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ করতে দেখা যায়। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে নিহতের বাবা আবু জাহেদ মাহবুব বলছিলেন, ‘ওয়াসিম আমার একমাত্র সন্তান। ওর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।’ সন্তান হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যচ্ছিলেন ওয়াসিমের মা। জ্ঞান ফিরলেই সন্তানের হত্যাকারীর বিচার দাবি করছিলেন তিনি। সন্তানের হত্যাকারীর কঠোর শাস্তি দাবি করে ওয়াসিমের বাবা বলেন, ‘আমি ওয়াসিমের হত্যাকারী বাসচালক ও হেলপারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।’ এর আগে গত শনিবার রাতে তার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। গত শনিবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুর বাস স্টেশনে ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে বাস থেকে ওয়াসিমকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন বাসের হেলপার মাসুক আলী। এতে বাসের চাকার নিচে পড়ে মারা যায় ওয়াসিম। নিহত ওয়াসিম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। তিনি নবীগঞ্জ উপজেলার রুদ্র গ্রামের আবু জায়েদ মাহবুবের একমাত্র পুত্র। ওয়াসিমের বড়বোন ইমো স্বামীর সঙ্গে ঢাকা থাকেন। এদিকে একমাত্র ছেলে সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় ওয়াসিমের বাবা-মা। ওয়াসিমের মা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীলা পারভীন ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান হারাচ্ছেন কিছু সময় পর পর। যখই জ্ঞান ফিরছে তখনই ‘আমারে কে মা ডাকবে আর? ও ওয়াসিম… আমাকে আর কে মা ডাকবে বাবা’ বলে চিৎকার দিয়ে আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। জানাজা পূর্বে ছাত্র জনতা আয়োজিত প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন, হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ মিলাদ, সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল, ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আহমেদ জাবেদ, বাউসা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ওয়াসিমের বাবা আবু জায়েদ মাহবুব নির্বাক, একটানা তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। নিহত ওয়াসিমের চাচা মফিজুর রহমান টিপু জানান, আমাদের সবার আদরের সন্তানটি চলে গেছে নির্মমভাবে, তাই মামলা করে কি করব? আমাদের ক্ষতিপূরণ দরকার নেই। আমাদের ছেলেকে তো আর ফেরত পাবো না। উল্লেখ্য, ওয়াসিমসহ ১১ জন শিক্ষার্থী নবীগঞ্জের দেবপাড়ায় একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। গত শনিবার বিকেলে  সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে তারা ময়মনসিংহ-সিলেট রোডের উদার পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসের ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে বাসের হেলপারের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে বাসের হেলপার ওয়াসিমসহ আরেক জনকে ধাক্কা দেন। এতে ওয়াসিম বাস থেকে পড়ে যান এবং বাস চালক বেপরোয়া গতিতে ওয়াসিমের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে চলে যান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা রাকিব হোসেন নামে আরেকজন শিক্ষার্থী বাস থেকে লাফ দিয়ে নামেন। ওয়াসিমকে দ্রুত একটি প্রাইভেটকারে করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। রাকিব হোসেনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা বাসটি আটক করেন। ততক্ষণে বাসের চালক ও হেলপার পালিয়ে যান। পরে মৌলভীবাজার সদর থানা পুলিশ বাসটি জব্দ করে। এ ঘটনায় গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় উদার পরিবহনের বাসচালক জুয়েল আহমদ ও রাত ২টার দিকে হেলপার মাসুক আলীকে পৃথক স্থান থেকে আটক করে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনা স্বীকার করেছেন বলে জানায় পুলিশ।


     এই বিভাগের আরো খবর