,

দিনারপুরের পাড়ার কাটার ফাইল ছবি

দিনারপুর পাহাড় কেটে পরিবেশ বিপর্যয় চলছেই

প্রকৃতিপ্রেমীরা হতাশ : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা

স্টাফ রিপোর্টার :: নবীগঞ্জের পাহাড়ী অঞ্চল বলে খ্যাত দিনারপুর পরগনার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে চলছে পাহাড় কাটা। একটি সংঘবদ্ধচক্র প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে চলেছে। এতে হতাশা দেখা দিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে। পাহাড় সংরক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে দিনারপুরঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য্য হারিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে ধ্বংসের পথে আজ এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ। নবীগঞ্জের দিনারপুর বাংলাদেশের পাহাড়ীয়া দ্বীপ হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করলেও ভূমিদস্যুদের নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে বেশী দিন পাহাড়ীয়া দ্বীপ হিসেবে অর্জিত খ্যাতি রাখতে পারবেনা। অবৈধভাবে পাহাড়ী এলাকায় জনবসতি জন্য প্রতিনিয়ত নির্বিচারে পাহাড় ও পাহাড়ী গাছ কাটা হচ্ছে নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া, পানিউমদা ও গজনাইপুর ইউনিয়নে ও বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট, পুটিজুড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায়। পাহাড়কাটায় বর্ষাকালে পাহাড়ী ঢালুতে বসবাসকারী লোকজনদের জীবন হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিবছর বর্ষাকালে পাহাড় ধসে পাহাড়ী ঢালুতে বসবাসকারী অনেক মানুষ মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে ভূমিদস্যূ কর্তৃক নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে প্রতিনিয়ত কয়েকশত বছর ধরে গড়ে ওঠা দিনারপুর পরগনার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার দরুন জলবায়ু, পরিবেশ, মাটি, পানি ও প্রাণীবৈচিত্রের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সবুজ বনভূমি। তাছাড়া ইচ্ছামত পাহাড় কাটার ফলে বেশি বেশি ভূমিকম্পন হতে পারে বলে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা সূত্রে জানা যায়। এ দিনারপুর পরগনার মানুষের মধ্যে পরিবেশ ও পাহাড় সম্পর্কিত নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব এবং সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকা, পাহাড় রক্ষা ও কাটা সম্পর্কিত উপযুক্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা না করা, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতার অভাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব, ব্যক্তিগত লাভ, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগের অভাবসহ ইত্যাদি কারণে দিন দিন পাহাড় কাটা বেড়ে চলছে। অপরদিকে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে পাহাড় কাটতে পারবে না, অন্যথায় আইন অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ বছরের জেল কিংবা ১০ লাখ টাকার জরিমানা প্রদানের নিয়ম নীতি থাকলেও। দিনারপুর এলাকার মাসুদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। যার কারণেও পাহাড়কাটা থেমে নেই বলে সচেতন নাগরিকরা মনে করে। পাহাড় কাটার কারণগুলো সুস্পষ্টভাবে সুনির্দিষ্ট করে এ দ্বীপের মানুষকে পাহাড় কাটা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনবোধে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালালে এবং পাহাড় কাটার অপকারিতা সম্পর্কে এ দ্বীপের মানুষকে অবহিত করে সচেতন করে তুললেও সঠিকভাবে পাহাড়কাটা সম্পর্কিত আইন প্রয়োগ করলে উপজেলার পাহাড় কাটা অনেকাংশে বন্ধ হতে পারে। বিশ্বস্থ সুত্র জানায়, গজনাইপুরের লোগাঁওসহ কয়েকটি পাহাড় কাটার আয়োজনও চূড়ান্ত। পরিবেশ বিধংসী এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের। কাটা হচ্ছে একের পর এক পাহাড়। রাতের আঁধারে পাহাড় কাটা হলেও দিনের বেলায় ট্রাকে করে মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যত্র। অনেক জায়গায় বুলডোজার ও এক্সলেটর মেশিন দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলছেন, ঐ অঞ্চলের এলাকা জুড়ে থাকা পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ বসতি, ইটভাটা, মুরগি ও মাছের খামার। এখন যেখানে পাহাড় সেখানে স্কেভেটর দেখা যাচ্ছে। কেউ পাহাড় কেটে বসতবাড়ি তৈরী করছে। কেউ মাটি লুট করছে। কোথাও আবার পাহাড় কেটে সমতল করে সেখানে মুরগির খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা করা হচ্ছে। পাহাড়ের মাটি চলে যাচ্ছে ইটের ভাটায়, সড়ক নির্মানে, বাড়িঘর. বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের জায়গা ভরাটে, পুকুর ও খাল বিল ভরাট করা হচ্ছে পাহাড় কেটে। এদিকে একটি সূত্র জানায়, গজনাইপুর ইউনিয়নের লোগাঁও গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত এক শিক্ষকের পরিবারকে এলাকা ছাড়া করতে টিলার উপর অবস্থিত তাদের বাড়ির পাশের অংশ বিক্রি করার পায়তারা করছে একটি চক্র। ফলে আতংকের মাঝে আছে পরিবারটি। ওই অংশের মাটি কেটে বিক্রি করলে যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে তাদের একমাত্র বসত ঘরটি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। নির্বিচারে পাহাড় কাটা প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালক (ছাড়পত্র) সৈয়দ নজমূল আহসান বলেন, কোথাও পাহাড় কাটার সংবাদ পাওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা হবিগঞ্জে কোথায় পাহাড় কাটা অনুমোদ প্রদান করি নাই। কেউ আইন অমান্য করে পাহাড় কাটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেট অফিস কে বলবো। আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হয়েছে জানিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা মামলা করতে নির্দেশ দিবো। ওই এলাকায় পাহাড়-টিলা কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু তারা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে পাহাড় কেটেছে সেটা খতিয়ে দেখা হবে। সাধারণ জনগন বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ও মাটি ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় এবং মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রভাবশালীদের কবল থেকে পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের জোর নজরদারির পাশাপাশি আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।


     এই বিভাগের আরো খবর