,

গ্যাসের দাম অবশ্যই বাড়বে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

সময় ডেস্ক ॥ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, শিল্প গ্যাসের দাম অবশ্যই বাড়বে। তবে তাতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হবে না। আর দাম বাড়ানোর কারণে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়লে সরকার তা দেখবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘জ্বালানির মূল্য নির্ধারণ : শিল্পের ওপর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে গ্রাহকদের জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। সরকার ভর্তুকি দিয়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। দেশে ৮০ লাখ গ্রাহক আছে যারা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দেয় ২ টাকার কম। গ্যাসের বেলায়ও তাই। ৯ টাকার গ্যাস ৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। জ্বালানি খাতে বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যদিও এ কারণে অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এই ভর্তুকি থেকে বের হতে হবে। এজন্য বলা যাবে না, গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকার দাম সমন্বয় করছে, এ সমন্বয় চলতে থাকবে।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেড় বছর আগে এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তখনই গ্যাসের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়। এখন সেটা করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছর পর্যায়ক্রমে দাম সমন্বয় করা হবে।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা গ্যাসের দাম না বাড়ানোর পাশাপাশি শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহের দাবি করেন। একই সঙ্গে গ্যাস আমদানির পরিবর্তে দেশে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো, গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধেরও প্রস্তাব করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে খরচ বাড়লে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে। এজন্য যাতে খরচ না বাড়ে সরকারকে সে ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা গ্যাস ও বিদ্যুতের বড় গ্রাহকদের জন্য আলাদা দাম নির্ধারনের দাবি জানান।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কারখানায় স্থাপিত ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে জাতীয়ভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অব্যবহৃত থাকছে। এজন্য তিনি বড় উদ্যোক্তাদের পিক আওয়ার ও অফ পিক আওয়ারে আলাদা দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব করেন।
রাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পিক ও অফপিক আওয়ারে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবধান। এতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। এটা কমানো প্রয়োজন। অর্থাৎ অফপিক আওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে সে ক্ষেত্রে দাম কমানো সম্ভব হবে।
নসরুল হামিদ বলেন, বর্তমানে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকছে। ব্যবহার না হওয়ায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের খরচ বহন করতে হচ্ছে। এর দায় কোনো না কোনোভাবে গ্রাহকের ওপর পড়ছে। তাই ব্যবসায়ীরা কারখানায় বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ান, দাম কমে আসবে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমানোর জন্য বকেয়া বিল পরিশোধ ও চুরি বন্ধের সুপারিশ করে তিনি বলেন, ১০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের শিল্প মালিকদের কাছে ৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল এবং ৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। আবার অনেক কারখানা আছে, বিল দিচ্ছে না, কিন্তু তাদের অবৈধ সংযোগ রয়েছে। এসব বিল আদায়ে কঠোর হলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার কারখানা বন্ধ করতে চায় না।
নসরুল হামিদ আরও বলেন, এখন থেকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ দেওয়ার হবে কি-না তা নিশ্চিত নয়। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত কারখানা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ পাবে।
ডিসিসিআই সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, জ্বালানি উৎসে সুন্দর সমন্বয় দরকার। শুধু গ্যাস নির্ভর হলে চলবে না। কয়লা, সূর্যালোকসহ বিভিন্ন উৎস ব্যবহার করলে মূল্য সমন্বয়ও সহজ হবে। পাশাপাশি জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে ৩ থেকে ৫ বছরের নীতিমালা থাকা উচিত।
জ্বালানি খাতে দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন এবং অভ্যন্তরীণ গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো ও শিল্প কারখানায় ইলেকট্রনিক মিটার বসানোর সুপারিশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব এম ফওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জ্বালানি বাজারে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। জ্বালানি দাম ধাপে ধাপে বাড়ানো যেতে পারে, তবে তা নীতিমালার মাধ্যমে। গ্যাসের চেয়ে কয়লা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খরচ কম হবে। সরকারের সেদিকে মনোযোগ বাড়ানো দরকার।
বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মাদ আলী খোকন বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, দেশে গ্যাস থাকলেও সরকার তা উত্তোলনের পরিবর্তে আমদানিতে ঝুঁকছে। এ নীতি থেকে সরে আসা দরকার।
বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, জ্বালানি বাজারে প্রতিযোগিতা দরকার। সব ধরনের জ্বালানির উন্মুক্ত বাজার থাকা দরকার। এনার্জি প্যাকের হুমায়ুন রশিদ বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউন বেসরকারি খাতে দেওয়ার সময় এসেছে।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সংগঠনটির পরিচালকরা বক্তব্য রাখেন।


     এই বিভাগের আরো খবর