,

নবীগঞ্জের কোন ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেই নেই চিকিৎসক, সুযোগে একাই রাজত্ব করছেন ডাঃ প্রিয়াংকা!

মতিউর রহমান মুন্না ॥ নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় পৌনে ৪ লক্ষ মানুষের বসবাস। কিন্তু এত জনসংখ্যার বড় একটি অংশ পরিবার পরিকল্পনার সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের জনবল সংকট। অপরদিকে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে তার সকল কার্যক্রম। ওই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে পরিবার কল্যান কেন্দ্রে কোন মেডিকেল অফিসার বা ফার্মাসিষ্ট না থাকায় গর্ভবতী মায়েরা উপজেলা সদরে আসেন উন্নত চিকিৎসার নেয়ার জন্য। কিন্তু এখানে সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রে এসেও নবাগত ডাঃ প্রিয়াংকা পাল চৌধুরীর চক্করে পড়ে নানা হয়রানী ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একাই যেন রাম রাজত্ব কায়েম করছেন ডাঃ প্রিয়াংকা পাল চৌধুরী। সুত্রে প্রকাশ, বর্তমান সরকার চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গর্ভবতী মা ও জন্মের পর মা-শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহ কার্যক্রম চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নবীগঞ্জ উপজেলার ভাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পশ্চিম বড় ভাকৈর, পূর্ব বড় ভাকৈর, দীঘলবাক, কুর্শি, করগাঁও, বাউশা ও পানিউমদা ইউনিয়নে পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নগুলোতে রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ সেবা কেন্দ্র। উল্লেখিত ইউনিয়নের কোন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেই সেবা দিচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা। বেশির ভাগ সময়ই সেবা কেন্দ্রগুলো তালাবদ্ধ থাকে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। বিশেষ করে কোন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেই নেই মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিষ্ট ও স্যাকমো। এমনকি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকার পদও রয়েছে শূণ্য। এসব পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রই আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন। ওইসব এলাকার লোকজন আরো জানান, গর্ভবতী মায়েরা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কোন পরামর্শ বা সেবার জন্য গেলে দায়ীত্বে যারা থাকেন তারা পাঠিয়ে দেন নবীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়ে। সেখানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়ীত্বে রয়েছেন ডাঃ প্রিয়াংকা পাল চৌধুরী। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে প্রেরণকৃত রোগীরা ডাঃ প্রিয়াংকা পালের সাথে দেখা করার সুযোগ পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এ ছাড়াও তিনি রোগীদের সাথে খারাপ আচরনের পাশাপাশি ভিজিট ছাড়া রোগী দেখেন না বলে জানিয়েছেন ভূক্তভূগী গর্ভবতী মায়েরা। অভিযোগ উঠেছে, ডাঃ প্রিয়াংকা পাল বেশিরভাগ সময় কিউর ফার্মেসি নামক নিজের প্রাইভেট চেম্বারেই রোগী দেখতে ব্যস্ত থাকেন। হাসপাতালে অপেক্ষারত রোগীর সংখ্যা বাড়লে তিনি প্রাইভেট চেম্বার থেকে আসেন। তাছাড়া সরকারী হাসপাতালে ভিজিট আদায়ের কোন নিয়ম না থাকলেও তিনি ভিজিট ছাড়া রোগী দেখেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পরবর্তিতে ১৫ দিন বা ১ মাস পর দেখা করতে হলে নবীগঞ্জ শহরতলী হাসপাতাল রোডস্থ তার নিজস্ব চেম্বার কিউর ফার্মেসিতে আসার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার ডাঃ প্রিয়াংকা পাল চৌধুরীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ গোলাম মোস্তফা জানান, ডাঃ প্রিয়াংকা পাল চৌধুরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার নয়, তিনি পরিবার পরিকল্পনার অধীনে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ডাঃ প্রিয়াংকা পাল বিভিন্ন প্রচারণা ও বিলবোর্ডে নিজেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এ বিষয়টি তার জানা নেই। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক ডাঃ নাসিমা খানম ইভার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে নবীগঞ্জে বড় একটি অনুষ্ঠান করা হয়েছে। পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি তিনি দেখছেন। ডাঃ প্রিয়াংকার ওপর অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত আছেন তাই অভিযোগটি তিনি দেখেননি।


     এই বিভাগের আরো খবর