,

বানিয়াচংয়ে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষক

সংবাদদাতা ॥ বানিয়াচংয়ে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা। ফলনও হয়েছে ভালো। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। কিন্তু বাজারে গিয়ে কৃষকের সেই হাসিমাখা আর থাকছে না। কারণ, বাজারে ধানের দাম কম। হাওর অঞ্চলের ধানের  ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। এই নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশার অন্ত নেই। মিলার-আড়তদার ও ফড়িয়াদের ইচ্ছার উপরই নির্ধারণ হচ্ছে ধানের মূল্যে। কৃষকদের বাধ্য হয়ে এ মূল্যেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকের মতে বাজার মূল্য নিন্ত্রয়ণে হাওর অঞ্চলে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয় বেপারী ও আড়তদাররা ফড়িয়াদের মাধ্যমে ধান ক্রয় করে ট্রাক যোগে ধান চালের ক্রয় কেন্দ্র ভৈরব, নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, কুমিল্লা, সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ধান প্রেরণ করে থাকেন। স্থানীয় বেপারী ও আড়তদাররা ওই সব এলাকার মিলার ও আড়তদারদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে সেখানকার মূল্যের ওপর ভিত্তি করে পড়তা অনুয়ায়ী কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করে থাকেন। ফড়িয়ারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় করে স্থানীয় আড়ত ও বেপারীদের কাছে মণ প্রতি ১৫/২০  টাকা মুনাফায় সরবরাহ করে থাকেন। বৈশাখ মাসে ধান কাটা শুরুর সাথে সাথে হাওরে কৃষকদের ধানের খলা থেকে প্রতিমণ ভেজা  ধান বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ ৪৫০ টাকা ও শেষ দিকে ৪৭০ টাকা। এসব ধান শুকিয়ে মণ প্রতি ৩০ থেকে ৩২ কেজি টিকেছে বলে স্থানীয় আড়তদাররা জানান। বর্তমানে মোটা ধান ৪৬০ ও সরু ধান ৪৯০ টাকা মণ ধরে কেনা-বেচা হচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এবার বাম্পার ফলন হলেও মাঝ পথে শিলা বৃষ্টি ও প্রচন্ড ঝড়ে কৃষকের স্বপ্নভরা আশা গুঁড়েবালি। যাও হয়েছে তাও আবার সংরক্ষণ ও গোলার অভাবে বিপুল পরিমাণ ধানই বিক্রি করে দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। এছাড়া ঋণ শোধ ও সাংসারিক খরচ মেটাতে কৃষকরা অহরহ ধান বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে চাল বেচা কেনার সুযোগ না থাকায়  ক্ষুদ্র কৃষকরা কিছু বাড়তি মূল্য পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। মিলারদের সরবরাহকৃত প্যাকেটজাত চালাই বাজার দখল করে আছে। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়,  এবার বানিয়াচং উপজেলায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল জমি ৩৫ হাজার ৫শ হেক্টর। তন্মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৩৫ হাজার ৫২০ হেক্টর। অনুকূল  প্রকৃতি ও পরিবেশে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি ও বাম্পার ফলনে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বানিয়াচং উপজেলায় হাইব্রিড ৮৩ হাজার ১৬৬ টন, উফশী ৬৫ হাজার ৮০৪ টন ও স্থানীয় জাত ৮০ টন। কৃষকরা বছরের খোরাকি রেখে ধান বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। বানিয়াচংয়ের কৃষক জমরুত উল্বা জানালেন, সংরক্ষণের অভাবে ধান মাড়াইয়ের সাথে সাথে হাওর থেকেই প্রতিমণ ধান ৪৬০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা মূল্যে কয়েক দফায় ৪শ’ মণ ধান বিক্রি করেছেন। কৃষক জয় কুমার চৌধুরী জানান, তিনি একুশ কানি (সাত একর) জমিতে বোরো চাষ করেছেন। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০০ টাকা। কিন্তু বাজারে ধান বিক্রি করেছেন প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ধান ফলায় কৃষক আর মুনাফা লুটে মুজতদার ও মধ্যস্বত্ত্বভোগী শ্রেণি। মূলত সরকারিভাবে এখনো ধান না কেনায় বিপাকে পড়েছেন তারা।


     এই বিভাগের আরো খবর