,

হবিগঞ্জ পৌরসভার উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন জি কে গউছ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরবাসীর আগ্রহে এবং দলীয় সিদ্ধান্তে হবিগঞ্জ পৌরসভার উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন আলহাজ্ব জি কে গউছ। বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সুত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার টানা ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের পদটি শূণ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ২০ মে এই শূণ্য পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৭ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। ভোট গ্রহন ২৪ জুন। হবিগঞ্জের বহু চড়াই-উৎড়াইয়ের সাথে যে নামটি জড়িত তার নাম জি কে গউছ। মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে ৫১ বছরের জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে ১৩ শ ৪৭ দিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাভোগ করেছেন। জনসেবা আর উন্নয়ন দিয়ে তিনি হবিগঞ্জবাসীর হৃদয়ের মনিকোটায় স্থান করে নিয়েছেন। যার প্রমাণ হবিগঞ্জ পৌরবাসীও একাধিকবার দিয়েছেন। ২০০৪ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জি কে গউছ। জীবনের প্রথম এই নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় ছিল তার রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই বছরে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল তা যে বিগত ২৫ বছরেও হয়নি সে কথা স্বীকার করেন তার শত্রুপক্ষের লোকেরাও। পৌরসভার প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার করা ছিল কঠিনতর একটি কাজ। বগলা বাজার ও চৌধুরী বাজার এলাকায় রাস্তা প্রশস্তকরণ ছিল আরও বেশি কঠিন। যে এলাকার প্রতি ইঞ্চি জায়গার মূল্য লাখ টাকারও বেশি, আলহাজ্ব জি কে গউছের অনুরোধে সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান ভিটা ভেঙ্গে দিয়েছেন রাস্তা প্রশস্তকরনের জন্য। যারা আলহাজ্ব জি কে গউছকে নির্বাচিত করতে প্রকাশ্যে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন তাদের দোকান ভাঙ্গা হয়েছে সবার আগে। তাতে আলহাজ্ব জি কে গউছের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং ভালো কোনো কিছু করার জন্য সদিচ্ছাই যতেষ্ট, তারই প্রতিফলন ঘটে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ছিল তার চোখে পড়ার মতো। ৫ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচনে ভোটাররাও এর প্রতিদান দিয়েছেন। যেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কোনো ভোট আশাও করেন না, ঠিক সেখানে জি কে গউছ ভোট পেয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন। ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী ২য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন জি কে গউছ। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গিত করেন। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত এবং পায়জামা শহর হিসেবে খ্যাত হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রূপান্তর করতে তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ শহরের চেহারা পাল্টিয়ে দেন। মেয়র জি কে গউছের প্রচেষ্টায় শহরের রোড ডিভাইডার স্থাপন, খোয়াই নদীর মাছুলিয়ায় এম সাইফুর রহমান ব্রীজ, শহরের কামড়া পুর থেকে নছরতপুর পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণ, নতুন বাস টার্মিনাল নির্মাণ, খোয়াই নদীর উপর জেনারেল এম এ রব ব্রীজ, শাহ এএমএস কিবরিয়া ব্রীজ, শহরের প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার স্থাপন, এম সাইফুর রহমান টাইন হল, বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় পানির ২য় ট্রিটম্যান্ট প্লান স্থাপন, শহরে অসংখ্য ড্রেইন ও রাস্তা নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। ফলে হবিগঞ্জ পৌরবাসী এখন উন্নত নাগরিক সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। পৌরসভায় দায়িত্ব পালনে জি কে গউছ কোন ধর্মীয় গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি সকল ধর্মের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকারিভাবে ইতালী, ফ্রান্স, গ্রীস, সুইজারল্যান্ড, পুর্তগাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, বাহরাইন, ওমান, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সফর করেন। এসব দেশ সফরকালে তিনি স্থানীয় সরকারের সাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্ক, তাদের উন্নয়মূলক কর্মকান্ড, শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানাবিদ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবেই তিনি হবিগঞ্জ পৌরসভায় নাগরিক সেবায় ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেন। তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নিজের সম্মানী ভাতার টাকা কন্যাদায়গ্রস্থ পরিবারের সাহায্যার্থে দান করছেন। এ পর্যন্ত তিনি পৌরসভার তহবিল থেকে ব্যক্তিগত খরচের জন্য কোন অর্থ নেননি। তিনিই একমাত্র পৌরসভার চেয়ারম্যান, দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি বছর পৌরসভার পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধণা প্রদান, পবিত্র হজ্ব ও ওমরা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, কৃতি ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের সংবর্ধণা প্রদান, বৈশাখী মেলা, বই মেলা, কর মেলা, পিঠা উৎসব, সুন্নতে খৎনা ও গণবিয়ের অনুষ্ঠানের প্রবর্তন করেন। মেয়র জি কে গউছ অত্যান্ত সাহসিকতার সাথে প্রতি বছর সরাসরি প্রশ্নোত্তর বিষয়ক পৌরবাসীর মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসব ব্যতিক্রম ধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ২ বার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আব্দুল মান্নান ভুইয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও এডিবি’র সদর দপ্তর ফিলিপাইন থেকে জি কে গউছ এই গোল্ড মেডেল গ্রহন করেন। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কারাগার থেকে অংশ গ্রহন করেন বিএনপির এই সংগ্রামী নেতা। এই নির্বাচনে অনেকটা অভিভাবকহীন অবস্থায় প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন তিনি। কিন্তু জনগনের ভালবাসার কাছে সকল ষড়যন্ত্র ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। নির্বাচিত হন টানা ৩য় বারের মতো মেয়র।


     এই বিভাগের আরো খবর