,

নবীগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক মেরামত শুরু

আনোয়ার হোসেন মিঠু ॥ নবীগঞ্জে উপজেলার রাধাপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বাঁেধর উপর বালির বস্তা দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মূল ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। পানি এখনও বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়সহ ওই এলাকার বেশ কয়েকটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে পানি প্রবেশ করেছে। এখনো সরকারী কোন ত্রান সামগ্রী এলাকায় পৌঁছেনি। স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সামান্য কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। এদিকে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তার সাথে ছিলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদ বিন হাসান, অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া গতকাল বিকেলে কসবা, রাধাপুরসহ বিভিন্ন দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিঠু, দৈনিক হবিগঞ্জ সময় পত্রিকার প্রকাশক ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সেলিম তালুকদার, নবীগঞ্জ উপজেলা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা টিভির প্রতিনিধি মতিউর রহমান মুন্না, এসআই এমরান আহমদ, এসআই কাওছার আহমদ,  পৌর যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, এএসআই অনিক প্রমূখ। গতকাল সোমবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ডাইকের ভাঙ্গন বন্ধ না হওয়ায় লোকজনের মধ্যে আতংক ও উৎকন্টা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রায় ১০ হাজার একর ফসলী জমি ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান জানিয়েছেন। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি থাকায় বাঁধ মেরামত কাজ ব্যহত হচ্ছে। পানি বন্ধী মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এদিকে বিকেলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্টে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকার ফলে উপজেলার রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেরি বিল, বড় হাওর, ঘুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ইতিমধ্যে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, নতুন কসবা, মথুরাপুর, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা, রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁও, আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাঁও, ইসলামপুর, পারকুল, ঢালার পাড়, পাহাড়পুরসহ প্রায় ৩০ টি গ্রাম এবং ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভূমিহীন পাড়া, রমজানপুর, উমরপুর, ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ববাজার কলনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউড়কাপন, মোকামপারা, রাজনগরসহ আরো প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অসংখ্য মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও আশ পাশের আরো শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল সকালে কুশিয়ারা ডাইক পরিদর্শনকালে বলেন, এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামতের জন্য সরকার অত্যান্ত আন্তরিক। আমরা ইতিমধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি, দু’এক দিনের মধ্যেই বাঁধ মেরামত করা সম্পন্ন হবে। বাঁধ নির্মানে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে। হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিকাল সাড়ে ৪ টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে বিপদসীমার ৫৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে।এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ বলেন, আমরা সারারাত পাহাড়া দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ রক্ষায় থাকলেও রবিবার বিকালে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়ে ডাইক ভেঙ্গে যায়। ভাঙ্গন বৃদ্ধি পাচ্ছে রাতের মধ্যে ভাঙ্গন বিশাল আকার ধারন করবে। তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয় বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব নয়। আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন বলেন, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ইউনিয়নের প্রায় ২০ টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওড়, বেরী বিলের হাওড়ে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর