,

আজ বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ

এম.এ.আই সজিব ॥ পহেলা বৈশাখ আজ। ১৪২২ বঙ্গাব্দ। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের দিনগণনা। বাঙালির প্রধানতম সম্প্রীতির উৎসব এই বৈশাখ আবাহন। ষাটের দশকে এই জনপদ যখন পাকিস্তানের নিগড়ে, আইয়ুব আমলে সাম্প্রদায়িক বিজাতীয় সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আগ্রাসনে যখন বাঙালির উৎসব বিপন্ন প্রায়, সেই থেকে বৈশাখ আসে নব আনন্দে জেগে ওঠার শক্তি নিয়ে। এরপর দিন বদলেছে, আর এরই পথ ধরে পরাধীনতার শৃঙ্কল ছিঁড়ে ফেলে একদিন জন্ম নেয় বাংলাদেশ। কালক্রমে উৎসব-পাগল এ বাঙালি মিশে যায় আবহমান বাংলার চিরায়ত ফসল কেন্দ্রিক উৎসব-আনন্দে। আর তাইতো সাফল্য, সমৃদ্ধি আর মঙ্গল কামনায় নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ছেলে-বুড়ো সবাই। কৃষিপ্রধান এই জনপদে সুষ্ঠুভাবে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন দরকার ছিল আগে থেকেই। চান্দ্র আর সৌরসনে আটকে পড়া বর্ষপঞ্জি সে চাহিদা যেন কিছুতেই মেটাতে পারছিল না। সেই চিন্তায় ভারতবর্ষে মুঘল আমলে সম্রাট আকবরের সময়ে কার্যকর হয় ‘ফসলি সন’। সময়ের ব্যবধানে সেটাই আজ বাংলা সন, বঙ্গাব্দ। প্রাচীন নববর্ষের সেই রূপটি আজো আধুনিক নববর্ষ উৎসবের মধ্যে বয়ে চলেছে। বাংলা পঞ্জিকার হিসাব মতে চৈত্রের পর বৈশাখের শুরু। বরাবরের মতোই পুরনোকে বিদায় জানিয়ে এবারো নতুনের বারতা নিয়ে এসেছে প্রকৃতি। ফাল্গুন থেকেই পুরনো পাতা ঝেরে নতুন পাতায় সাজতে শুরু করেছে গাছগুলো। বৈশাখে পূর্ণতা নিয়ে চকচকে সবুজ নতুন পাতায় নতুন বছরকে স্বাগত জানানো তাই চিরায়ত। বাংলা ঋতুর হিসেবে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য এ দু’মাস গ্রীষ্মকাল। প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত মানুষ, একটু শান্তির আসায় বিশ্রাম তটিনী তলে। বাংলা জনপদের মানুষের প্রাণের উৎসব, নতুন বছরের প্রথম দিন, এ পহেলা বৈশাখ। ধর্মীয় কুপমন্ডুকলতার ঊর্ধ্বে অসাম্প্রদায়িক এ উৎসব-আয়োজন। সময়ের বিবর্তনে এখন ক্লান্তি মেটানো ডাবের পানির জায়গা দখল করেছে কোমল পানীয়। তবু প্রচন্ড এ গরমে স্বস্তি পেতে এখনো বাঙালি ভুলে যায়নি তার কৃষ্টি-সংস্কৃতি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বর্ষবরণের সব উপকরণ নিয়ে চৈত্রের শেষদিকেই জমে ওঠে কেনাবেচা। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে এ উৎসব বাঙালির, বাংলাদেশের। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে সম্ভবনার নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব।


     এই বিভাগের আরো খবর