,

হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রীকে নির্যাতন:: শালিসে নিষ্পত্তি

ইভটিজারদের বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করলেন মাতব্বররা

জুয়েল চৌধুরী:: ইভটিজারদের বিরুদ্ধে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করে হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ছাত্রীকে নির্যাতনে ঘটনাটি শালিসে নিস্পতি করেছেন গ্রাম্য মাতাব্বরা। বখাটেদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বিগ্ন। অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানায়, প্রতিদিনের হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি গ্রামের আব্দুর রউফ এর কন্যা মনিরা বেগম (১৮) হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ১ম বর্ষের ছাত্রী কলেজের ক্লাস শেষে বিকেলে বাড়িতে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সে হবিগঞ্জ শহরের নতুন খোয়াই মুখ এলাকা থেকে টমটম (ইজবাইক) যোগে মির্জাপুর লাটুম বাজারে যায়। সেখান থেকে নছতপুর-চান্দপুর সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে তার গ্রামে যাচ্ছিল। সড়কের মধবর্তী চৌড়ারখাড়ায় পৌছলে পূর্বে থেকে উৎপেতে থাকা মির্জাপুর গ্রামের আসাদ আলীর বখাটে মেহেদী, আলাউদ্দিনের ছেলে জহুর আলী, আব্দুল হাইয়ের ছেলে শোভন, মন্নর আলী ছেলে শামীম মিয়া মেয়েটি একা পেয়ে প্রথমে তার মোবাইল নাম্বার চায়। মেয়েটি মোবাইল নাম্বার দিতে না চাইলে বখাটে নানা অঙ্গ ভঙ্গিতে কথা বার্তা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে বখাটেরা মেয়েটিকে টমটম থেকে নামিয়ে ঝাপটে ধরে তার জামা-কাপড় ছুরে ফেলে। এ সময় বখাটে মেয়েটি মুখে গাছমা বাধঁতে চাইলে মেয়েটি শোর চিৎকার করে। মেয়েটি শোর চিৎকার শোনে নির্মাণ রাস্তার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা এগিয়ে এসে বখাটেদের হাত থেকে মেয়েটি বাঁচাতে চাইলে বখাটেরা তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় বখাটের পক্ষ অবলম্বন করে তাদের স্বজনরা শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। রক্তাত অবস্থায় শ্রমিকদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেয়েটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়ে তার কাছে মেয়েটির উপর নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা দেন। সাথে সাথে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলীকে এ বিষয়টি জানান। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির নির্দেশে এসআই মন্তোষ দাস, এসআই শাহিদ মিয়াসহ একদল পুলিশ মির্জাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আলী হোসেন নামের যুবককে আটক করে। এদিকে, ঘটনার পর পরই বিষয়টি শালিসে নিস্পতির জন্য মির্জাপুর গ্রামের কতিপয় মাতাব্বররা লুকড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলামের মধ্যমস্তার শালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতকাল সোমবার মির্জাপুর গ্রামে আব্দুল আলী সর্দারের বাড়িতে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আব্দুল লতিফ কালন মেম্বার। শালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, রফিক মিয়া, গনি মেম্বার, আবু তাহের মেম্বারসহ উভয় গ্রামের মুরুব্বীয়ান। শালিসে কলেজ ছাত্রীকে উত্ত্যাক্ত করায় ও তাকে বাঁচাতে এসে আহত হওয়ায় ৪ ব্যক্তি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ সহ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করা হয়। এদিকে কলেজ ছাত্রী ইভটিজিংয়ের ঘটনার উপযুক্ত বিচার করার ঘটনায় এলাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন। তাদের মেয়েদের নিরাপত্তার নিশ্চিত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। পুলিশ সূত্র জানায়, ইভটিজিং-এর মত অপরাধ শালিসে নিষ্পতি করা সম্পন্ন বে-আইনি। যারা এই রায় প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।


     এই বিভাগের আরো খবর