,

নামে বাদশা কামে নাই

এসএমএ হাসনাত ॥ নাম তার বাদশা মিয়া। বয়স ১২ কি ১৩। মনে করতে পারে না। আট ভাই-বোনের মধ্যে ৩য় সে। অনাদরে-অবহেলায় যাচ্ছে দিন হয়ত এই কারণেই। নিজের জীবনে আনন্দ আর সুখ অনুভূতি না থাকলেও সবাইকে মাতিয়ে রাখে সর্বক্ষণ। গানে, অভিনয়ে, ডায়লগবাজিতে সরব। ব্যবসাও জমজমাট। আসর জমলেই বিক্রি-বাট্টা বেশী। চা-ধুমপান কিংবা আড্ডা দিতে আসা মানুষকে যতক্ষণ মজিয়ে রাখা যায়, ততই লাভ। এটা সে বুঝে গেছে। তাই তো শোনায় কখনও সিনেমার নিত্য নতুন রোমান্টিক কিংবা বিরহের গান। কখনও জোকারের অভিনয়, নয়তো নায়ক-ভিলেনের বিখ্যাত ডায়লগ যেন বের হতেই আছে। গলায় তার কারুকাজ! তাল-লয় যেন ঠিকরে পড়ছে তার কচি কন্ঠে। পথে-দোকানে সিডির দোকানের গান কিংবা সিনেমা দেখেই নিজে নিজে শিখে ফেলেছে সে। যখন বিরহের গান গায়, আশেপাশে নেমে আসে পিন পতন নিরবতা। আবার জোকারের অভিনয়ে হো হো করে হাসির রোল পড়ে চায়ের দোকানে। বাদশা মিয়া নাম কে রাখলো? নামে বাদশা, কামে নাই। বাদশারা অনেক বড়লোক হয়। আমি তো বড়লোক না- বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বাবা আয়াস আলী আর মা বুলি বেগম তার তেমন একটা খবর রাখে না। তাই মামার কাছেই তার অবস্থান। বড় হয়ে কি করবে-জানতে চাইলে অকপটে স্বীকারোক্তি বিয়ে করবো। ধনী ও সুন্দর-ফর্সা মেয়ে বিয়ে করবে। যাতে সন্তানরা দেখতে সুন্দর হয়। আর কি করতে চাও, জিজ্ঞেস করলাম। উত্তর, বড় অফিসার হতাম। টাই লাগাইয়্যা, চশমা পইড়্যা, বেল (বেল্ট) পড়তাম। তুমি তো ২য় শ্রেণীর বেশী পড়া লেখা করনি? অফিসার হবে কি করে! শুনে সুন্দর মুখ খানায় বিষাদের ঘন কালো মেঘ দেখলাম। গানে-অভিনয়ে সবাইকে মনোরঞ্জন করলেও নিজের পকেট চলে ২০-৩০ টাকায়। গান শুনে, অভিনয় দেখে কেউ যদি ৫/১০ টাকা দেয়-সেটাই তার চাওয়া। স্বপ্ন একটু বড়, কিন্তু আকাংকা কম। আশা-নিরাশার এমনই এক দোলাচলে রেখে আমি, কবি ও গবেষক শহিদুজ্জামান চৌধুরী এবং কবি শুয়াইব আহম্মেদ শিবলু তার মামা শ্যামলের দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারের মধ্যখানে এই দোকান। কি সকাল-দুপুর কিংবা সন্ধ্যা সব সময় সরগরম দোকানটি। বাদশা মিয়ার দোকান কোনটি বললে সকলেই একবাক্যে চিনিয়ে দিবে। কাছে গেলেই শুনতে পাবেন কবি কন্ঠে বিখ্যাত সব গান কিংবা ডায়লগ।ফিচার লেখক : এসএমএ হাসনাত, বিএসএস (সম্মান), এমএসএস (সাংবাদিকতা), রাঃ বিঃ, সম্পাদক- মহাকালগড় বার্তা ও মানবাধিকার কর্মী।


     এই বিভাগের আরো খবর