,

শায়েস্তাগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস

সৈয়দ আখলাক উদ্দিন মনসুর ॥ শায়স্তোগঞ্জ উপজেলা সহ আশপাশের বিস্তীর্ণ জনপদ থেেক ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। এর সাথে পাল্লা দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস ও গাছি নামক শিল্পীরা। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ অনুভূত হলেও প্রকৃত শীত আসতে এখনো কিছুটা বাকি আছে। ঐতিহ্যহ্যগতভাবে শীতের ভোরে একগ্লাস খেজুরের রস পান করতে ইচ্ছা জাগে রস প্রেমিকদের। গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যের বাহক এই মধুবৃক্ষ তুলনামূলকভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনকেটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামে মাঠের ধারে মেঠোপথের কিনারে অথবা ঘরের কোনে খেজুরগাছ দাঁড়িয়ে থাকতে আর দেখা যায়না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। কারন যে হারে খেজুরগাছ নিধন করা হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়ে দু’একটি খেজুরগাছ দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। শীতের সকালে খেজুরের তাজা রস ও রসে ডুবানো পিঠার স্বাদ আর মৌ-মৌ ঘ্রাণ যে কতটা মধুর তা বলে প্রকাশ করা যাবেনা। উপজেলার খোয়াই নদী সংলগ্ন কলমিনগর গ্রামের আলেয়া বেগম জানান, এলাকায় গাছের সংখ্যা অনকে কমে গেছে। এক সময় এই এলাকায় প্রচুর খেজুরগাছ ছিল, অনকে রসও পাওয়া যেতো। এখন খেজুরগাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে পেশাদার গাছি শিল্পীরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় তাদের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণের কাজে পেশাদার গাছিদের আর দেখা যায়না। এই এলাকার গাছি রফিক মিয়া জানান, খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় তদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারতেন। আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সংসার চালিয়ে কিছু সঞ্চয়ও করা যেতো। এখন গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বেশী বয়সের হওয়ায় তাতে তেমন রস পাওয়া যায় না। এক সময় এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি হতো ১০০ টাকায় এখন খেজুরগাছ কমে যাওয়ায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। শায়স্তোগঞ্জ পৌর এলাকার দাউদনগরের বাসিন্দা মীর আব্দুল কাইয়ুম জানান, তার বাড়িতে খেজুরগাছ আছে। নজিরে খেজুরগাছের রস খাওয়ার আশায় গতবছর থেকে গাছি খোঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। দাউদনগর বাজারে গুড় ব্যবসায়ী মোঃ কদ্দুস আলী বলেন, এখন শীত মৌসমের ভোরে একগ্লাস তাজা খেজুররে রস পাওয়া না গেলেও খেজুরের রসে তৈরি পাটালী গুড়, ঝোলা গুড়, মরিচা গুড় ইত্যাদি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। দেশের যশোর, ঝিনাইদহ এবং ফরিদপুর অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ খেজুর গাছ দেখা যায়। ওইসব এলাকায় বানিজ্যিকভাবে খেজুরের রস থেকে বিভিন্ন প্রকারের গুড় উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এই উৎপাদিত গুড় মৌসুমে সারাদেশে প্রেরণ করা হয়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর এবং রসে তৈরি নানান প্রকারের সুস্বাদু ও সুগন্ধি গুড়কে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এর অংশ হিসেবে বিদ্যমান খেজুরগাছের সঠকি পরির্চযার পাশাপাশি নতুন করে খেজুরগাছ রোপন করা জরুরী বলে মনে করেন এলাকার পরিবেশ সচেতন লোকজন।


     এই বিভাগের আরো খবর