,

নবীগঞ্জে মেঘনা বীমা কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ নবীগঞ্জে মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লোকবীমা ডিভিশনের (কোড নং-১০২) বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ জেলার কতিপয় কর্মকর্তার মদদে ব্যাপক দুর্নীতি ও অমিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষুদ্র বীমার মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ১০ বছর পর দ্বিগুন টাকা প্রদানের লোভনীয় অফার দিয়ে বীমা শুরু করে মেয়াদ পুর্তির শেষে যথাযথ সময়ে গ্রাহকদের টাকা দিতে নানা টালবাহানা করেন সংশ্লিষ্টরা। এতে শত শত গ্রাহক নানা হয়রানী ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। মাসের পর মাস বীমা অফিসে ধর্ণা দিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়া মাঠকর্মী থেকে বিসি পদে পদায়নরত বেদানা বেগমের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের হয়রানীসহ তাদের মেয়াদ পুর্তির টাকা ফেরৎ দেয়ার শর্তে নতুন পলিসি খোলার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও মেয়াদ পুর্তির টাকা বেয়ারার চেক’র মাধ্যমে গ্রাহকদের হাতে দেয়ার বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। হবিগঞ্জের জনৈক কর্মকর্তা চিনু দাশকে ম্যানেজ করে গ্রাহকের বেয়ারার চেক নবীগঞ্জ শাখার বিসি বেদানা বেগমের হাতে হস্তান্তর করা হয়। উক্ত চেক গুলো গ্রাহকদের হাতে না দিয়ে বেদানা বেগম পূবালী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখায় বীমার একাউন্ট (নং ৯১০-০) থেকে কখনও নিজে আবার কখনও পিয়ন যোগল রানী মালাকার এর মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে গ্রাহকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নতুন বীমা পলিসি খোলে হাজার টাকা রেখে অবশিষ্ট টাকা ফেরৎ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নবীগঞ্জ সদর মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ১০২নং কোডের মাঠকর্মী ও ইউনিট ম্যানাজার হিসেবে দেখানো হয়েছে বেদানা বেগমের বোন শিলুফা আক্তারকে। তার স্বামী আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন শাখা ম্যানাজার এবং বেদানা বেগম বিসি পদে দায়িত্ব পালনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর লোকবীমা ডিভিশন ক্ষুদ্র বীমার কর্মীরা মাসিক ১শত থেকে শুরু করে ১ হাজার পর্যন্ত কিস্তিতে ১০ বছরের জন্য বীমা করার সময় গ্রাহকদেরকে মেয়াদপুর্তিতে এর দ্বিগুন টাকা প্রদানের প্রতিশ্র“তি দেয়। সহজ সরল গ্রামীন জনপদের নারী পুরুষ গ্রাহকরা তাদের কথা বিশ্বাস করে অতিকষ্টে দ্বিগুণ লাভের আশায় টাকা জমা দেন। কিন্তু মেয়াদ পুর্তিতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। মাসিক ১শত টাকা করে জমা দিয়ে যেখানে ১০ বছরে গ্রাহকের আসল টাকা ১২ হাজারের সাথে মাত্র ৩ হাজার টাকা মুনাফা দেখিয়ে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদেরকে হবিগঞ্জ ব্রাঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে পুনরায় আরেকটি বীমা করার প্রস্থাব দেয়। যদি পুনরায় আরেকটি বীমা গ্রাহকরা করেন তাহলে তাদের মেয়াদপুর্তির বীমার টাকা বেয়ারার চেক’র মাধ্যমে প্রদান করবে বলে জানায়। এতে গ্রাহকরা রাজী না হলে তাদেরকে একাউন্টপেয়ী চেক প্রদান করা হয়। যার ফলে গ্রাহকরা মাত্র ১৫ হাজার টাকা উঠাতে গিয়ে নিজের নামে একাউন্ট খুলে আরো ১ হাজার টাকা প্রদানের ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। অপর দিকে হবিগঞ্জ ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা চিনু দাশের সাথে আতাত করে নবীগঞ্জ ব্রাঞ্চের বেদানা বেগম তার অধীনস্থ মেয়াদ পুর্তি গ্রাহকদের টাকার বেয়ারার চেক নিজের জিম্মায় নিয়ে আসেন। পরে ওই চেক দিয়ে তিনি আবার কখনও তার নিয়োজিত পিয়ন পুর্ব তিরিপুর গ্রামের যোগল রানী মালাকার’র মাধ্যমে পুবালী ব্যাংক নবীগঞ্জ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করেন। ওই টাকা থেকে গ্রাহকদের নামে নতুন পলিসি খোলার কথা বলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা রেখে বাকী টাকা দিয়ে বিদায় করে দেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। ফলে বীমা গ্রাহকদের হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উক্ত বেদানা বেগম এবং তার পিয়ন যোগল রানী মালাকার গত ১৯ এপ্রিল গ্রাহকদের ৯/১০টি বেয়ারার চেক দিয়ে কোম্পানীর ৯১০-০ নং একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। এ ব্যাপারে মেঘনা বীমা কোম্পানীর নবীগঞ্জ অফিসের বিসি বেদানা বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ সময় তার স্বামী উক্ত বীমা কোম্পানীর ব্রাঞ্চ ম্যানাজার আবুল কালাম আজাদকে মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী গ্রাহকদের কত ভাগ মুনাফা দেয় প্রশ্ন করলে তিনি যথাযথ জবাব দিতে পারেন নি। বেয়ারার চেক দিয়ে নিজে বা পিয়ন দিয়ে টাকা উত্তোলনের কথাও অস্বীকার করেন বেদানা বেগম। এ ব্যাপারে কথা হয় পিয়ন যোগল রানী মালাকারের সাথে। তিনি জানান, এ সব চেক দিয়ে তার ম্যাডাম বেদানা বেগমের কথায় মাঝে মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তোলে তার কাছে দেন। আবার ম্যাডাম বেদানা বেগমও নিজে গিয়ে ওই সব চেক দিয়ে টাকা তুলে আনেন। অপর একটি সুত্রে অভিযোগ রয়েছে মাঠকর্মী বেদানা বেগম উক্ত ইন্সুরেন্স কোম্পানীর বদৌলতে জিড়ো থেকে হিরো হয়ে উঠেছেন। অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। তিনি বর্তমানে বিসি পদে পদায়ন হওয়ায় নিজের বোনের নাম ব্যবহার করে একাই বীমার ৩টি পদ আখড়ে ধরে রেখেছেন। অপর একটি পদে তার স্বামী দায়িত্ব পালন করছেন। এনিয়ে গ্রাহক ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এলাকাবাসী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েছেন।


     এই বিভাগের আরো খবর