,

বানিয়াচংয়ে সাবেক চেয়ারম্যানের দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধার

সংবাদদাতা ॥ বানিয়াচংয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হুমাছুন কবীর রেজার দখল থেকে সরকারের ১৪ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে এগারটায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানার উপস্থিতে দখলকৃত এ জমি উদ্ধার করে ৫ টি দাগে মোট ১৮.৪৩ একর জায়গায় লাল নিশান দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে সরকারের এ খাস ভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা কৃষকলীগ নেতার বিভিন্ন স্থাপনা পরবর্তীতে উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা। পাশাপাশি এই ভূমি এখন থেকে পুরোপুরি সরকারের আওতায় চলে এসেছে এবং সকল ধরণের কার্যক্রম বন্ধেরও নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বানিয়াচং উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান, সার্ভেয়ার আমিনুল ইসলামসহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ।
জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুলতানপুর মৌজার এসএ জেএল নং-২০০ আরএস জেএল নং-২০৫, খতিয়ান নং-১ এর দাগ নং ৯১, ৯৩ ও ১৩৩ এর মোট ১৪ একর ৪৫ শতক ভূমি বিগত ১৯৮৮ সনে এলাকার ভূমিহীনদের নামে লীজ প্রদান করে উপজেলা ভূমি অফিস। কিন্তু লীজ দেয়ার পর উপরোক্ত ভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করে পতিত ফেলে রাখে ভূমিহীনরা। পরে ২০১০ সালে এলাকাবাসী ও ভূমিহীনদের মধ্যে এই ভূমি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে শফিক মেম্বার নামে এক এলাকাবাসী নিহত হয়। ঘটনায় আসামি করা হয় উক্ত ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমাছুন কবীর রেজাকেও। হত্যার ঘটনার বিষয়টি পরবর্তীতে সমাধান হলে এলাকার নিরীহ ভূমিহীনদের নানা প্রলোভন, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে পুরো ভূমিসহ কাগজপত্র নিয়ে নেন হুমাছুন কবীর রেজা।
প্রসঙ্গত, সরকারি খাস ভূমি দখল প্রসঙ্গে গত ২৫ নভেম্বর মক্রমপুর ইউনিয়নের কচুয়ারআব্দা গ্রামের এলাকাবাসীর পক্ষে জ্যোতির্ময় দাস নামে এক ব্যক্তি মাননীয় ভূমি মন্ত্রীর বরাবরে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও মক্রমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমাছুন কবীর রেজার বিরুদ্ধ একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করে রেকর্ড পত্রাদি আলোকে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় গ্রহণ করতে গত ৩ ডিসেম্বর ডেপুটি কালেক্টর রেভিনিউ (হবিগঞ্জ) ইয়াছিন আরাফাত রানা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবারে পত্রাদি প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার সীমানা নির্ধারণে লাল নিশান টাঙ্গিয়ে সরকারের কব্জায় নিয়ে আসে উপজেলা প্রশাসন।
এটা নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি বিভিন্ন খবরের কাগজে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুরো জেলা জুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হতে থাকে। হুমাছুন কবীর রেজা নিজেকে রক্ষা করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করতে থাকেন বিভিন্ন জায়গায়। ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। সংবাদ প্রকাশের পরের দিন হুমাছুন কবীর রেজা স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদের প্রতিবাদ জানান। পরে প্রতিবাদের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজরে আসলে পাল্টা বক্তব্য প্রদান করেন নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার জানান, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়েছে সেটা ছিল সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গা। সরকারি কোনো ভূমিতে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণ করতে পারেনা। উদ্ধারকৃত ভূমি এখন থেকে পুরোটাই সরকারি আওতায় চলে এসেছে। তবে কবে নাগাদ এই ভূমিতে গড়ে উঠা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে সেই বিষয়টি পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সহকারি কমিশনার (ভূমি) মতিউর রহমান খান জানান, এই খাস ভূমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রাম তৈরি করার জন্য খুব তাড়াতাড়ি উপর মহলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর