,

তামিমের সেঞ্চুরির পেছনে লুকিয়ে থাকা আবেগ

ময় গল্পসময় ডেস্ক ॥ সকালেই দুঃসংবাদটা পেয়েছিলেন। বড় ভাই নাফিস ইকবাল ফোনে খবরটা দিয়েছিলেন। পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন ফুপু ফাতেমা হোসেন, তামিম ইকবালের খুব কাছের একজন। ফুপুকে শেষবারের মতো দেখতে খুলনা থেকে রওনা হওয়ার চিন্তাও করেছিলেন। কিন্তু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। দলও কঠিক পরীক্ষার সামনে। আবেগটা বুকের মধ্যে পুষে রেখে মাঠেই খেলে গেলেন তামিম। প্রিয়জন হারানোর শোক হৃদয়ে, ওদিকে পাকিস্তানের রানের পাহাড়ের চোখ রাঙানি। তা-ই নয়। টেস্টে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতাও খুব একটা নেই। মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে মাঠটা সামলাতে হচ্ছে দুদিন ধরে। এত মানসিক চাপের মধ্যেও উপহার দিলেন প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেওয়া এক ইনিংস, পেলেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। যে সেঞ্চুরিতে ওলট-পালট হলো রেকর্ড বইয়ের বেশ কয়েক জায়গায়। সকালের সেই দুঃসংবাদের পর কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে জানিয়ে তামিম বললেন, ‘সকালে বড় ভাইয়ের ফোন পাই। খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- ব্যক্তি ছিলেন বাবা। তার খাওয়া-দাওয়ার খুব শখ ছিল। আমিও তা-ই। আমার এই ফুপু সব সময় রান্না করে খাওয়াতেন। ভারতের একটি রান্না-বিষয়ক টিভি অনুষ্ঠানে দেখানো একটা রেসিপির কথা তাকে জানিয়েছিলাম। তিনি রান্না করে দিয়েছিলেন। আব্বার সঙ্গে ওই খাবার ছিল শেষ খাওয়া। ওনার জন্য আমি সর্বোচ্চ যেটা করতে পারি, এ সেঞ্চুরিটা উৎসর্গ করতে পারি। আমরা একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম তার সঙ্গে। তার সন্তানেরাও আমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। অসুস্থ থাকলে না হয় সান্তনা ছিল। একেবারেই সুস্থ মানুষ, হুট করে চলে গেছেন। খুবই কষ্টদায়ক।’ কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না তামিম, ‘একপর্যায়ে সুজন ভাইকে (টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ) জিজ্ঞেসও করেছিলাম, আজ আমার ব্যাটিং শেষ হয়ে গেলে চলে যাব কি না। পরে ভাবলাম, গেলেও হয়তো জানাজা পাব না। আর খেলার মাঠে থাকলে এসব নিয়ে ভাবার খুব একটা সুযোগ থাকে না। যেহেতু এখানে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে। সবার আগে দেশ। তবে পরিবারও গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে খেলাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি এমন সুযোগ হতো, জানাজা পাব, তাহলে যেতাম।’ প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ৬২৮ রান তোলার পরও চাপে ভেঙে পড়েননি। আক্রমণই সেরা প্রতিরক্ষা এ নীতিতে এগিয়েছেন। ব্যাট করেছেন নির্ভার ভঙ্গিতে। তামিম জানালেন, ‘কোচ একটা কথা বলেছিলেন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের দিন। সেদিন যখন ৩০০ রান তাড়া করতে নামলাম, কোচ বললেন, স্কোরবোর্ডে তাকিয়ে লাভ নেই। ওখানে চাপ ছাড়া কিছু পাওয়া যাবে না। আমরা যদি ১৫০ ওভার খেলার চিন্তা করে ডিফেন্স করতে থাকি, হয়তো তারা আমাদের আউট করে দিত। আমরা চিন্তা করেছি, অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স। এ কারণে প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক খেলেছি। যে বলে ছয় মেরেছি কিংবা যে রিভার্স সুইপে চার মেরেছি, সে বলে যদি আউট হতাম, হয়তো কথা উঠত। এসব নিয়ে আমরা ভাবিনি। দুজনই পরিকল্পনা করেছিলাম, আক্রমণ করে খেলব। ওরা খুবই ভালো বোলার। বিশ্বমানের কয়েকজন বোলার আছে তাদের দলে। তারা পেয়ে বসলে সামলানো যাবে না। আমরা আমাদের পরিকল্পনায় সফল।’ দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। পরিণত তামিম বোঝেন, ধারাবাহিকতাটাই আসলে ক্রিকেটে সবচেয়ে বড়, ‘খুবই ভালো লাগে এমন অর্জনে। ফর্মটা ধরে রাখার চেষ্টা করব। দুই-তিন ম্যাচ ভালো খেলে যাতে থেমে না যাই, সেই চেষ্টা করব।’ ব্যাটসম্যান তামিম লেটার মার্ক পেলেও অধিনায়ক তামিম সেটা পাবেন না। নিজেও তা মানলেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সর্বশেষ যখন অধিনায়কত্ব করেছিলাম, সেই ম্যাচে সাঙ্গাকারা ৩০০ করল। চিন্তায় ছিলাম, আবার কেউ ৩০০ না করে ফেলে (হাসি)! আমি হয়তো ভালো সহ-অধিনায়ক। মুশফিককে দারুণ দারুণ কিছু আইডিয়া দিতে পারি। তবে অধিনায়কত্ব এমন জিনিস, যত করব, ততই শিখব। বোলিংয়ে আমরা একটু বেশি রান দিয়ে ফেলেছি। আমার আরও কিছু শেখার আছে।’ গতকালই বাংলাদেশ পেল একটি সুসংবাদ। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে আটে। এক সাংবাদিক প্রসঙ্গটা তুলতেই তামিম বেশ প্রত্যয় নিয়ে বললেন, ‘আমরা বোধ হয় সাতে। কারণ পয়েন্টে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমান। লক্ষ্য থাকবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ জায়গাটা ধরে রাখা। তাহলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে পারব।’ গতকাল প্রথম আলোয় নিজের কলামে র‌্যাঙ্কিংয়ের এ উন্নতি নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা লিখেছিলেন, ‘এই খবরটা খানিকটা চাঙা করে তুলবে দলের খেলোয়াড়দের। বাড়িয়ে দেবে আত্মবিশ্বাসও।’ সত্যি কি ব্যাপারটা টনিক হিসেবে কাজ করেছে? সংবাদ সম্মেলন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে জিজ্ঞেস করতেই তামিম কেবল হাসলেন। যার অর্থ হতে পারে ‘তা তো বটেই!’


     এই বিভাগের আরো খবর