,

করোনাভাইরাসের ডায়াবেটিসে বাড়তি ঝুঁকি

সময় ডেস্ক ॥ পৃথিবী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারিতে আক্রান্ত যা সার্স কোভ ২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। করোনাভাইরাসের শিকার যে কোনো মানুষই হতে পারেন; তবে ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা লোকদের এ ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। হার্ট ফেইলর, কিডনি ফেইলর, হাঁপানি ইত্যাদিতে যারা ভুগছেন তারাও অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছেন। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রোগ হলে তার সঙ্গে লডাই করার সক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে, একই সঙ্গে বসবাস করা অন্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস থাকলে আপনি চট করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার। মনেকরা হচ্ছিল শিশু-কিশোররা মনে হয় করোনায় খুব একটা আক্রান্ত হবে না; কিন্তু তাও আর বলা যাচ্ছে না। অন্য দেশে তো বটেই, বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আটজনের মধ্যে দুজনই শিশু। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) সঠিকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। অর্থাৎ যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি) তার রোগে ভোগার সম্ভাবনা তত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লোকোজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি (তাদের সবাই ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকিতে)। আবার যারা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়েই বেঁচে আছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও পর্যুদস্ত। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন যে সব ডায়াবেটিস রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট রক্ত পরিসঞ্চালনে ব্যর্থ এবং রক্তের গ্লোকোজ বেশি। বরাবরের মতো, সব ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের গ্লুুকোজের মাত্রায় নিয়ে আসা অতীব জরুরি এবং যারা মুখে সেবনের ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করতে থাকবেন, তার বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।
ডায়াবেটিস রোগীর আশু করণীয় :
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে হটলাইনে যোগাযোগ করা, রোগ শনাক্তকরণ ও পরবর্তী সেবার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কালক্ষেপণ না করে অতি সত্বর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে (এইচবিএওয়ানসি <৭%) যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া। যদি সিম্পটম হয়ে থাকে (জ্বর, কাশি) তাহলে নিজেকে নিজে আলাদা করাই শ্রেষ্ঠ। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভালো। ৮০% মানুষ কোনো হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াই ভালো হয়ে যাবে। ১৪ দিন নিজেকে আইসোলেট করে থাকবেন। বয়স্ক লোকজন এর মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করার কারণ আছে, কারণ তাদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। এবারের সবচেয়ে সমস্যা হলো লক্ষণহীন রোগীরা। জার্মানিতে অনেকে আছে যাদের পাওয়া গেছে কোনো কাশি নেই, কোন জ্বর নেই, কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। ইতালিতেও এমন অনেক পাওয়া গিয়েছে, এমনকি যুক্তরাজ্যেও। এ নিয়ে সবচেয়ে বড় ভয় এটাই যে একদম নর্মাল, ফিট মানুষজন করোনাভাইরাস নিয়ে ঘুরছে। এখন বলা যাচ্ছে না তাদের থেকে অন্যদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধোন, বেশি বেশি ধোন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হেক্সাসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘরের বাইরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও মুখে হাত দেবেন না যতক্ষণ না কোথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন।
বিদেশ ফেরতদের দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন করে দিন। ভালো হলে ভালো। কাশি বা জ্বর হলে আরও এক সপ্তাহ আইসোলেট করবেন। লোক সমাগম থেকে দূরে থাকাই ভালো। কোনো কনফারেন্স বা পার্টিতে যাবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সবচেয়ে বড়কথা আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে সব এখনো জানি না। নতুন নতুন তথ্য অনেক আসছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক
অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।


     এই বিভাগের আরো খবর