,

ওসমানী হাসপাতালেরে এ কেমন রূপ ??

সময় ডেস্ক : বিছানা ছাপিয়ে মেঝেতে-বারান্দায় শুয়ে থাকা রোগী, বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইন, হৈ-হুল্লোড়, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়, দালালদের দৌরাত্ম্য- সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মানেই তো এমন চিত্র। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এখন বদলে গেল মেডিকেলের চিরচেনা সেই দৃশ্য।   হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ, বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ সবই খোলা আছে। তবে শুধু নেই আগের সেই উপচে পড়া ভিড়। বরং অনেকটাই ফাঁকা হাসপাতাল। গত বুধবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধান ফটকে দেওয়া হয়েছে তালা। রোগী, চিকিৎসক, নার্স ছাড়া কাউকে ওয়ার্ডের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। অযাচিত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে সব সময় কাজ করছেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা। প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম হতো সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গেলেই দেখা যেত বেড ছাপিয়ে হাসপাতালের মেঝেতেও শুয়ে আছেন রোগীরা। চিরচেনা এ দৃশ্য এখন আর নেই ওসমানী হাসপাতালে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর ওসমানী মেডিকেল জনসমাগম কমতে শুরু করে। এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে হাসপাতালের পক্ষ থেকে। সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের বিভিন্ন দেয়ালে ‘সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ার ও দর্শনার্থী নিষেধ করা হইলো’ মর্মে বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়েছেন। বহির্বিভাগেও নেই রোগীদের লম্বা লাইন। জরুরি বিভাগে প্রায় ১০ জনের মত রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পরই দায়িত্বরতরা তাড়াতাড়ি এই স্থান ছাড়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। উৎসুক বা অযাচিত কাউকে দেখলে হাসপাতালের দায়িত্বরত তাদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করছেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের মাঝখানের ফটকটি খোলা রাখা হয়েছে। সার্জারি বিভাগ, লেবার বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, ডায়াবেটিস থাইরয়েড ও হরমোন বিভাগ কার্ডিওলজি বিভাগ, নেফ্রলজি বিভাগসহ প্রায় সব বিভাগের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। ফটকের সামনে নিরাপত্তা কর্মীরা অবস্থান করছেন। অযাচিতভাবে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। হাসপাতালের স্টাফরা পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন। ওসমানী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আগে প্রতিদিন শুধুমাত্র বহির্বিভাগে তিন থেকে চার হাজার রোগী আসতেন চিকিৎসা নিতে। তাদের সাথের এটেন্ডেন্ট সহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের সমাগম থাকতো মেডিকেলের বহির্বিভাগে। তবে দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব বিস্তারের পর রোগী আসা কমে গেছে। এখন বহির্বিভাগে রোগী আসেন সাত থেকে আটশত জন। বেলা ১টার ভেতরে খালি হয়ে যায় বহির্বিভাগ। গত বুধবার বহির্বিভাগে সেবা নিয়েছেন মাত্র ৪৮০ জন।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন প্রায় ২৪শ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৮৬জন, সোমবার ভর্তি হয়েছেন ১৯৫ জন, মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন ১৩৮ জন। বুধবার হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি আছেন ৬৮৯ জন। এর মধ্যে জরুরী বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১১২ জন, প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন।   সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, আমাদের হাসপাতালের সকল বিভাগ খোলা আছে। আমরা সব ধরণের সেবা দিচ্ছি। কারণ মানুষের একটা ভরসার জায়গা থাকতে হবে। তবে হঠাৎ করেই হাসপাতালে রোগী আসা কমে গেছে। মানুষজন বুঝতে পারছেন যে জনসমাগম এই ভাইরাস ছড়াবে। তাই জনসাধারণও কম বের হচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ এই ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সোশ্যাল ডিস্টেন্স কোনো বিকল্প নেই। তাই হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ার ও দর্শনার্থী নিষেধ করে আমরা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়েছি। করোনাভাইরাসের বিস্তারের ঠেকাতে হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের মধ্যে যাদের অপারেশন ২ মাস পর করলেও হবে তাদের এখন হাসপাতালে আসতে নিরুৎসাহিত করছি। 


     এই বিভাগের আরো খবর