,

‘না খেয়ে আছি খাবার পাঠান… বাসায় খাবার পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ

সময় ডেস্ক : ‘স্যার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন- আমার বাসায় কিছু চাল, ডাল, তেলসহ কিছু পাঠানো যাবে? বিকেল থেকে না খেয়ে থাকতে হবে। হাতে কোনো টাকা-পয়সাও নাই। মোবাইল ফোনে ১২ টাকা ব্যালান্স আছে।’ রাজধানীর মিরপুরের মধ্যপাইকপাড়ার এক বাসিন্দা গত সোমবার পুলিশের দারুস সালাম জোনের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকীর সরকারি মোবাইল ফোনে এই বার্তা পাঠান। এলাকাটি তার আওতায় না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সেই বার্তা পাঠিয়ে দেন নিজেদের অভ্যন্তরীণ মেসেঞ্জারে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই মিরপুর থানার ওসির মাধ্যমে সেই বাসায় চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও লবণ নিয়ে হাজির হয় পুলিশ।
মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘মধ্যপাইকপাড়ার ওই বাসিন্দা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিন মাস আগে তার চাকরি চলে যায়। এরপর থেকে তিনি সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত কয়েকদিন সবকিছু বন্ধ থাকায় একেবারেই খাবার ফুরিয়ে যায় তার।’
ওসি জানান, মঙ্গলবারও শাহআলীবাগ থেকে এক ব্যক্তির বার্তা পান। সেখানে লেখা ছিল- ‘পরিবার নিয়ে অভুক্ত আছি। খাবারের সহায়তা না পেলে বেঁচে থাকা কষ্টকর হবে।’ তার বাসায়ও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, পুলিশসহ নানা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনই দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে। ঘরবন্দি এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের কেউ ফুটপাতের বিক্রেতা, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউ টিউশনি করে সংসার চালাতেন। তাদেরও সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। দৈনিক রোজগার না থাকায় এসব মানুষের ঘরের খাবারও শেষের পথে। ঘরবন্দি এসব মানুষ এখন বড় বিপদে রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা একটু সচেতন, তারা পুলিশের নম্বরে ফোন দিয়ে সহায়তা নিচ্ছেন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের পক্ষে তো আর সবাইকে সহযোগিতা করা সম্ভব নয়। সবারই এসব মানুষের কথা ভাবতে হবে।
দেশের বিভিন্ন এলাকার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু খাবার ফুরিয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের এসব মানুষ ছাড়াও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে যারা নিয়ম মেনে ঘরবন্দি রয়েছেন, তাদের ঘরেও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। তারা ফোন দিলেও পুলিশের টিম তা কিনে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। পণ্য পৌঁছে দেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা টাকা এনে দোকানিকে দিচ্ছেন। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত যারা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, ফোন করেও তাদের খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। তাদের ওষুধ বা খাবারের প্রয়োজন হলে তা কিনে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবার ঘরে থাকা এবং তালিকাভুক্তদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। এ ছাড়া মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও প্রায় অভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ- ‘আপনি ঘরে থাকুন, খাবার যাবে আপনার কাছে’ বা ‘অন ডিমান্ড’ কার্যক্রমের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ কিনে তা পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। এর মধ্যে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর থেকে সিএমপি শুরু করেছে- ‘আপনি ঘরে থাকুন, দোকানই যাবে আপনার কাছে :ডোর টু ডোর শপ’ কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘আমরা একটি ফোন নম্বর পুরো নগরীতে ছড়িয়ে দিয়েছি। সরকারি নির্দেশ মেনে বাসায় অবস্থান করা বাসিন্দারা ওই নম্বরে ফোন করে তাদের ঠিকানা ও পণ্যের চাহিদা জানাচ্ছেন। সংশ্নিষ্ট থানা এলাকার ওসিকে সেই চাহিদাপত্র ও বাসার ঠিকানা পাঠানোর পর দ্রুততম সময়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে বাসিন্দার কাছে।’
তিনি বলেন, এ জন্য তাদের কয়েকটি দোকান ঠিক করা রয়েছে। ওইসব দোকান থেকে পণ্য কিনে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের যারা এই কাজে যুক্ত, তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসামগ্রী ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফোন পেলে অসুস্থ রোগীদেরও পুলিশের গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সিএমপির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ০১৪০০-৪০০৪০০ নম্বরে লোকজন ফোন দিয়ে পণ্যের সেবা পাচ্ছেন। এই নম্বরে দৈনিক গড়ে এক হাজার ব্যক্তি ফোন দিয়ে সেবা চাচ্ছেন। এ জন্য বুধবার থেকে ০১৮৮০-৮০৮০৮০ নতুন একটি নম্বর চালু করা হচ্ছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে সবাইকে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দৈনিক মাত্র ২০০ ব্যক্তিকে পুলিশের পক্ষ থেকে এই সেবা দেওয়া যাচ্ছে। অন্য ব্যক্তিদের বলে দেওয়া হচ্ছে, তাদের এলাকায় কোথায় কোন দোকান খোলা রয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘জেলায় তালিকাভুক্ত যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যারা সরকারি নির্দেশনা মেনে বাসায় রয়েছেন, তারা সংশ্নিষ্ট থানার ওসিকে ফোন করে চাহিদা দিলে পুলিশ তাদের খাবার কিনে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। এর পরও আমরা চাচ্ছি, নির্দিষ্ট সময় প্রবাসী ও সাধারণ মানুষ ঘরে থাকুক।’


     এই বিভাগের আরো খবর