,

নবীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর উপহার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে চলছে ধান কাটা 

মতিউর রহমান মুন্না : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বোরে ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে হাওরের প্রায় ৬৫ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। এবার দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে চলছে ধান কর্তন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হাওরবাসীর জন্য সনাতন পদ্ধতির বাইরে ভর্তুকি দিয়ে এই ডিজিটাল সেবা ব্যপকভাবে চালু হওয়ায় খুশি কৃষকরা। এদিকে কৃষকদের পাশে থাকতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন বদ্ধ সংকল্পবদ্ধ। ধান কর্তনে জেলা প্রশাসনের উদ্যাগেও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রমিক সংকট রোধ, জরুরী ভিত্তিতে ধান কাটার পরামর্শ, বাহিরের শ্রমিকদের জন্য খাদ্যসহায়তা ও স্বাস্থ্যঝুককি কমাতে মাঠ পর্যায়ে নানা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ^জিত কুমার পাল প্রায়ই বিভিন্ন হাওরে গিয়ে কৃষকদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলায় এবার ১৭ হাজার ৭শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আগাম বন্যা বা অন্য কোন দূর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে শতকরা ৮০ ভাগ পাকলেই এই ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে গত ২০ এপ্রিল থেকে পুরোদমে বোর ধান কাটা শুরু হয়েছে। দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১৫ টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বরাদ্দ হয়েছে এ উপজেলায়। তাই সোনার ফসল তুলতে কর্মযজ্ঞ চলছে জোরেশোরে। শ্রমিক সংকটের সমস্যা  দূর করছে এই কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে একদিনেই প্রায় ৫ একর জমির ধান কাটা মাড়াই করা যায়।
উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় এক একর জমিতে ধান কাটা মাড়াই করতে সব মিলিয়ে শ্রমিকের খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো লাগে। তাও এখন করোনার মহামারির মাঝে শ্রমিক পাওয়া যায় না। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াই ও বস্তাবন্দি করে বাড়িতে বহন করা যায় ৬/৭ হাজার টাকার মধ্যে।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.কে.এম মাকসুদুল আলম বলেন – আবহাওয়া অনুকুলে হওয়ায় এ বছর নবীগঞ্জ উপজেলায় ভালো ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগাম বন্যা, ভারী বৃষ্টিপাত থেকে বোর ধান রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে  শ্রমিক সংকট রোধ, বাহির জেলা হতে শ্রমিক সংগ্রহ করা হয়েছে। এমনকি প্রত্যেক ইউনিয়নে শ্রমিকদের তালিকা করে দল গঠন করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ তমিজউদ্দিন খান বলেন- মাঠে ফলন ভাল হয়েছে। কোথায় কোন সংকট নেই। জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের কে ত্রান প্রনোধনা দিচ্ছেন তাতে শ্রমিকরা উৎসাহ পাচ্ছে। কৃষি বিভাগ মনিটরিং করছেন। ৮০ ভাগ ধান পাকতে সময় লাগবে প্রায় ১৫ থেকে ২০ দিন। তবে ধান কাটা চলছে মেশিনের ও শ্রমিকের কোন সমস্যা নেই।
সম্প্রতি নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওর পাড়ে গিয়ে খোঁজ খবর নেন হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এসময় তিনি শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উদ্যোগ, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ধান কাটার পরামর্শ দেন। পরে শ্রমিকদের মাস্ক, সাবান, তেল, চাল, আলু সহ নিত্য প্রযোজনীয় খাবার প্রদান করেন। যাতে কৃষকরা শ্রমিক নিয়ে  সংকটে না পড়ে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন- সামান্যতম ফসলের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে এবং নেওয়া হয়েছে সমন্বিত উদ্যোগ। শ্রমিক সংকট লাগব করতে মৌসুমী বেকার শ্রমিকদের তালিকা করা হয়েছে। তিনি বলেন- আবহাওয়া ভাল রয়েছে আশাকরি কৃষক ধান ঘরে তুলতে পারবে। শ্রমিক সংকট নেই। সংকটের ব্যাপরে অবগত করলে তাৎক্ষনিক সমাধান হচ্ছে। প্রশাসন রয়েছে সজাগ।এদিকে কৃষকগন জানান- জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে তারা খুশী। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তারা কাজ করতে কোন সমস্যায় পড়ছেন না। তবে কাজ শেষে ঘরে ফেরা ও ফসলের মাঠে আসা যাওয়াতে পরিবহন সংকট রয়েছে। কৃষকদের সকল সমস্যা সমস্যা সমাধান করতে কৃষি বান্ধব সরকারকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান সচেতর মহলের।


     এই বিভাগের আরো খবর