,

করোনা যুদ্ধে নবীগঞ্জের বীর সৈনিকরা

জাবেদ তালুকদার : করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) কে মহামারি হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। আমাদের নবীগঞ্জেও এসে হানা দিয়েছে মহামারী এই ভাইরাস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও আজ করোনা মহামারিতে থমকে গেছে। এই মহামারি ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক এখনো আবিস্কার হয়নি। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই ভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব। এই ভাইরাসের আতংকে যেখানে সবাই নিরাপদে বাসায় থাকার কথা সেখানে নবীগঞ্জের কিছু বীর যুদ্ধারা করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবেলায় জনগনের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিজের জীবন বাজি রেখে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন যাদের কথা না বললেই নয় এমন কিছু বীর যুদ্ধাদরে নাম ও তাদের সংক্ষিপ্ত কিছু কার্যক্রম দৈনিক হবিগঞ্জ সময়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
গাজী শাহ নেওয়াজ মিলাদ (এম.পি) : যেখানে পুরো বিশ্ব আজ ঘর বন্ধি সেখানে নবীগঞ্জের মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই বীর সৈনিক। জনগনকে নিরাপদ রাখতে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। দিন এনে দিন খাওয়া অসহায়-গরীবদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন তিনি। যারা কারো কাছে হাত পাততে পারে না এমন মধ্যবিত্তদেরকে গোপনে সহায়তা দিচ্ছেন তিনি। করোনার ঝুকিতেও সাধারণ মানুষের ধারে ধারে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই যোদ্ধা।
জানা গেছে, পরিবার-আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু বান্ধবদের সহায়তায় তিনি এ পর্যন্ত সাড়ে ৬ হাজার পরিবারকে সহায়তা দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে তিনি করোনা রোগীদের বহনের জন্য ও করোনা ভাইরাসের কাজে ব্যবহারের জন্য নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ-কমপ্লেক্সে একটি গাড়িও দান করেছেন এমপি মিলাদ গাজী।
সূত্রে প্রকাশ, করোনা আক্রমনের ঠিক আগে তার এক কন্যা সন্তান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের দিল্লিতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বর্তমান অবস্থার জন্য সন্তানের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। শুধু তাই নয় সন্তানের চিকিৎসার জন্য রাখা অর্থ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ টাকা গরীব-অসহায়দের সাহায্য দেয়ার জন্য তিনি খরচ করে ফেলেছেন। তিনি নবীগঞ্জ ও বাহুবলের স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যান্যদের জন্য পিপিই, হ্যান্ড গ্লাবস, মাস্ক ও বিপুল পরিমাণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন।

আলহাজ্ব ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম (নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান) : নবীগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবেলায় জনগনের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিজের জীবন বাজি রেখে দিনরাত পরিশ্রম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সমন্বয় করে নবীগঞ্জের আইনশৃংখলাকে গতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন। দিনরাত ত্রান নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষের পাশে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার-বিশ্বজিত কুমার পাল : নবীগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবেলায় নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল। হটলাইনের মাধ্যমে এস.এম.এসের ব্যবস্থা করেছেন। হটলাইনে এস.এম.এস দিলে অতি গোপনে গরীব-অসহায় মধ্যবিত্তদের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন এই যোদ্ধা। উপজেলায় সনাক্তকৃত সব করোনা রোগীদের থেকে সাধারণ মানুষদের নিরাপদ রাখতে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সনাক্তকৃত করোনা রোগীদের তিনি হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে প্রেরণ করছেন এবং তাদের বাড়ি লকডাউন করে লাল পতাকা টানানোর ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলার সর্বোচ্চ সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ত্রান বিতরন থেকে শুরু করে সকল কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাতেও থাকে মাঠে কাজ করতে দেখা যায়। করোনা মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ২মাসেরও অধিক সময় ধরে মাইকিং থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও সচেতনতামূলক প্রচারনা চালিয়ে যাচ্চেন। লক্ষনীয় একটি বিষয় তিনি এ যাবৎকালে যত সরকারী ত্রান নবীগঞ্জে এসেছে এবং তিনি তা বিতরন করেছেন তার সবকিছুই তিনি ফেইসবুকে প্রচার করেছেন এতে তার সচ্ছতা এবং জবাবদিহীতার বিষয়টি জনগণের কাছে স্পস্ট। তিনি যে তার দায়িত্ব পালনে কোন অনিয়ম বা দুর্নিতীর আশ্রয় নেননি তার প্রমান তিনি নিজেই তার ফেইসবুকে সমস্ত কর্মকান্ড তুলে ধরার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান চোখে দেখে কাজ করে যাচ্ছেন।

(সহকারি কমিশনার (ভুমি)) সুমাইয়া মমিন :
নবীগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবেলায় নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সহকারী ভুমি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট সুমাইয়া মমিন। হোম কোয়ারেন্টাইন এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে দিন রাত নবীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যেক এলাকায় মনিটরিং করে আসছেন। সরকারী নির্দেশ মোতাবেক উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছেন। নির্দেশ অমান্যকারী ব্যক্তি যেই হোক তার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করায় ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ঈদের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জরিমানা করেন সুমাইয়া মমিন। প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করায় গত ১৭ মে, কাজির বাজারের এক ইউপি চেয়ারম্যান এর প্রতিষ্ঠানেও অর্থদন্ড প্রধান করেন এসিল্যান্ড সুমাইয়া মমিন। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে যাতে নবীগঞ্জের মানুষ হিমশিম না খায় এজন্য তিনি নবীগঞ্জের মানুষের কথা চিন্তা করে অভিযানের সময় সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করে দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার ভিতরের রাখতে কঠোর ভূমিকা পালন করেছেন। পবিত্র রমজান মাসেও তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

মোঃ আজিজুর রহমান (ওসি) : করোনা মোকাবিলায় নিজের জীবন বাজি রেখে করোনা যুদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমান। পবিত্র রমজান মাসেও প্রতিদিন সকাল-সন্ধা-রাত নবীগঞ্জের মোড়ে মোড়ে পুলিশ টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওসি আজিজুর রহমানের ভাষ্য করোনা একটা যুদ্ধ আমাদেরকে এই যুদ্ধ জয় করতে হবে। দিনরাত টহলের পাশাপাশি গোপনে কর্মহীন গরীব-অসহায়দের মাঝে প্রশাসনের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি এছাড়াও গরীব-অসহায়দের তালিকা তৈরী করে রাতের আধারে নিজ তহবিল থেকে তাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী ও সহায়তা তুলে দিচ্ছেন এই করোনা যোদ্ধা।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গত ১৮ মে, নবীগঞ্জের গজনাইপুর ইউনিয়নে ৫০০ টাকা ধার নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের চুরিকাঘাতে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ নিহত হন। নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে ঘটনার দিনেই ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও পানিউমদা ইউনিয়নে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষন মামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আজিজুর রহমানের নেতৃতে ধর্ষককে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। শুধু ওসি আজিজুর রহমান নয় নবীগঞ্জ থানার প্রত্যেক পুলিশ অফিসারই করোনা মোকাবিলায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্চেন।

ক্যাপ্টেন শিহাবুজ্জামানের নের্তত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল নবীগঞ্জের মানুষকে ঘরবন্ধি রাখতে ও সচেতন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের ডাক্তাররাও করোনা মোকাবেলায় পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের ৪ জন স্বাস্থকর্মী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা তাদের সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও এই কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে সাংবাদিকরা মানুষের কাছে সঠিক সংবাদ তুলে ধরতে নিঃস্বার্থভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এছাড়া সাংবাদিকরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও অংশ নিচ্ছেন।
নিজেদের জীবনের কথা চিন্তা না করেও যারা জনগনের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছেন জাতি তাদেরকে কখনো ভুলবেনা। এদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো ভাষা এই প্রতিবেদকের জানা নেই। এদের উপকারের প্রতিদান দেওয়ার মত কিছু আমাদের কাছে নেই। চিরদিন আল্লাহর কাছে এই বীর যোদ্ধাদের জন্য দোয়া করে যাব। আল্লাহ যেন এই বীর সৈনিকদের এই মহান কাজের উসিলায় তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।


     এই বিভাগের আরো খবর