,

নবীগঞ্জে ১০ টাকা কেজি দরের চালের তালিকায় ভুয়া নাম দিয়ে হরিলুট

মতিউর রহমান মুন্না : নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণের তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকায় একই ব্যক্তির নাম রয়েছে একাধিকবার, রয়েছে অনেক ভ‚য়া নাম। যে গ্রামে কোন হিন্দু পরিবার নেই, তালিকায় সেই গ্রামে দেখানো হয়েছে হিন্দু উপকারভোগীর নাম। এমনকি পিতা মুসলমান-ছেলে হিন্দু, আবার কোনটায় স্বামী মুসলমান-স্ত্রী হিন্দু এমন নামও রয়েছে তালিকায়। এছাড়া মৃত ব্যক্তিদের নামও রয়েছে। এমন অনিয়মকে অনেকেই বলছেন- ্#৩৯;এ যেন হরিলুটের মহোৎসব!
এদিকে তালিকা যাচাই করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অনুসন্ধানে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি দরের চাল প্রাপ্তির তালিকায় মোট উপকারভোগী ১ হাজার ১৮৫ জনের নাম রয়েছে। ২০১৬ সালে ওই তালিকাটি প্রণয়ন করা হয়। তখন থেকে উপকারভোগীদের চাল পাওয়ার কথা থাকলেও অনেকেই পাননি সে সুবিধা। একটি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া গেছে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র। এ যেন কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে এলো। তালিকা যাচাইয়ে দেখা যায়, কোন কোন নাম ৩/৪ বার করে তালিকায় রয়েছে। এদেরই একজন কুটি মিয়া। বাড়ি ইউপি চেয়ারম্যানের নিজ গ্রাম সাতাইহালে। তার নাম রয়েছে তালিকার ক্রমিক নং ৬৬৬, ৬৮০, ৭২০, ১০৭৩ অর্থাৎ ৪ বার। এরকম আরো অনেকের নাম রয়েছে। একাধিকবার নাম প্রায় ৫০টির মতো রয়েছে তালিকায়। এছাড়াও রয়েছে কয়েকজন মৃত ব্যক্তির নামও। কয়েকটি গ্রামে হিন্দু পরিবার না থাকলেও দেয়া হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভ‚য়া নাম। তালিকায় রয়েছেন অথচ একবারও চাল পাননি, এমন লোকের সংখ্যাও অনেক। আলোচিত এই তালিকাটির ৪৯৯নং থেকে ৫০৮ পর্যন্ত কয়েক জনের নাম রয়েছে সুবিধাভোগী হিসেবে। রাইধনী সরকার, বিজু সরকারসহ কয়েকজনের নামের পাশে গ্রাম লেখা রয়েছে তারালিয়া। তালিকাটি নিয়ে তারালিয়া গ্রামে গিয়ে জানা গেল- গ্রামটিতে শুধু গোপ সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস করে। তালিকায় যে নাম রয়েছে গ্রামবাসী কাউকেই চিনেন না। তাদের দাবী নামগুলো ভুয়া। এই গ্রামের প্রায় ২২ জনের নাম রয়েছে তালিকায়, বাস্তবে চাল পায় ৩ জন। বাকি নাম গুলো ব্যবহার করে সংশ্লিষ্টরা চাল আত্মসাৎ করেছেন। এমনটাই বললেন গ্রামবাসী। তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকজন মৃত ব্যক্তির নাম। তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও আলাপ করে জানা গেছে তারা জীবিত থাকতেও কোন সময় চাল পাননি, মারা যাবার পরও তারা জানেনই না যে তালিকায় নাম আছে। যে গ্রামের নামে ইউনিয়নের নাম, সেই গজনাইপুর গ্রামে নেই কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের বসবাস। ওই তালিকায় অনিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অনিয়ম হিসেবে যেটা নিয়ে মানুষ সমালোচনা করছেন সেটা হলো- স্বামী মুসলমান-স্ত্রী হিন্দু, পুত্র হিন্দু- পিতা মুসলমান। অনেকেই হয়তো ভাবছেন এটা কি করে সম্ভব? বাস্তবে এমন অসম্ভবকেও সম্ভব করা হয়েছে গজনাইপুর ইউনিয়নের এই তালিকায়। তালিকার ৫৮২নং থাকা নাম আঃ আহাদ, পিতা: পিরিজা সরকার। ৫৮৬নং মহেশ সরকার পিতা: সুনুজ উল্লা। ৫৯২নং স্বরসতী সরকার, স্বামী আকবর মিয়া। অর্থাৎ এই পরিবারের দুই সম্প্রদায়ের লোক! বাস্তবে না হলেও এই তালিকাতে এমটাই লেখা হয়েছে।
গজনাইপুর ইউনিয়নের কয়েকজন ইউপি সদস্যদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, তারা ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে তালিকায় ৫০টি করে নাম দিয়েছেন। বাকি নামের কোন কিছুই তাদের জানা নেই। তারা নাম দেন নি, এমনকি নিজ এলাকার ভূয়া নামে ভরা এই তালিকা দেখে রিতিমত তারাও ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে গজনাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সকলের সমন্বয়ের মাধ্যমেই করা হয়েছে এ তালিকা। তিনি এটাকে আমাদের একটা গাফিলতিও বলা যায়। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে, প্রত্যেক ইউনিয়নের ইউনিয়ন খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি হচ্ছেন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল ওই ইউনিয়নের খাদ্য বান্ধব কমিটির সভাপতি। চেয়ারম্যানের মূল দায়িত্বই হচ্ছে ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চালের সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো। এই তালিকা প্রণয়নে যদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কোনো অনিয়ম করে তাকেন তাহলে সেটা তদন্তে উঠে আসবে। ইউনিয়ন পরিষদের শুধু চেয়ারম্যান নয় আরো কেউ যদি জড়িত তাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার বরাবর লিখিত দিবো। উল্লেখ্য, ওই ইউনিয়নের দুই ভাগে খাদ্যবান্ধব কর্মস‚চির চাল পরিবেশনের দায়িত্বে রয়েছেন দুজন ডিলার। লিটন চন্দ্র দেব ও মনর মিয়া। নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ডিলার লিটন চন্দ্র দেবের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর