,

চুনারুঘাটে মামলার আসামী আপন ভাইয়ের রামদা’র কুবে খুন হলেন বাদী বকুল মিয়া

চুনারুঘাট প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মামলার আসামী আপন ভাই ফজলু মিয়া ও ভাতিজা ফয়সল মিয়ার দায়ের কুবে খুন হলেন মামলার বাদী বকুল মিয়া। জানা যায়, আজ বুধবার বিকেলের দিকে চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আমু চা বাগান সাওতাল লেন বাঁশ বাড়ি এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার পিতা-পুত্র ফজলু মিয়া ও ফয়সল মিয়াকে আটক করেছে থানা পুলিশ। নিহত বকুল মিয়া উপজেলার দেওরগাছ ইউনিয়নের ঝুড়িয়া বড়বাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের পুত্র। তিনি একজন নিরীহ প্রতিবন্ধী ও দিনমজুরী ছিলেন। জায়গা-জমি সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপন ভাই ফজলু মিয়া গংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বকুল মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার বিকেলে প্রতিবন্ধী বকুল মিয়াকে আমু চা বাগানে একা পেয়ে ফজলু মিয়া ও তার ছেলে ফয়সল মিয়া ধারালো রামদা দিয়ে বকুল মিয়ার দু পায়ে ও ডান হাতে কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। এসময় আমু চা বাগানের শ্রমিকরা চুনারুঘাট থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ফজলু মিয়া ও তার ছেলে ফয়সল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন এবং ঘোরতর আহত বকুল মিয়াকে চুনারুঘাট হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার বকুল মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে চুনারুঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) চম্পক দাম ঘটনা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় ০২ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন বকুলের বড় ভাই ফজলু মিয়া ও তার ছেলে ফয়সল মিয়া। উল্লেখ্য যে, গত ৩ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঝুড়িয়া বড়বাড়ি গ্রামে বকুল মিয়া ও তার স্ত্রী ছুকেরা খাতুন বাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করাবস্থায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে বকুল মিয়ার সাথে তার ছোট ভাই সবুজ মিয়া কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ঘর থেকে ধারালো অস্ত্র দা এনে বড় ভাই বকুল মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় বকুল মিয়ার স্ত্রী ছুকেরা খাতুন বাধা দিলে সবুজ মিয়া দা দিয়ে কুপিয়ে ছুকেরা খাতুনের দুই হাতে ও দুই পায়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বকুল মিয়া ৬ জনকে আসামী করে বিজ্ঞ আদালতে সি.আর ১০৫/২০ মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চুনারুঘাট থানাকে এফ.আই.আর গণ্যের আদেশ দিলে চুনারুঘাট থানায় মামলা রুজু হয়। চুনারুঘাট থানার মামলা নং- ১৩, তাং-১২/০৩/২০২০ ইং, জি.আর নং- ৬১/২০ (চুনা:)। মামলার আসামীরা হল- ঝুড়িয়া বড়বাড়ি গ্রামের মৃত হাসিম মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া, কাজল মিয়া, সবুজ মিয়া, ফজলু মিয়া, বিলাল মিয়া, জমিলা খাতুন। মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার আসামীরা বাদী প্রতিবন্ধী বকুল মিয়া ও তার স্ত্রী ছুকেরা খাতুনকে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। বকুল মিয়ার সাথে তার আপন ভাই সবুজ মিয়া গংদের দীর্ঘদিন যাবত জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে বুধবার বিকেলে ফজলু মিয়া ও ফয়সল মিয়া বাদী বকুল মিয়াকে ক্ষত-বিক্ষত করে খুন করে। বকুল মিয়ার মামলা দায়েরের ০৪ মাস অতিক্রান্ত হলেও মামলার আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরে ছিল। তারা প্রায়সময়ই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদী বকুলকে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দিত। এদিকে অসহায় প্রতিবন্ধী পরিবারটি তাদের নিরাপত্তার জন্য বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, হবিগঞ্জ ফৌ: কা: বি: ১০৭ ধারায় ফজলু মিয়া সহ ৭ জনকে আসামী করে একটি মামলাও করেছিলেন। আসামীদের প্রাণনাশের হুমকি-ধামকির ফলে বকুল মিয়া তার নিরাপত্তার জন্য চুনারুঘাট থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন, যার নং- ২৭৪/১৬, তাং- ৭/৪/১৬। ইতিপূর্বেও ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধী বকুল মিয়াকে তার ভাই ফজলু মিয়া, ফজলু মিয়া, ফয়সল মিয়া, মানিক মিয়া ও কাজল মিয়া গংরা কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। উক্ত ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাছাড়া ফজলু মিয়া গংদের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী বকুল মিয়া বাদী হয়ে গত ২০১৬ সালে একটি দ্রুত সি.আর মামলা দায়ের করেন, যার নং- ০৮/১৬, ০৪/১৬। নিহত বকুল মিয়ার পরিবারের ০১ স্ত্রী, ০২ ছেলে ও ০১ মেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।


     এই বিভাগের আরো খবর