,

মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষার দাবি জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) এর

বদরুল আলম চৌধুরী : রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ, খাদ্য, চিকিৎসা ও পুর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করার এবং গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুতি ও পিপিপি এর মাধ্যমে মিল পরিচালনার মত জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল, ছাঁটাই, লোফ, চাকুরিচ্যূতি বন্ধ, বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা, বছরে এক বা একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, অতিরিক্ত গাড়ী ভাড়া বাতিল, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও মিডিয়া কর্মীদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা শাখা। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস জনিত দূর্যোগ ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শহরের মনুসেতু সংলগ্ন কার্যালয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।
এনডিএফ মৌলভীভাবাজার জেলা কমিটির সভাপতি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ সোহেল আহমেদ, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ তারেশ বিশ্বাস সুমন, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন কালেঙ্গা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মোঃ গিয়াস মিয়া, হোটেল শ্রমিক নেতা মোঃ জামাল মিয়া, রিকশা শ্রমিকনেতা মোঃ দুলাল খাঁ প্রমূখ। সভায় বক্তারা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ আখ্যায়িত করে বলেন চলমান দূর্যোগময় মূহূর্তে শ্রমিকদের পাশে দাড়ানোর পরিবর্তে সরকার শ্রমিকদেরকে রাস্তায় ঠেলে দিয়েছেন। সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থাসমূহের নীতি নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে ধারাবাহিকভাবে অলাভজনক ও ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার চুড়ান্ত পদক্ষেপ হিসাবে পাটকল বন্ধ করা ও শ্রমিকদের কর্মহীন করে শ্রমিক পরিবার এবং পাটের নির্ভরশীল পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষুদ্র শিল্প, পাটচাষী ও পাটব্যবসায়সহ এক কোটি জনগণের জীবন ও জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন আমদানিকৃত কাঁচা মালের উপর ভিত্তিতে পরিচালিত নানা শিল্পকে জনগণের টাকায় প্রণোদনা ও আর্থিক সুযোগ সুবিধা দিয়ে চললেও জাতীয় শিল্প হিসাবে পাটশিল্পের যে সম্ভাবনা তাকে আমলে না নিয়ে জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত কার্যকর করে সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থা সমূহের নীতি নির্দেশ ও তাদের দালাল পুঁজির মালিকদের মুনাফার স্বার্থে পাটকলসমূহ বন্ধ করে দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সম্ভাবনাময় ও ঐতিহ্যবাহী জাতীয় স্বার্থের পরিপূরক পাটশিল্প ও এই শিল্পের শ্রমিকদের রক্ষা তথা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানান। নেতৃবৃন্দ সম্প্রতি পাস হওয়া বাজেটের সমালোচনা করে বলেন জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য’ তথা ‘এসডিজি’কে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি অবাধ বিনিয়োগের নামে বাজেটে লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির স্বার্থরক্ষা করায় শোষণ-লুন্ঠন আরো বেপরোয়া হবে। বাজেটে কালোটাকার সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে সকল সরকারের আমলের বাজেটই জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলা চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে সরকার ‘আপনার সুরক্ষা, আপনার হাতে’ শ্লোগান সামনে এনে কার্যত নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে যখন ব্যাপকভাবে সারাদেশে করোনা পরীক্ষা চালু করা উচিত তখন সরকার করোনা পরীক্ষার ফি জনগণের নিকট হতে আদায় করছে। কনোরা পরিস্থিতি কর্মহীন মানবেতর জীবনযাপন করা জনগণের নিকট তা ‘মরার উপর খাড়ার ঘাঁ’ তুল্য।
বক্তারা আরো বলেন দীর্ঘ সময় সাধারণ ছুটির নামে কার্যত দেশ অচল থাকায় এবং পরবর্তি সময়েও সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক অর্থনীতি চালু না হওয়া সত্ত্বেও সরকার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল প্রদানসহ অনেক ক্ষেত্রে জুলুম শুরু করেছে। এমনিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রাহকের উপার্জন নাই, হাতে টাকা-পয়সা নাই এমন সময় অনেকে অভিযোগ করছেন মিটার না দেখে ইচ্ছামতো বিল করা হয়েছে এবং অভিযোগ করতে গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা আমলে না নিয়ে বর্ধিত বিলটি পরিশোধ করতে বলছে। এ সময়ে পরিশোধিত বর্ধিত অর্থ পরবর্তিতে সমন্বয়ে কথা বলে গ্রাহকদের সাথে এক রকম তামাশা করছে সরকার। উপরন্তু যখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতনের সময়ে দেশে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য কমিয়ে করোনাজনিত পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষের জন্য পাশে দাড়ানো দরকার তখন সরকার বছরে একাধিকবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে সরকার যেমন জ্বালানি তেলের দাম কমাচ্ছে না তেমনি গণপরিবহন লাভের জন্য অধিক ভাড়া আদায় করেও বাড়তি যাত্রী বহন করছে।
এমতবস্থায় মহামারী-দূর্নীতি-ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় সর্বস্তরের জনগণের সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ, খাদ্য ও চিকিৎসার দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নাই । নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, করোনা মহামারীর সময়ও থেমে নেই আমেরিকা-চীন বাণিজ্য উত্তেজনাসহ সামরিক তৎপরতা, চীন-ভারত ও নেপাল-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা, আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে পুলিশ হেফাজতে হত্যা, প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা-গুলিবর্ষণ, গ্রেফতার, সৌদিজোটের ইয়েমেনে হামলা, ইসরাইলের সিরিয়া ও প্যালেষ্টাইনে হামলা। আজ তাই বিশ্বের দেশে দেশে শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণকে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে সমাজতন্ত্র ও আমাদের মত নয়াউপনিবেশিক আধাসমান্ততান্ত্রিক দেশগুলিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান। এমতাবস্থায় দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত এবং সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় দালাল শাসক-শোষকগোষ্ঠীর গণবিরোধী ভূমিকার স্বরূপ উন্মোচন করে জনস্বার্থে নিম্নরুক্ত দাবিতে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তাদের দাবিসমূহ হলো -সকল উপজেলায় ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যূনতম জেলা পর্যায় পর্যন্ত আইসিইউ বা নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ও ভেন্টিলেটরসহ সকল চিকিৎসা সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে, সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের সংস্থা সমূহের নীতি নির্দেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জাতীয়স্বার্থে পাটকলসমূহকে আধুনিকায়ন করে পূর্ণোদ্যোমে চালু করতে হবে, সকল শ্রমিক-শ্রমজীবী, বস্তিবাসী, ভূমিহীন-দরিদ্র কৃষকসহ নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য, কাজ, চিকিৎসা ও রেশনিংয়ের ব্যবস্থাসহ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে, করোনা ছাড়াও অন্যান্য রোগের যথাযথ চিকিৎসার জন্য সকল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মি, পরিচ্ছন্ন কর্মিদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে জনগণের নিকট হতে গ্যাস, বিদ্যুত, পানির বিল আদায় বন্ধ করতে হবে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্য কমাতে হবে, সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কানাকানুন বাতিল করতে হবে।


     এই বিভাগের আরো খবর