,

অন্যের টাকায় সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতাল

র‌্যাবের কাছে ২শতাধিক প্রতারনার অভিযোগ সাহেদের বিরুদ্ধে

সময় ডেস্ক : করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতাল তৈরি হয়েছে অন্যের টাকা মেরে। হাসপাতালের এসি, ফ্রিজসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনায়ও জালিয়াতি করেছেন তিনি। রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় এসি লাগানো বাবদ এফআর করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান তার কাছে ১৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা পাবে। দীর্ঘদিনেও সেই টাকা পরিশোধ করেননি সাহেদ। নানাজনের কাছে ধরনা দিয়েও তার কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেনি কোম্পানিটি। এদিকে সাহেদের প্রতারণার অনেক পুরোনো মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন এসব মামলা প্রভাব খাটিয়ে ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে এসি সরবরাহ করেন এফআর করপোরেশনের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, এসি লাগানো বাবদ সাহেদ দুই লাখ টাকার চেক দেন। হাসপাতালে ৩৮টি এসি লাগানো হয়। এ ছাড়া সাহেদের বাসা, আত্মীয় ও অফিস কর্মকর্তাদের বাসায়ও এসি সরবরাহ করেন তিনি। এ বাবদ তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা পেতেন। তবে দুই লাখ টাকার চেক দিলেও তা ডিজঅনার হয়। টাকা না দিয়ে সাহেদ টালবাহানা করতে থাকলে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করতে যান হাবিবুর রহমান। সোমবার র‌্যাব সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাহেদ এই টাকা মেরে দেওয়ায় আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। আমি তো সেখানে চাকরি করি। দীর্ঘ সময় পর হলেও এর প্রতিকার চাই। টাকা ফেরত চাই। সাহেদের বিচার চাই।’

র‌্যাবের চালু করা হটলাইন নম্বরে গত কয়েক দিনে এভাবে অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাচ্ছেন। হটলাইনে ফোনকল এবং ই-ইমেইল ছাড়াও কেউ কেউ সরাসরি গিয়েও অভিযোগ জমা দিচ্ছেন। এসব ভুক্তভোগীকে আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘সোমবার দুপুর পর্যন্ত র‌্যাবের কাছে ফোন এসেছে ১৮০টি, ই-মেইলে অভিযোগ এসেছে ৩০টি। সব অভিযোগই প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও পাওনা টাকা পরিশোধ না করা প্রসঙ্গে। বেশ কিছু ই-মেইল এসেছে বিদেশ থেকে। আরও দু-তিন দিন সেবা সংযোগটি চালু রাখা হবে।’ সাহেদ রাজউকের চেয়ারম্যান পদে বসানোর জন্য প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক কর্ণধারের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক পুলিশ সুপারকে বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিয়েছেন এক কোটি টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একজন মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকা। গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর কার্যালয়ে অভিযান চালায় র‌্যাব। পরীক্ষা ছাড়াই করোনার সনদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল তারা। অভিযানে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অন্তত ছয় হাজার ভুয়া করোনা পরীক্ষার সনদ পাওয়ার প্রমাণ পায়। পরের দিন ৭ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার মূল কার্যালয় সিলগালা করে দেয়। একই সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করে র‌্যাব। এরপর গা-ঢাকা দেওয়া সাহেদকে গত বুধবার সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে একটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরদিন মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ সাহেদকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানায়। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জন্য ১০ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।


     এই বিভাগের আরো খবর