,

করোনা রুখতে ডায়েটে রাখুন মিষ্টি কুমড়ার বীজ

সময় ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশি করে শাকসবজি এবং ভিটামিন ডিসমৃদ্ধ খাবার খেতে বলছেন তারা। কিন্তু মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই বীজ ফেলে দেন অনেকে। পুষ্টিবিদরা জানান, খাদ্যতালিকায় বীজ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক গুণ। মিষ্টি কুমড়ার বীজ এই সবজিটির অন্যতম উপাদান। এই বীজেই রয়েছে শরীরের অপরিহার্য ফ্যাট। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম উৎস মিষ্টি কুমড়ার বীজ। শরীরে নিজে থেকে এটি তৈরি হয় না। তাই খাবারের মাধ্যমে এটি যাতে শরীরে যায়, খেয়াল রাখতেই হবে সে দিকে। রোজ অল্প কয়েকটা মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেতে পারলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন সমৃদ্ধ এই বীজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রদাহ কমাতে এবং ওবেসিটি বা স্থূলত্ব রুখতেও সাহায্য করে।
মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। মাত্র ১০০ গ্রাম বীজে থাকে ১৮ গ্রাম ফাইবার। এটি এক জন মানুষের দৈনিক চাহিদার ৭২ শতাংশই পূরণ করে। ফাইবার কোলনের ভাল ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যের জোগান দেয়। ‘মাইক্রোবিয়াল ব্যালান্স’ বা অণুজীবের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ক্রনিক রোগেরও উপশম করে এই বীজ।
ভাল কোলেস্টেরল, অর্থাৎ হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল) এবং খারাপ কোলেস্টেরল, অর্থাৎ লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল)— এই দুই ধরনের কোলেস্টেরলই তৈরি হয় লিভারে। এলডিএল ধমনীর প্রাচীরে তৈরি হওয়ায় ব্লকেজ তৈরি হয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। যেখানে এইচডিএল খারাপ কোলেস্টেরল সরিয়ে রিসাইকেলে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার বীজ এই দুইয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে।
পিইউএফএ এবং লিপোফিলিক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকার কারণেও এই বীজ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকার কারণে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ধ্বংস করে এটি।
পুষ্টিবিদ সোমা চক্রবর্তী বলেন, ‘ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কোষের প্রোটিন, ডিএনএ, সেল মেমব্রেনের ইলেকট্রন ‘চুরি’ করে, অক্সিডেশনের মাধ্যমে। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালের মোকাবিলা করে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট।’
মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট থাকলে সেটি রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। বিশেষ করে বর্ষার সময় ঠান্ডা লাগা, ফ্লু, ক্লান্ত হয়ে পড়া, এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মিষ্টি কুমড়ার বীজে থাকে সেরোটনিন, এই নিউরোকেমিক্যালকে বলা হয় প্রাকৃতিক ঘুমের ওষুধ। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওষুধের পরিবর্তে এটি খেতে পারেন। এ ছাড়াও আর্থারাইটিসের ব্যথায় এই বীজের তেল মালিশ করলে খানিকটা উপশমও মেলে। এই বীজে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক থাকার কারণে সেটি প্রস্টেটের সমস্যাকে দূরে রাখে। ইনসুলিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রয়েছে মিষ্টি কুমড়ার বীজের। কারণ এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
তবে আরও একটা কারণে এই বীজের গুরুত্ব আছে। মিষ্টি কুমড়ার বীজে রয়েছে কিউকারবিটিন, এ ছাড়াও ভিটামিন সি থাকার কারণে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এটি।
কীভাবে খেতে হবে এটি?
কম ক্যালরি, ভরপুর পুষ্টিতে ভরা মিষ্টি কুমড়ার বীজ ফেলে দেবেন না। বরং বীজ বেটে রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার করতে পারেন কাঁচা স্যালাডে কিংবা সুপেও। বীজ অল্প ভেজে স্ন্যাক্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।


     এই বিভাগের আরো খবর