,

চামড়ার দাম অর্ধেক কমাতে চান ব্যবসায়ীরা

সময় ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়া, কাঁচা চামড়া কিনতে নগদ টাকার সংকট, তীব্র গরমে সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকালে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাকে কারণ হিসেবে তুলে ধরে কাঁচা চামড়ার দাম অর্ধেক কমিয়ে নির্ধারণ করতে চান ট্যানারি মালিকরা। প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমিয়ে ব্যবসায়ীরা তিন স্তরে দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করবেন বলে জানা গেছে। তাদের প্রস্তাবিত দাম নির্ধারণ হলে ১২ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কাঁচা চামড়ার দাম হবে সর্বনিম্ন। ইতোমধ্যে গত বছরের থেকে ৩৩ শতাংশ কমিয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। এই দরেও রাজি নন ট্যানারি মালিকরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে দাম আরও কমানোর প্রস্তাব করবেন তারা। আজ রবিবার (২৬ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে চামড়ার দর প্রস্তাব তুলে ধরবেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে চামড়া খাতের সংগঠনসহ সংশ্নিষ্টদের নিয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ট্যানারি মালিক ও আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ট্যানারি মালিকরা চামড়ার দাম কমানোর বিষয়ে দেশের ও আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া খাতের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরবেন। তারা এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও ঢাকার বাইরে উত্তরাঞ্চলের জন্য ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে চট্টগ্রামের জন্য ১৫ থেকে ২০ টাকা করার প্রস্তাব করবেন। গত বছর এ দর ছিল যথাক্রমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এ বছর করোনা ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কম ও পর্যাপ্ত মজুত থাকায় দাম কমানোর প্রস্তাব দেবেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে সারাদেশে খাসির চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা, বকরির চামড়া ৭ থেকে ১০ টাকা এবং মহিষের চামড়া ১০ থেকে ১২ টাকা ধরা হতে পারে। গত বছর খাসির চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা ছিল। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বলতে চাই বর্তমানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দাম যেন নির্ধারণ করা হয়। অবাস্তব কোন দাম নির্ধারণ করলে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনবে না। সরকারকে একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে, যাতে মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ আড়ৎদাররা দুই-চার পয়সা লাভ করতে পারে এবং ট্যানারি মালিকরাও যাতে কিনতে পারে। তিনি বলেন, গত বারের থেকে এবার ৩৩ শতাংশ দাম কমিয়ে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু করোনার কারণে স্থানীয়সহ বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে। চাহিদা না থাকলে চামড়া কিনে কী করব। এজন্য দাম নির্ধারণের আগে আমাদের রপ্তানি কী পরিমাণ হচ্ছে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। বর্তমানে আমাদের তিন হাজার কোটি টাকার চামড়া মজুত রয়েছে। তাই অনেক ট্যানারি মালিক চামড়া কিনতে চাইবে না। কারণ, তাদের গুদামে অবিক্রিত অনেক চামড়া পড়ে আছে। আগামী এক থেকে দুই বছর কোভিড-১৯-এর প্রভাব যায় কিনা সেটা ভাবার বিষয়। শাহিন আহমেদ আরও বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল যেমন চট্টগ্রামের চামড়া হয় একেবারে খারাপ, সেজন্য সেটার একটা আলাদা দাম। ঢাকার চামড়ার একটা আলাদা দাম ও উত্তরাঞ্চলের জন্য আলাদা দাম নির্ধারণের একটা প্রস্তাব আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। দেখা যাক আগামীকাল রোববার কী হয়। চট্টগ্রামের লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা প্রতি বর্গফুট, ঢাকার চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং উত্তরাঞ্চলের চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা করার একটি প্রথমিক প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। কাল বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু ট্যারিফ কমিশন ঢাকার ভেতরের চামড়ার দাম ৪০ টাকা প্রতি বর্গফুট আর ঢাকার বাইরে সারা দেশের জন্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই আমরা দাম কমানোর জন্য বলেছি। বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, ট্যারিফ কমিশন ইত্যোমধ্যে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৩০ টাকা সাম্ভব্য দাম নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দাম নির্ধারণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তো বিক্রি করি। কিন্তু ট্যানারি মালিক তো ক্রয় করেন। আমরা তাদের কাছে ১৩০ টাকা ফুট চামড়াও বিক্রি করেছি আবার ৩০ টাকা ফুটও বিক্রি করেছি, সেই রেকর্ডও আছে। তাই তাদের সাথে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ করলে আমরা সবাই লাভবান হবে। সারা পৃথিবীতে ক্রেতারাই দাম নির্ধারণ করে। দাম নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই। আমাদের সমস্যা হলো ট্যানারি মালিকরা যদি আমাদের বকেয়া টাকাটা দেয় তাহলে আমরা চামড়া কিনতে পারব। বাজার স্থিতিশীল থাকবে। গত বছর যে রকম অবস্থা হয়েছে সে রকম কোন কিছু হবে না। তাই আমরা দাম নিয়ে চিন্তিত না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ কোটি ৯ লাখ। যার মধ্যে গরু-মহিষ প্রায় সাড়ে ৪২ লাখ। সারা বছরের মোট চামড়ার অর্ধেকই আসে কোরবানির পশু থেকে। গত বছর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সেই অনুযায়ী মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার দাম হওয়ার কথা ছিল ৯০০ থেকে ১৭৫০ টাকা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা তা কিনেছেন মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে প্রতিবছরই কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়েছে সরকার। ২০১৪ সালের ৭৫ টাকা বর্গফুটের চামড়া ২০১৯ সালে নেমে এসেছে ৪৫ টাকায়। এ বছর তা ৩০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু তাতেও নাখোশ চামড়া ব্যবসায়ীরা।


     এই বিভাগের আরো খবর