,

পুলিশের গুলিতে প্রাণ গেল সাবেক সেনা কর্মকর্তার

উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন

সময় ডেস্ক : কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ রোডে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আরও উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার।  এই কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে। তিনি হলেন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, কক্সবাজারের ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মনোনিত একজন প্রতিনিধি; যিনি সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির মনোনিত একজন প্রতিনিধি এবং কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি। এই কমিটি গঠনের বিষয়ে ১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মাইনুল আমিন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর এলাকায় মেরিনড্রাইভের চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে গত ৩১ জুলাই আনুমানিক রাত ৯টায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে কর্মপরিধিসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। প্রজ্ঞাপনে কর্মপরিধির বিষয়ে বলা হয়েছে, এই কমিটি উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ঘটনার কারণ, উৎস এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। উল্লেখ্য, এরআগে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেনা কর্মকর্তার নাম সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান (৩৬)। জানা গেছে, নিহত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান যশোরের ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার মৃত এরশাদ খানের ছেলে।

মেরিন ড্রাইভ সড়কে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এমনকি পুলিশ যদিও দাবি করেছে, দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত বাহিনীর সদস্য পাহাড় থেকে নেমে আসার খবর পেয়েই বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকতের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মেরিন ড্রাইভে অবস্থান নিয়েছিল। লোকজনের দেওয়া খবর অনুযায়ী টেকনাফ থেকে কক্সবাজারমুখী একটি প্রাইভেটকারের আরোহীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি চালান। পুলিশের দাবি, ওই সেনা কর্মকর্তা নিজের পিস্তল বের করে পুলিশের দিকে তাক করেছিলেন। ঘটনার পর পরই কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা গুলিবিদ্ধ মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর শনিবার বিকালে মেরিন ড্রাইভ রোডের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর একটি তদন্ত দল ঘটনা তদন্তে যায়। এসময় এলাকার লোকজন সেনাবাহিনীর তদন্ত দলটিকে দেখে এগিয়ে আসেন। স্থানীয়দের কাছে তদন্ত দলের কর্মকর্তারা শুক্রবার রাতের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ব্ক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র ফুটে ওঠে।

তদন্তের সময় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, স্থানীয় একটি হেফজখানার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও দুজন হাফেজ সেনা কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, শনিবার রাতে প্রাইভেট কার থেকে যে ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে সেটা ছিল একটি নির্মম ঘটনা। তারা জানান, প্রাইভেট কারের ওই আরোহী (মেজর সিনহা) ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকতের নির্দেশমতে ওপরে দুই হাত তুলে বলেন, ‘বাবা আপনারা অহেতুক আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হবেন না। আপনারা আমাকে নিয়ে একটু খোঁজ নিন।’

সাক্ষিরা বলেন, মেজর সিনহা এমন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই অশ্রাব্য একটি গালি দিয়ে তাঁর (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালিয়ে দেন পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত হোসেন। তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্থানীয় শামলাপুর বাজারের আবদুল হামিদ নামের একজন ফেরিওয়ালা সেনা দলের কর্মকর্তাদের বলেছেন, এটা সাংঘাতিক অন্যায় কাজ হয়েছে। আমাকে যেখানেই নিয়ে যান আমি সত্য কথা বলব। পুলিশ ক্রস ফায়ারের মতো করে একজন জ্যান্ত মানুষকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, গাড়ি থেকে নামার পর পরই পুলিশ ইন্সপেক্টর গাড়ির আরোহীকে (মেজর সিনহা) বুকে গুলি চালিয়ে দেয়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন এ বিষয়ে এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঈদের সময় দেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তরের সতর্ক বার্তা রয়েছে। এ নিয়ে বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে জেলা পুলিশ। বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এক প্রকার রেড এলার্টে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন সময়ে শুক্রবার রাতে শাপলাপুরের একটি পাহাড় থেকে নেমে আসা বোরকা সদৃশ বস্তু পরিহিত লোকজনের খবর শুনে পুলিশ হয়তোবা ডাকাত নতুবা জঙ্গি সন্দেহ করে ওই গাড়িটিকে টার্গেট করে আসছিল। পুলিশ সুপার আরো বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তিনি কক্সবাজারের হিমছড়ি মেরিন ড্রাইভের একটি হোটেলের দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

তারা একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করছিলেন বলে জানতে পারেন পুলিশ সুপার। তল্লাশি চালিয়ে ৫০ পিস ইয়াবা মিলেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। আহত অবস্থায় তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত, শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর