,

অভিনয় শুরুর পর বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেন… এটিএম শামসুজ্জামান

সময় ডেস্ক : আমার জন্ম হয়েছে নানাবাড়ি নোয়াখালীতে। কিন্তু আমার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। আদি ঢাকা বলতে যেটা বোঝায়। মানে পুরান ঢাকায়। বাবুবাজারের আরমানীটোলা মাঠের পাশেই একটি বাড়িতে সে সময় ভাড়া থাকতাম। এরপর ১৯৫৬ সালে বাবা সূত্রাপুরে একটি বাড়ি কেনেন। আমাদের বাসা সূত্রাপুরে থাকলেও খেলার জায়গা আরমানীটোলা মাঠ। ধুলোমাখা শৈশব-কৈশরের অনেক স্মৃতি রয়েছে মাঠকে ঘিরে। এক জীবনে অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম। জীবনের বাঁকদল হয়তো এভাবেই হয়। নইলে পরিচালক থেকে অভিনেতায় রূপান্তরিত হলাম কেমন করে। অথচ পরিচালনার সূত্র ধরেই আমার অভিনয়ে আসা।

দৈনিক হবিগঞ্জ সময়ের পাঠকদের জন্য এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনেতা হওয়ার ইতিহাস তুলে ধরা হলো :- ১৯৬১ সালে উদয়ন চৌধুরীর ‘মানুষের ভগবান’ ও ‘বিষকন্যা’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে বরেণ্য নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে একজন পত্রিকা বিক্রেতার চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রথম ক্যামেরার সামনে আসেন এই কিংবদন্তি। ওই ছবিতে আলতাফ হোসেন একজন পত্রিকা বিক্রেতার অভিনয় করেন। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে যার অভিনয়ের কথা, তিনি কোনো এক কারণে সেদিন অনুপস্থিত। সে সময় এ.টি.এম সামসুজ্জামান ওই সেটে উপস্থিত ছিলেন। নির্মাতা মিতা উপায়ান্তর না দেখে সামসুজ্জামানকেই আলতাফের সহকারীর চরিত্রে অভিনয় করতে বললেন, প্রথমে রাজি না হলেও, পরে তার অনুরোধে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তার অভিব্যক্তি দেখে বলেছিলেন, ছেলেটি একদিন অনেক মস্তবড় অভিনেতা হবে। এটিএম শামসুজ্জামান বলেন ভালো অভিনেতা হতে পেরেছি কিনা জানি না। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এ ছবির খল চরিত্রে অভিনয় ছিল আমার টার্নিং পয়েন্ট। তা হলে কী হবে, এতে অভিনয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। একদিন আমজাদ হোসেন আমায় ডেকে পাঠালেন। তখন ভেবেছি তার ছবিতে হয়তো সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করতে হবে। কিন্তু যখন তিনি একটি চরিত্রে অভিনয় করতে বললেন, তখন ভয়ে ‘না’ বলে পালিয়ে যাই। পরে জোর করে ধরে এনে ছবির ‘মোড়ল’ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন। আমজাদ ভাই যেভাবে বলেছেন ক্যামেরার সামনে শুধু তাই করেছিলাম। এ পর্যন্ত তিন শতাধিক চলচ্চিত্র এবং কয়েকশ’ টিভি নাটকে অভিনয় করেছি। এক জীবনে মানুষ অনেক কিছু হতে চায়। চেয়েছিলাম লেখক হতে। কিন্তু বাবা উকিল বানাতে চেয়েছিলেন। অভিনয় শুরুর পর বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বেরই করে দিলেন। তখন পাশের গলির জাফরান ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। ওনার মা আমাকে খুব ভালোবাসতেন। পরে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার আগে জাফরানের মা মারা যান। খুব কেঁদেছিলাম। অভিনয়ের পেছনে জাফরানের মায়ের ভূমিকা কখনোই ভুলতে পারব না। আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। আরও একটি ঘটনার কথা বলি। একদিন ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ ছবিটি দেখে এক জজ সাহেব বাবাকে ডেকে পাঠালেন; বললেন, ‘এটিএম কি তোমার পোলা?’ বাবা বললেন, ‘ধরা পড়েছে নাকি?’ ‘আরে মিয়া তা না। গোলাপি এখন ট্রেনে দেখেছ?’ বাবা বললেন, ‘ধুর, আমি ছবি দেখি নাকি?’ ‘তোমার পোলা খুব ভালো অভিনয় করেছে।’ চলচ্চিত্রে কখনও গ্রাম্য মাতব্বর, কখনও বা নানা ধরনের দুষ্টু লোক কিংবা গতানুগতিকের চেয়ে অন্য ধারার কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছি। যখনই যে চরিত্র নিয়ে হাজির হয়েছি, তাতে দর্শকরা বেশ সাড়া দিয়েছেন। চলচ্চিত্রের পরিচালনা, অভিনয়, কাহিনি, চিত্রনাট্য ও গল্প লিখেছি। সব ছাপিয়ে অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে দর্শক বেশি ভালোবেসেছে- এটাই বা কম কিসে।


     এই বিভাগের আরো খবর