,

বিকেএসপিতে সাকিবের একদিন

সময় ডেস্ক : দুপুরের সূর্যটা ঠিক মাথার ওপর এসে ঠায় দাঁড়িয়ে। বিকেএসপির ইনডোর থেকে ঘামে জবুথবু হয়ে ক্রিকেট মাঠ দিয়ে পাকা রাস্তায় উঠলেন সাকিব আল হাসান। এরপর ধরলেন মধুমতি গেস্টহাউসের পথ। হাতে থাকা বোতল থেকে মুখে পানি ঢেলে যেন গরমে খানিক স্বস্তি খুঁজলেন। কাল সারা দিন বিকেএসপিতে কাটিয়ে দেখা মিলল সাকিবের মাঠে ফেরার প্রস্তুতির এ রকম আরও কিছু খণ্ড চিত্র। ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানানোয় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের মাথার ওপর থেকে ২৯ অক্টোবর সরে যাবে সেই কালো মেঘ। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশ দলের আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরের দ্বিতীয় টেস্টেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার কথা তাঁর। কয়েক দিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সে রকম ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। ফেরাটা যেন হয় সেই চেনা সাকিবের চেহারায়, সে জন্যই নিজের আঁতুড়ঘর সাভারের বিকেএসপিকে প্রস্তুতির জন্য বেছে নেওয়া। একাগ্রচিত্তে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিতে বিকেএসপির চেয়ে এমন নিরিবিলি জায়গাই বা আর কোথায় ?? প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কর্তা থেকে শুরু করে সবাই যেন ফেরার লড়াইয়ে সাকিবের পাশে দাঁড়াতে উদগ্রীব। মাঠের ঘাস কাটতে হবে? বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ নয়। ইনডোরে বোলিং মেশিন সচল করতে হবে? সেটিও সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায়। সাকিবের ফিরে আসার ছক এঁকেছেন তাঁর দুই গুরু নাজমুল আবেদীন ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। পর্দার পেছনে কুশীলব আছেন আরও দুইজন। একজন সাকিবের ফিটনেস নিয়ে কাজ করা দেশের সাবেক দ্রুততম মানব ও বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফী। দ্বিতীয়জন কে? মাথা চুলকালেও তাঁর পরিচয়টা ভাবনায় আসার কথা নয়। তিনি বিকেএসপিরই তরুণ বক্সিং কোচ আরিফুল করিম। হাতের শক্তি বাড়ানো ও ক্ষিপ্রতা ফিরে পেতেই সাকিবের কোচিং স্টাফে তাঁর অন্তর্ভুক্তি। সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকছেন একজন ফিজিও-ও। কাল পুরো কোচিং স্টাফ বহরের সঙ্গে মধুমতি গেস্টহাউসে দুপুরের খাবার খেলেন সাকিব। বিকেএসপির এই ভবনেই তাঁর আবাস। মধ্যাহ্নভোজ শেষে সেখান থেকে বের হয়ে আসা কোচদের একাংশের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় এই প্রতিবেদকের। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার বিষয়টি জানালেও সাকিব প্রশ্নে তাঁদের ভাবখানা এমন-সাকিব খায় না, মাথায় দেয়! এ নিয়ে আবারও কিছু জানতে চাইলে তাঁরা বুঝিয়ে দিলেন, চাইলে নিজেদের এটিএম কার্ডের পিন নম্বরটি বলে দিতে পারেন। সাকিবের প্রস্তুতি নিয়ে একটি শব্দও নয়। অবশ্য সাকিবের প্রস্তুতি নিয়ে এই গোপনীয়তার কারণও আছে। আইসিসি থেকেই বলা আছে, সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে বেশি কিছু আসা যাবে না। তারপরও কাল সারা দিন বিকেএসপিতে কাটিয়ে সাকিবের দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে কিছু তো জানা গেছেই। এই যেমন প্রতিদিন সকালে তিনি অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে কিছু অনুশীলন করেন, দৌড়ান। কাল তো দুপুরের দিকে অনেক দূর থেকে দেখেও বোঝা গেল, ইনডোরে চলছে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন। অনেকটা সময় সঙ্গে ছিলেন কোচ সালাউদ্দিন। বিকেএসপিতে এসে কালই নাকি প্রথম ব্যাট হাতে নিয়েছেন সাকিব। বিকেল গড়াতেই ১ নম্বর মাঠে দেখা গেল ঘাস কাটার মেশিন। ঘাস কাটা শেষ হলে দু-এক দিনের মধ্যে মাঠেই অনুশীলন শুরু হবে। এক মাঠকর্মীর কাছ থেকে জানা গেল, সাকিব হয়তো আজই মাঝ উইকেটে অনুশীলন শুরু করে দেবেন।

শিক্ষাজীবনের ছয়-সাত বছর কাটিয়েছেন এই বিকেএসপিতে। সাকিবের কত যে স্মৃতি মিশে আছে এর ইট-পাথর, ধুলো-কণায়! কৈশোরের সেই সব স্মৃতি যেমন অমূল্য, সাকিব নিশ্চয়ই এবারের স্মৃতিগুলোও লিখে রাখবেন মনের খাতায়। বিকেএসপি থেকেই যে শুরু হচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় জীবনটাও!


     এই বিভাগের আরো খবর