,

লন্ডন ফিরছেন আইএস বধু ব্রিটিশ বাংলাদেশী শামীমা বেগম

নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে নাগরিকত্ব মামলার শুনানী

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন থেকে : ব্রিটিশ বাংলাদেশী আইএস বধূ শামীমা বেগমের মামলা নিয়ে আবারও নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। ইমিগ্রেশন অ্যাপিল আদালতের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের করা আবেদনের শুনানী আগামী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের
পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ ব্রেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বস্থ সূত্রে জানাগেছে শুনানীর আগেই সিরিয়া থেকে লন্ডনে ফিরছেন জঙ্গিবধু শামীমা, বাংলাদেশ থেকে ফিরছেন পিতা আহমদ আলীও। সিরিয়ার একটি রি্ফিউজি ক্যাম্পে অবস্থানরত শামীমা ব্রিটেনে ফেরার আকুতি জানালে ব্রিটিশ সরকার তা নাকোচ করে দেয় এবং তৎকালীন ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারী সাজিদ জাভেদ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দেয় শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নয়,বাংলাদেশ তাঁকে গ্রহণ করবেনা। উল্লেখ্য যে ইষ্ট লন্ডনের ব্যাথনালগ্রীন এলাকার বাসিন্দা, ও বেথনাল গ্রীন একাডেমী স্কুলের ছাত্রী ব্রিটিশ বাংলাদেশী শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি গেটউইক এয়ারপোর্ট দিয়ে ইস্তাম্বুল তুর্কি হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসএ যোগদান করে।সাথে ছিল তার দুইসহপাঠি খাদিজা সুলতানা ১৬ এবং আমিরা আব্বাসে ১৫। শামীমা বেগম সিরিয়ায় আইএসএ যোগদানের পর ইয়াগো রিডজিক নামক এক আইএস জংগীকে বিয়ে করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে সিরিয়ার ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপনে শামীমার ১ বৎসরের কন্যা ও ৩ মাসের পুত্র সন্তান মৃত্যু বরন করে। মানবেতর জীবন থেকে মুক্তির জন্য ব্রিটেনে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন শামীমা বেগম। তার ব্রিটেনে ফিরে আসা কোর্টে গিয়ে গড়ায় । এবছরের জুন মাসে কোর্টে হেয়ারিং চলাকালে শামীমার আইনজীবিরা যুক্তিতুলে ধরে বলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে তার ব্রিটেনে ফিরে আসার অধিকার রয়েছে কেননা শামীমা জন্ম সূত্রে একজন ব্রিটিশ নাগরিক । সে যখন জংগী সংগঠন আইএসএ যোগ দেয় তখন সে অপ্রাপ্ত বয়স্কা ছিল।তার বয়স ছিল মাত্র ১৫বছর তখন সে জিসিএসই পরীক্ষাও দেয়নি। তার আইনজীবি আদালতে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শামীমা বেগমকে রাষ্ট্রহীন করা যাবে না, কারন সে যখন সিরিয়া আইএসএ যোগ দেয় তখন সে অপ্রাপ্ত বয়স্কা ছিল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবরা তাদের যুক্তি তুলে ধরে বলেন, শামীমা একজন ভয়ংকর জঙ্গি তার ব্রিটেনে ফেরার কোন অধিকার নেই। কেননা জঙ্গিসংগঠনে যোগ দেবার অপরাধে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছেন। আদলতে হেয়ারিং করেন লর্ড জাস্টিজ ফ্লাউক্স, লেডী জাস্টিজ কিং । শামীমার আইনজীবি ড্যানিয়েল ফুর্নার নাগরিকত্ব বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ের জন্য শামীমাকে ব্রিটেনে ফিরে আসার আবেদন জানালে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন আ্যাপিল আদালত শামীমাকে আইনী লড়াই চালিয়ে যেতে আইনজীবির আবেদন মঞ্জুর করে শামীমার ব্রিটেনে ফেরার পক্ষে রায় দেয় গেল জুলাই মাসে। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয় শামিমা তার নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আইনি লড়াইয়ের জন্য ব্রিটেনে ফিরতে পারবেন। আ্যাপিল আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ব্রিটিশ হোম অফিস সুপ্রিম কোর্টে আ্যপিল করে। ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আ্যাপিল আদালতের রায়ের পর সিরিয়ার আলরোজ শরণার্থী শিবিরে দেখা মিলে শামীমার। তবে ক্যামেরা দেখে দ্রুত প্রস্থান করেন তিনি। এ সময় তার পরনে ছিলো জিন্স পেন্ট, টি-শার্ট ও মাথায় হ্যাট। যদিও এর আগে প্রত্যেকবারই শামীমাকে বোরখা ও হিজাব পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। আদালতের রায় নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বাংলাদেশে অবস্থানরত শামিমার পিতা আহমেদ আলি। ব্রিটেনে ফিরলেই গ্রেপ্তারের সম্মুখীন হতে হবে শামীমাকে। তাকে আদালতে সন্ত্রাসবাদ বিষয়ক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তোলা হতে পারে। শামীমার পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আখুঞ্জি বলেন, তার নিজের পরিবারসহ কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে ব্রিটেনে ফেরার পর শামীমা সন্ত্রাসবাদের হুমকি হয়ে উঠবেন কি না। শামীমার আইনজীবী ড্যানিয়েল ফুর্নার বলেছেন, শামীমা ব্রিটিশ বিচার বিভাগের সম্মুখীন হতে ভীত নন। মানবিক কারণে তাকে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে শামীমা অক্টোবরের ভেতরই সিরিয়য়ার আলরোজ শরনার্থী ক্যাম্প থেকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ব্রিটেনে ফিরছেন। শামীমা বেগমের দেশের বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের উত্তর দাওরাই গ্রামে ।শামীমা বেগমকে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনা ও আইনি লড়াইয়ের তহবিল সংগ্রহের ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে একটি গ্রুপ। এর আগেও এই গ্রুপ শামীমার আইনী লড়াইয়ের জন্যে ত্রিশহাজার পাউন্ড সংগ্রহের ক্যাম্পেইন করে। ব্রিটিশ বাংলাদেশী একটি উগ্রবাদী গোষ্টী মানবাধিকারে নামে শামীমাকে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনতে তার পক্ষে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে সেই সাথে আইনী লড়াইয়ের জন্যে আবারও ফান্ডও সংগ্রহ করছে। যারা মানবতার দোহাই দিয়ে শামীমার পক্ষে ক্যাম্পেইন করছেন তাদের উদ্দেশ্য এবং চিন্তা চেতনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন যারা শামীমার পক্ষে ক্যাম্পেইন করছেন তারা কারা আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কি?


     এই বিভাগের আরো খবর