,

হঠাৎ নাক-কানের সমস্যা

সময় ডেস্ক ॥ খেলতে খেলতে হঠাৎ করে অবুঝ শিশু যদি নাকের ছিদ্রে বা কানের ফুটোর মধ্যে কিছু ঢুকিয়ে ফেলে অথবা যে কোনো ব্যক্তির দুর্ঘটনাবশত পোকামাকড়, মশা-মাছি প্রভৃতি নাক বা কানের মধ্যে ঢুকে আটকে পড়ে সে ক্ষেত্রে বাড়িতে নিজেরা খোঁচাখুঁচি করলে সমস্যা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের শস্যদানা যেমন- ছোলা, মটর, ধান অথবা পুঁতি বা ছোট বল, ছোট পাথরের টুকরা, শার্টের বোতাম, কাগজ, মুড়ি ইত্যাদি কানের ভেতর অথবা নাকে প্রবেশ করলে অভিভাবকরা হন্তদন্ত হয়ে ইএনটি ডাক্তারদের কাছে ছুটে আসেন।
যা করণীয়: এ ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে শিশুকে অথবা আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে নিতে না পারলে বাড়িতে প্রথমেই বুঝতে চেষ্টা করুন, কানের মধ্যে যে জিনিসটি ঢুকেছে, সেটি জীবন্ত কিছু নাকি জড় পদার্থ।
কানে জড় পদার্থ (কটনবাড বা তুলার অংশ, ম্যাচের কাঠি, পুঁতির দানা, বল বিয়ারিং, পেনসিলের শিস, মুরগির পালক, ধান, ফলের বীজ, মুড়ি, চিড়া ইত্যাদি) ঢুকে থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে সামান্য দেরি হলেও অসুবিধা নেই। কিন্তু মশা-মাছি, তেলাপোকা, পিঁপড়া বা অন্য কোনো জীব কানে ঢুকে পড়লে সেটিকে মেরে ফেলতে চেষ্টা করতে হবে, না হলে কানের ভেতরে আটকা পড়া প্রাণীটির নড়াচড়ার কারণে শিশুর কানে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে থাকবে। কানে মশা-মাছি, তেলাপোকা, পিঁপড়া বা অন্য কোনো জীব ঢুকে পড়লে মেরে ফেলার আগে কানে তীব্র আলোর টর্চলাইট ধরলে অনেক সময় জীবন্ত পোকামাকড় আলোর প্রতি সংবেদনশীল হওয়ায় বের হয়ে আসতে পারে। তাই প্রথমে টর্চলাইটের আলোর প্রতি আকর্ষিত হয়ে পোকামাকড় বের হয়ে আসে কিনা দেখতে পারেন। কানে মশা-মাছি, তেলাপোকা, পিঁপড়া ঢুকে যাওয়ার সমস্যার ক্ষেত্রে প্রথমেই হাতের কাছে থাকা পাতলা তেল (সবচেয়ে ভালো অলিভ অয়েল/অলিভ ওয়েল না থাকলে নারিকেল তেল) ধীরে ধীরে ফোঁটায় ফোঁটায় কানের মধ্যে দিন। তেলটা যাতে সহজে ভেতরে যেতে পারে তার জন্য কানের লতি আগুপিছু করতে পারেন। তেলের জন্যই পোকাটা মরে যাবে, ফলে ব্যথা বা অস্বস্তি কমে যাবে। বাড়িতে এর বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের জিনিস কানের ভেতর অথবা নাকে প্রবেশ করলে অভিভাবকরা হন্তদন্ত হয়ে ইএনটি ডাক্তারদের কাছে ছুটে আসেন। এক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে বাড়িতে প্রথমেই বুঝতে চেষ্টা করুন কানের মধ্যে যে জিনিসটি ঢুকেছে, সেটি জীবন্ত কিছু নাকি জড় পদার্থ এরপর যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অথবা নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
যা করবেন না: কানের ভেতরে ঢুকে যাওয়া কোনো বস্তু নিজেরা বের করার চেষ্টা করলে অনেক সময় কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায় অথবা কানের ভেতরে/বহিঃকর্ণে ক্ষত হয়ে যায়।
আর নাকের মধ্যে জড় পদার্থ বা জীব- যাই আটকে যাক না কেন, সেটিকে বের করার জন্য বাড়িতে কোনো ধরনের চেষ্টা করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ আপনার খোঁচাখুঁচির ফলে নাকের ভেতর দিয়ে জিনিসটি শিশুর শ্বাসনালিতে চলে যেতে পারে, এতে শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। এ ছাড়া নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যেতে পারে অতিরিক্ত খোঁচাখুঁচির কারণে। নাকের এবং কানের ভেতরে ঢুকে যাওয়া বস্তু এবং তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর নাক কান গলার চিকিৎসকরা বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে সেই বস্তুটিকে বাইরে বের করে আনেন।
চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে শিশুকে ঠান্ডা মাথায় বোঝান। তাকে আস্তে আস্তে শ্বাস গ্রহণ করতে বলুন। সে যেন নাক দিয়ে জোরে বাতাস ছাড়ে। শিশুর সামনে নিজে অস্থির হয়ে চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করবেন না, এতে সে ভয় পেয়ে যাবে।
লেখক: এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা।


     এই বিভাগের আরো খবর