,

শায়েস্তাগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য

শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগরের বাসিন্দা সৈয়দ বংশের অন্যতম উত্তরসুরী মোতাওয়াল্লী পীরজাদা সৈয়দ হামদু মিয়া জানান- বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদ (রহ.) একজন বড় দরবেশ ছিলেন। তিনি চুনারুঘাটের মুড়ারবন্দ দরবার শরীফে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (রহ.) এর আস্তানায় এবাদত করতেন। তিনি তরফ রাজ্যের ঘরগাঁও বাস করতেন। পরে তিনি তরফ রাজ্যের ঘরগাঁও থেকে দাউদনগর পরগণা খারিজ করে আনেন। সৈয়দ সয়েফ মিন্নত উদ্দিন (র:)এর প্রপৌত্র বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদের নামানুসারে শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন সংলগ্ন তাঁর বাসস্থানের নামকরণ করা হয়েছে দাউদনগর। পরে তার নাম অনুসারে দাউদনগর বাজার প্রতিষ্ঠত হয়। তার সংলগ্ন গ্রামটি (বর্তমানে পৌরসভার অন্তর্ভূক্ত) আজও দাউদনগর নামে পরিচিত। বন্দেগী শাহ সৈয়দ দাউদ (রহ.) এর দুই পুত্র ছিলেন। একজন হলেন বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) ও অপরজন হলেন শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির প্রকাশ ছাওয়াল পীর বা জিন্দা শিশু পীর। তারা দাউদনগরের বিখ্যাত দরবেশ ছিলেন। বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) মুড়ারবন্দ দরবার শরীফ এবং দাউদনগরে আপন নিবাসে এবাদত করতেন। দাউদনগর নিবাসে বড় একটি খেলার মাঠ ছিল। ওই খেলার মাঠে বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) প্রায় সময় বিভিন্ন পীর অলিদের নিয়ে মাঠে খেলা করতেন। একদিন খেলার সময় তার ছোট ভাই শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির মাঠে বসা ছিলেন। ওই সময় এক হিন্দু ভক্ত বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) এর জন্য মানত করে এক ছড়া পাকা কলা গামছায় ভাল করে মুিিড়য়ে এবং গাভির দুধ নিয়ে আসছিল পীরের বাড়িতে। খেলার মাঠে তখন কিছু ছেলে দ্বারাগুটি নিয়ে খেলছিল। সে সময় শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির প্রকাশ জিন্দা শিশু পীর খেলায় মগ্ন ছিলেন। তিনি অবোধ মন নিয়ে হিন্দু ভক্তকে জিজ্ঞেস করেন তোমার কাঁধে কি? তখন ওই হিন্দু ভক্ত জবাব দেন আমার কাছে পাকা কলা এবং গাভির দুধ রয়েছে। তখন তিনি তাকে বললেন আমাকে একটি পাকা কলা দাওনা? হিন্দু ভক্ত শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) এর ছোট ভাই শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির প্রকাশ জিন্দা শিশু পীরকে চিনতে পারেনি। তাই সে তার প্রতি বিরক্ত হয়ে অবজ্ঞার সুরে কটু কথা বলে। কিন্তু শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির প্রকাশ জিন্দা শিশু পীর কলা খেতে জেদ ধরায় ওই ভক্ত বলেন এগুলো কাঁচা কলা। তুমি বাচ্চা ছেলে, খেতে পারবে না। এ কথা বলে ওই ভক্ত বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) এর বাড়িতে এল। বাড়িতে আসার পর ভক্ত পীরের কাছে কাঁধ থেকে পাকা কলার ছড়া নামিয়ে যেই গামছা খুলল তখন দেখতে পেল ছড়ির সবগুলো কলাই কাঁচা। শিশু পীর ওই ভক্তের আচরণে কষ্ট পেয়ে সে কলা না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বলেছিলেন তোমার পাকা কলা কাঁচা হবে এবং দুধ পানি হবে। কিন্তু ওই ভক্ত সে সময় শিশু ছেলে ভেবে শিশু পীরের কথায় বিশ্বাস করেনি। ঘটনার আকষ্মিকতায় ভক্ত ভেঙ্গে পড়ল এবং তার সব কথা বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা’র (রহ.) কাছে খুলে বলল। বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) ওই ভক্তকে বললেন শিশু ছেলেটিকে নিয়ে আসতে। কিন্তু ভক্ত গিয়ে দেখেন খেলার মাঠে শিশু ছেলেটি নেই। ওই শিশু ছেলেটিই শাহ সৈয়দ হাছান উল্লা (রহ.) ওরফে সৈয়দ নাছির প্রকাশ জিন্দা শিশু পীর। বড় ভাইকে ভয় পেয়ে দাউদনগর (মধ্যম হাবেলির) বাড়ির উত্তর পাশে জঙ্গলে মাটির নিচে জিন্দা হিসেবে আত্মগোপন করেন। এর পর থেকে শিশু পীরের নাম অনেকেই না জানায় ছাওয়াল পীর বা জিন্দা শিশু পীর নামে পরিচিত। কথিত আছে ছাওয়াল পীর বা জিন্দা শিশু পীর কবর পাকা করা এবং ওরস বা গান বাজনা করতে নিষেধ করেছেন। তাই ছাওয়াল পীর মাজারসহ তাঁর বংশধরদের কারো কোন কবর পাকা করা হয়নি। আরও প্রকাশ বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) এর খেলার মাঠটি ওই হিন্দু ভক্ত স্বপ্নে দেখেন পুকুর খনন করার জন্য। সেখানে পুকুর খনন করার পর অনেক পানি উঠে। সেখানে গিয়ে দেখা যায় অনেক গজার মাছ পানিতে খেলা করছে। যা গায়েবী গজার মাছ হিসেবে পরিচিত। এই গজার মাছ বন্দেগী শাহ সৈয়দ মহিব উল্লা (রহ.) অলৌকিক ক্ষমতায় বন্দী করে রেখে যান। সেই থেকে ওই পুকুরে সেই মাছগুলো রয়েছে এবং বংশবৃদ্ধি করে চলেছে। পুকুর পাড়ে একটি পুরাতন বকুল ফুলের গাছ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান- পুকুরটি কয়েকশ বছরের পুরনো। প্রতিদিন ওই পুকুরের গজার মাছ দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন। তারা মাছকে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী খাবার দেন। এ পুকুরের কোন গজার মাছের মৃত্যু হলে তা মাটিতে কবর দেয়া হয়। কেউ এ পুকুরের গজার মাছ খান না।


     এই বিভাগের আরো খবর