,

হবিগঞ্জের এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

সিলেটের এমসি কলেজে নারীকে গণধর্ষণ

জুয়েল চৌধুরী : সিলেটের এমসি কলেজে নারী গণধর্ষণের ঘটনায় হবিগঞ্জের এক ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে এবং দুই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনভর বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ হয়েছে সিলেটে। এদিকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ৬ ছাত্রীলগ নেতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মাঝে একজন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের বাগুনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র ছাত্রলীগ নেতা শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। তার সম্পর্কে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর  তথ্য। দীর্ঘদিন এমসি কলেজে কমিটি না থাকলেও রনিসহ অন্যদেরও কোন পদ-পদবী নেই। কিন্ত কলেজের রাজনীতি রনিসহ অন্যরা সক্রিয় ছিলো। স্থানীয় সূত্র জানায়, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি শায়েস্তাগঞ্জ ইসলামিয়া একাডেমী থেকে এসএসএসি পাশ করে শাবিপ্রবিতে ইন্টারমিডিয়েট ও এমসি কলেজ থেকে অর্নাস করে এমসি কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর করছে। পড়ালেখায় মেধাবী হলেও ছোটবেলা থেকেই সে ছিল উগ্র মেজাজের।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জনি ও সানি নামের আরও দুই ভাই রয়েছে ছাত্রলীগ নেতা রনির। এদেও মাঝে সেই বড়। বাবা শাহ্ জাহাঙ্গীর মাজারপ্রেমি হওয়ায় বেশিরভাগ সময় মাজারে মাজারে কাটান। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় রনি। সে সিলেট থেকে চাকুরীবিহীন মাসে মোটা অংকের টাকা বাড়িতে পাঠাতো। শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর বাজারে তাদের একটি দোকানও রয়েছে। এ ছাড়া শায়েস্তাগঞ্জ এর এক প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধির সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্টতা। ওই নেতার সভা সমাবেশে উপস্থাপক হিসেবে সব সময় সে হাজির থাকত। সুন্দর বক্তব্য দিয়ে লোকজনদের আকৃষ্ট করতো পারতো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, পারিবারিকভাবে তার বাবা চাচাদের সাথে আশেপাশের কারও সাথে ঝগড়া বিবাদ লাগলে সে রামদাসহ দেশিয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করত। এ ছাড়া এলাকার মেয়েদের ইভিটিজিংয়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার পিতা ও অন্য দুই ভাই সহজ সরল প্রকৃতির হলেও সে তাদের কিছুই পায়নি। সিলেট থেকে এলাকায় এলে ছাত্রলীগের প্রভাব দেখাতো। জানা গেছে, সিলেটে পড়ালেখাকালীন প্রতি মাসে লাখ টাকা বাড়ীতে দিত রনি। গত ঈদেও রনি ৩০ হাজার টাকার পোষাক কিনে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়েছিল। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে তার দাপট ছিল শায়েস্তাগঞ্জে। কিছুদিন আগে ২ লাখ টাকা দিয়ে মোটর সাইকেল কিনেছিল, যা দিয়ে সিলেটে যাওয়া আসা করত। ঘটনার পর থেকে সেসহ অন্যরা পলাতক আছে। পুলিশ সে ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ধর্ষিত তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে সিলেটের এমসি কলেজের ঘুরতে আসেন। ঘুরার এক পর্যায়ে রাত ৮ টার দিকে তরুণীর স্বামী সিগারেট খাওয়ার জন্য এমসি কলেজের গেইটের বাইরে বের হন। এ সময় কয়েকজন যুবক তরুণীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যেতে চান। এতে তরুণীর স্বামী প্রতিবাদ করলে তাকে মারধোর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তরুণী ও তার স্বামীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমসি কলেজের হোস্টেলে নিয়ে যান। সেখানে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের ৫/৬ নেতাকর্মী তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এ সময় তাদের সাথে থাকা ৯০টি মডেলের একটি কারও ছিনিয়ে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে কারটি তাদের জিম্মায় নেয় এবং তরুণীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করে। এদিকে বিষয়টি প্রচারের পর হবিগঞ্জে নিন্দার ঝড় বইছে। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা শুনার পরেই তার এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উঠেছে নিন্দার ঝড়। লোকজন রীতিমতো ফুঁসে উঠেছেন। এলাকার কিছু মানুষের সাথে কথা বললে বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা বলেন, এ ঘটনাটি ছাড়াও রনির বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার ধারা বিভিন্ন সময়েই এলাকার মানুষ নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। এই অপরাধীর জন্য এলাকাবাসী লজ্জিত। এ সময় তারা রনিকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার দাবী জানান। এলাকাবাসী বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক, অপরাধ করলে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। একজন গৃহবধূকে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে তারা কলেজকে কলুষিত করেছে।


     এই বিভাগের আরো খবর