,

অনিয়মের তদন্তে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, নবীগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুলের খুঁটির জোর কোথায়!

মতিউর রহমান মুন্না ॥ পিইডিবি-৪ এর আওতায় নবীগঞ্জ উপজেলার ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারের কাজের ১ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকার প্রাপ্ত বরাদ্দ (তামাদি) ফেরত যাওয়ার ঘটনায় শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে নেমেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল রবিবার সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দারিদ্র পীড়িত এলাকার স্কুল ফিডিং কর্মসূচির সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা একে.এম রেজাউল করিম শিক্ষা কর্মকর্তার গাফিলতি ও অনিয়মের সরেজমিনে তদন্ত করেন। সরেজমিন তদন্তকালে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলামের সামনেই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে বলেন গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৫৯টি বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ এবং ২৬টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে মেরামত কাজের জন্য অনুমোদিত হয়। বিদ্যালয়গুলোর অনুকূলে বরাদ্দ নিয়ে লুকোচুরি খেলায় মেতে ওঠেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সাইফুল ইসলাম। বরাদ্দ আসার ৬ মাসপর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বরাদ্দ সর্ম্পকে অবগত হন। এনিয়ে ২১ জুন ২০২০ইং এনিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষকদের অগ্রিম ভিত্তিতে কার্যসম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিধি মোতাবেক উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী কর্তৃক কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রত্যায়ন নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। কাজের অগ্রগতি ও প্রত্যায়ন ছাড়া টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিশিকান্ত দেবনাথ। তৈরি হয় জটিলতা। এনিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করেও সমাধানে ব্যর্থ হন। মাত্র ৬টি বিদ্যালয় কার্য সম্পাদন করে অর্থ উত্তোলন করে। ৭৯টি বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থের বরাদ্দ বাতিল হয়ে ফেরত যায় বরাদ্ধ। অনেক শিক্ষক শতভাগ/সত্তরভাগ/ষাটভাগ কাজ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেক স্থানে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাথে শিক্ষকদের মতবিরোধ দেখা দেয়। এছাড়া গত ২০১৯ইং সালের ডিসেম্বর মাসে আসা বরাদ্দ নিয়ে রহস্যজনক নিরবতা এবং শেষ মুহূর্তে বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুকূলে নেয়ার প্রচেষ্টাকে কমিশন বাণিজ্যের পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অনেক শিক্ষক বর্তমানে ঋণখেলাপিও হয়ে পড়েছেন বলে জানান তারা। এর দায় কার এমন প্রশ্নও তুলেন। এছাড়াও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষক বদলীকরণে নিয়মবহির্ভূত, মনগড়া কর্মকাণ্ড, উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ, শিক্ষকদের প্রত্যায়ন পত্র প্রদানে উৎকোচ গ্রহণ, পিইডিবি-৪ এর আওতায় বরাদ্দে অনুষ্ঠানিক চিঠি প্রদান না করা, ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান রেখেও নিজস্ব খামখেয়ালিপনায় ওইদিন শিক্ষকদের নিয়ে বিল মিটিং আহবান করা, ৮ দিনে কাজ সম্পন্ন করা না গেলেও শিক্ষকদের সম্পূর্ণ বিল দেয়ার ব্যাপারে আশ্বস্থ করাসহ অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। এ সময় নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা শিক্ষা কর্মকর্র্তা কাজী সাইফুল ইসলামের অপসারণের দাবী তোলেন।
তদন্ত চলাকালে-শিবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রাহেলা খানম বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের ২২ জুন বরাদ্দের বিষয়ে অবগত করে কাজ শুরু করার জন্য বলেন এবং যথা সময়ে কাজের বিল দেয়ার ব্যাপারেও আশ্বস্থ করেন তিনি। শিক্ষা কর্মকর্তার এমন আশ্বস্থে প্রতি আস্থা রেখে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের ব্যক্তিগত টাকা কাজে ব্যয় করে ঋণগ্রস্থ হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করান। অনেকের ৭০-৮০ শতাংশ বা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু কাজ শেষে বিল না পেয়ে শিক্ষকদের অনেক বড় ক্ষতি হয় এবং শিক্ষকরা ঋণগ্রস্থ হন এ সকল ঘটনার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী। এ সময় প্রায় শতাধিক শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। উনি সব সময় সরকার বিরোধী কাজ করেন। তিনি কোন সরকার বিরোধী সংগঠনের সাথে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যে বরাদ্দ ছিল সেটা যদি কাজ হতো তাহলে নবীগঞ্জের শিক্ষাঙ্গনের অনেক উন্নতি হতো। এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত চান তিনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন, রহস্যজনক কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেষ মুহূর্তে বরাদ্দের ঘটনা অবহিত করেন। দুর্ভিসন্ধি মূলক ঘটনায় দায়ভার অবশ্যই শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত চেয়ে তিনি অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তার অপসারণের দাবী জানান।
পরে তদন্ত কর্মকর্তা একে.এম রেজাউল করিম পিইডিবি-৪ এর আওতায় বিভিন্ন স্কুলের সম্পূর্ণ ও অসম্পূর্ণ কাজ পরিদর্শন করেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দারিদ্র পীড়িত এলাকার স্কুল ফিডিং কর্মসূচির তদন্ত কর্মকর্তা ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক একে.এম রেজাউল করিম বলেন সরেজমিনে তদন্ত করেছি। এ বিষয়ে আমি তদন্তে পাওয়া তথ্য উপাত্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো। পরে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।


     এই বিভাগের আরো খবর