,

কাউন্সিলর ও মেম্বারের এ কেমন ভূমিকা?

সময় ডেস্ক ॥ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় গৃহবধু শামিমার জীবন নিয়ে কুলাউড়া পৌরসভার দুই কাউন্সিলর ও পৃথ্বিমপাশা ইউপি’র এক পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর দালালী ভূমিকায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শামিমা নামে এক গৃহবধুর জীবন। কুলাউড়া উপজেলার পৃথ্বিমপাশা ইউনিয়নের কানাইটিকর গ্রামের শেখ মোঃ হাছিব উল্লাহর পুত্র শেখ  আলীম মিয়ার সাথে ৩ লাখ টাকা দেনমোহর সাব্যস্থ্যে বিগত ০৫/০৪/২০১৩ইং বিয়ে হয়েছিল কুলাউড়া ৫নং পৌর ওয়াডের্র উছলাপাড়া গ্রামের ইন্তাজ আলীর কন্যা মোছাঃ শামিমা আক্তারের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই চাওয়া-পাওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টির একপর্যায়ে শামিমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার পিত্রালয়ে। এর পর আর তাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়নি, ভরন পোষন করা হয়নি এমনকি কোন খোঁজখবরও নেওয়া হয়নি। একসময় বিষয়টি নিয়ে শামিম কাউন্সিলরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সালিশে আলীমের মত জালিম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করে শামিমা। এর প্রেক্ষিতে উভয়কে আরও ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়। যথাসময়ে শামিমা তার সিদ্ধান্ত জানালেও শামিম কাউন্সিলরের নেতৃত্বাধীন সালিশকারীরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করেননি আজও। বার বার যোগাযোগ ও দীর্ঘ অপেক্ষার পর শামিমা গত ২৪/১২/২০১৩ইং বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল (বামাকা) মৌলভীবাজার জেলা শাখায় মানবিক ও আইনী সহায়তা চেয়ে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের অনুরোধ জানিয়ে বামাকা গত ০৫/০২/২০১৪ইং বামাকা/মৌজেশা/আঃসঃ/পারিবারিক- ১৯২/২০১৪/(১)/১৮নং স্মারকে আলীম মিয়া বরাবর নোটিশ/পত্র প্রেরণ করে। এর প্রেক্ষিতে আলীমের পক্ষে প্রথমে পৃথ্বিমপাশা ইউপি’র পরাজিত মেম্বার জনৈক মনির মিয়া, পরবর্তীতে দুই দুইবার কুলাউড়া পৌর ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামিম আহমদ ও এরপর কুলাউড়া পৌর ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামছুল ইসলাম বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে প্রহসন মূলকভাবে আলীমের পক্ষে সময় নিয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালণ করেন। এর প্রেক্ষিতে বামাকা গত ১০/০৩/২০১৪ইং ২য় বার ও গত ০৬/০৪/২০১৪ইং ৩য় বার আলীম মিয়া বরাবর নোটিশ/পত্র প্রেরণ এবং গত ১৬/০৪/২০১৪ইং তারিখের ১৯২(১)/২০১৪/(১)/১৮নং স্মারকে কুলাউড়া পৌর মেয়র, আলীমের পিতা শেখ হাছিব উল্লাহ, পৃথ্বিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান ও কুলাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বরাবর “বিষয়টির সম্মানজনক নিষ্পত্তিতে সহযোগিতা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য” পত্র প্রেরণ করেন। এর পর পরই কুলাউড়া পৌর মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ জয়নাল আবেদীন বাচ্চু স্বাক্ষরিত গত ০৬/০৩/২০১৪ইং এর কুলা/পৌর/প্রশা- ৪৯/২০১৩/৩৩২/১নং স্মারকযুক্ত পত্রের মাধ্যমে বামাকাকে জানানো হয়- “শেখ আলীম মিয়া তার স্ত্রী শামিমা আক্তারকে তালাক প্রদান করেছেন মর্মে বিগত ১২/০১/২০১৪ইং ডকেট নং- ৭৫, নথি নং- কুলা/পৌর/প্রশা- ৪৯/২০১৪ রেকর্ড মূলে একখানা এফিডেভিট দাখিল করেছেন- যাহা মুসলীম ও পারিবারিক বিবাহ নিবন্ধন ও তালাক আইন অনুযায়ী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে কাউন্সির গঠন পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য মেয়র কুলাউড়া পৌরসভা নোটিশ জারি করেছেন। সে মোতাবেক একই বিষয়ে দুইটি আদালতে শুনানী অনুষ্ঠিত হতে পারেনা বিধায় পৌরসভার শুনানী শেষ না হওয়া পর্যন্ত শেখ আলীম মিয়ার ব্যাপারে স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ সহকারে অবগত করা হল। “পত্রটির কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বামাকার ১৬/০৪/২০১৪ইং এর পত্রের প্রেক্ষিতে পৌর মেয়রের প্রদত্ত জবাব প্রায় ১ মাস ১০ দিন আগের অর্থাৎ ০৬/০৩/২০১৪ইং এর এবং প্রায় ১ বছর আগের অর্থাৎ ৪৯/২০১৩নং স্মারকের হল কিভাবে? তাছাড়া, যেখানে মুসলীম ও পারিবারিক বিবাহ নিবন্ধন ও তালাক আইন নামে কোন আইনই নেই, সেখানে কুলাউড়া পৌরমেয়র (ভারপ্রাপ্ত) এ আইন কোথায় পেলেন এবং এফিডেভিট প্রাপ্তির ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে কাউন্সিল গঠন করার বা কাউন্সিল গঠন পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহনের বা সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য নোটিশ জারি করার বিধান তিনি কোথায় পেলেন? মুসলীম পারিবারিক আইন বা অন্য কোন আইনেই- একতরফা তালাকের ক্ষেত্রে এফিডেভিট দ্ধারা তালাক কার্যকরের বিধান নেই। এক্ষেত্রে সালিশ কাউন্সিল অথবা পারিবারিক আদালতে আবেদন অথবা মামলা দায়ের করতে হয় এবং অনুমতি বা রায় প্রাপ্তির পর দেনমোহর পরিশোধ পূর্বক তালাকনামা সম্পাদন ও রেজিষ্ট্রি করতে হয়। এরপর ৯০ দিন ইদ্দত মেয়াদের মধ্যে গর্ভবতি পরিলক্ষীত না হলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়। কাজেই, স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ ছাড়া যেমন তালাক হয়না, তেমনি এফিডেভিট দ্বারাও তালাক হয়না বিধায় এফিডেভিট প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে কাউন্সিল গঠন করার প্রশ্নই আসেনা। কারণ, ইউনিয়ন ও পৌর পরিষদই পদাধিকার বলে সালিশ কাউন্সিল এবং চেয়ারম্যান ও মেয়রই পদাধিকার বলে সালিশ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। এছাড়া- একই বিষয়ে দুইটি আদালতে দুইটি মামলা হলে দুইটি আদালতে শুনানীতে কোন আইনগত বাধা থাকার কথা নয়। তবে, একই আদালতে একই বিষয়ে দুইটি মামলার শুনানী অনুষ্ঠিত হতে পারেনা। এক্ষেত্রে একটি মামলা খারিজ অথবা দুইটি মামলাই একইভূত করে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। সর্বোপরি, কুলাউড়া পৌরমেয়র (ভারপ্রাপ্ত) প্রেরিত পত্রটির মর্মমতেই গত ০৯/০৪/২০১৪ইং তারিখে ৯০ দিন অতিক্রান্ত হলেও, এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্তও আলীম-শামিমা সংক্রান্ত কোন তথ্যই কুলাউড়া পৌরমেয়র বামাকাকে জানাননি। এদিকে, বামাকার ১৬/০৪/২০১৪ইং তারিখের ১৯২(১)/২০১৪/(১)/১৮নং স্মারকযুক্ত পত্রের প্রেক্ষিতে পৃথ্বিমপাশা ইউপি চেয়ারম্যান কমরেড আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন- আলীম মিয়ার ওয়ার্ড মেম্বারসহ তিনি নিজে আলীম মিয়া ও তার পিতা হাছিব উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করলেও তারা তাতে সাড়া না দেয়ায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মাননীয় আদালতের মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনেরও পরামর্শ দিয়েছেন। অপরদিকে, পৃথ্বিমপাশা ইউপির পরাজিত মেম্বার জনৈক মনির মিয়ার চুক্তি মোতাবেক বিয়ের সময় প্রদত্ত মালামাল ফেরত ও নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য শামিমা ও তার ভাইদেরকে চাপ দেয়ার মত বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন কাউন্সিলর শামিম ও শামছুল। এতে করে, ধারনা করা হচ্ছে- কাউন্সিলর শামিম ও শামছুলই যোগসাজস করে মনগড়া আইন-কানুনের উল্লেখ পূর্বক পৌর মেয়রের স্বাক্ষর নিয়ে পত্র প্রেরণ করে বামাকার কার্যক্রম স্থগিত করিয়েছেন। কাউন্সিলর শামিম ও শামছুলই আর্থিক ফায়দা হাসিলের মাধ্যমে অনিশ্চয়তার শিকেয় ঝুলিয়ে রেখেছেন শামিমার জীবন। এর প্রেক্ষিতেই, আলীম-শামিমার ব্যাপারে গৃহীত সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে সু-পরামর্শ চেয়ে বামাকা গত ২৫/১০/২০১৪ইং তারিখে ১৯২ (৪)/২০১৪/(০১)/১৬নং স্মারকে কুলাউড়া পৌরমেয়র বরাবর পত্র প্রেরণ করেছে। পৌর মেয়রের জবাবের জন্য ৩০ দিন অপেক্ষার পর বামাকা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করবে।


     এই বিভাগের আরো খবর