,

তরুণ মুস্তাফিজের যাদুতে বাংলা ওয়াশের মুখে ভারত

সময় ডেস্ক ॥ তরুণ মুস্তাফিজের যাদুকরী বোলিং আর সাকিব-মুশফিক-সৌম্যদের ধারাবাহিক দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায়কে তাকলাগিয়ে ৬ উইকেটে এক বিশাল জয় পেল বাংলাদেশ। এ শুধু সিরিজ জয় নয়, পাকিস্তানের পর ভারতকে বাংলাওয়াশের পথে ঠেলে দিল টাইগাররা। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। আর এই জয়ের মধ্য দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের এই ম্যাচের ভিত গড়ে দেন প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়া সাতক্ষীরার সেই লিকলিকে অথচ দারুণ এক শক্তিশালী তরুণ টাইগার মুস্তাফিজ। আজ তিনি ভারতের ৬ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান। ভারতের দেওয়া ১৯৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুভ সূচনা পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হয়। তবে ৩৪ রানে কুলকার্নির বলে ধাওয়ানের হাতে ধরা পড়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। তিনি করেন ১৩ রান। এরপর সৌম্যের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিটন দাস। দুজন ভারতীয় বোলারদের ভালই মোকাবেলা করতে থাকেন। তবে দলের ৮৬ আর নিজের ৩৪ রানে দুর্দান্ত খেলতে থাকা সৌম্য আউট হন। এরপর অভিজ্ঞ মুশফিক আর তরুণ লিটন দাসের জুটি লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু ৯৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন দাস। এরপর উইকেটে জুটি বাঁধেন সাকিব। তবে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন মুশফিক। তখন দলীয় স্কোর ১৫২ রান। মুশফিক আউট হন ৩১ রানে। এরপর সাব্বিরকে নিয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান ক্রিকেটের তিন ফর্মেটের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। অবশেষে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে সাকিব মাঠ ছাড়েন। বাংলাদেশের ইনিংসে উল্লেখযোগ্য সৌম্য সরকার ৩৪, লিটন দাস ৩৬ ও মুশফিক ৩১ রান করেন। আর সাকিব ৫০ ও সাব্বির ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। আর ভারতের পক্ষে কুলকানি, অশ্বিন ও প্যাটেল একটি করে উইকেট নেন। অন্যটি রানআউট। এর আগে রোববার দিবা-রাত্রির ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ওভারে উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। মুস্তাফিজের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে পয়েন্ট দাঁড়িয়ে থাকা সাব্বির রহমানের হাতে ক্যাচ দিয়ে কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন রোহিত শর্মা। এরপর দলের হাল ধরেন শিখর ধাওয়ান এবং বিরাট কোহলি। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ৭৪ রানের এই জুটি ভাঙেন নাসির হোসেন। তার ঘূর্ণিবলে বিরাট কোহলি সম্পূর্ণ পরাস্থ হন। এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে কোহলি করেন ২৭ বলে তিন বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ২৩ রান। এরপর ধাওয়ানের সঙ্গে ব্যাটিং অর্ডারে আগে এসে হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। এই জুটির স্থায়িত্ব হয় ৩৫ রান। অর্ধশতক তুলে বিপদের আভাস দেয়া ধাওয়ানকেও ফেরান নাসির হোসেন। তার বলে উইকেটের পেছনে লিটন কুমার দাসের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ধাওয়ান ৬০ বলে ৭ চারে করেন ৫৩ রান। অবশ্য দুই বল আগে মুশফিকুর রহিমের পরিবর্তে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন কুমার দাস ধোনির একটি সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন। এরপরের ওভারে রুবেল হোসেন তুলে নেন আম্বাতি রাইডুর উইকেট। পয়েন্টে নাসির হোসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরার আগে তিনিও রোহিতের মত রানের খাতায় খুলতে পারেননি। এরপর ধোনি আর রায়না ৫৩ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন। তবে পাওয়ার প্লের প্রথম ওভারে অধিনায়ক মাশরাফি আবারও আক্রমণে আনেন মুস্তাফিজকে। তৃতীয় বলেই মুস্তাফিজ সাফল্যের দেখা পান। সুরেশ রায়নাকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। রায়না করেন ৫৫ বলে তিন বাউন্ডারিতে ৩৪ রান। এরপর পাওয়ার প্লেলে শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ফেরান মুস্তাফিজ। সৌম্য সরকারের তালুবন্দি হওয়ার আগে ধোনি করেন ৪৭ রান। এই ধোনিই প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজকে ধাক্কা দিয়ে মাঠছাড়া করেছিলেন। ফলে এই উইকেট নেওয়ার পর মুস্তাফিজকে একটু বেশিই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
তবে তখনও বিস্ময় মনে হয় জমা করে রেখেছিলেন মুস্তাফিজ। পরের বলেই এলবিডব্লিউ করেন নতুন ক্রিজে আসা অক্ষর প্যাটেল। এর মধ্য দিয়ে প্রথম ম্যাচের মত দ্বিতীয় ম্যাচেও হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা জাগান এই সাতক্ষীরার ১৯ বছর বয়সী বিস্ময় বালক। তবে তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন রবচিন্দন অশ্বিন। কিন্তু অশ্বিনও যে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। দলীয় ১৮৪ রানে অশ্বিন মুস্তাফিজের পঞ্চম শিকারে পরিণত হন। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে অশ্বিন করেন মাত্র চার রান। এই উইকেটের মাধ্যমে মুস্তাফিজ ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লেখান। বিশ্বের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে অভিষেকের পর টানা দুই ম্যাচে ৫ উইকেট তুলে নেওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। তবে ৪৩.৫ ওভার খেলা হওয়ার পরই বৃষ্টি এসে বাগড়া দেয়। বৃষ্টির কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। ৮.১৮ মিনিটে আবার খেলা শুরু হয়। বৃষ্টির পর ফিরেই মুস্তাফিজ তার কোটার শেষ বলে বরীন্দ্র জাদেজাকে বোল্ড করেন। জাদেজা ১৯ রান করেন। এরপর রুবেলের বলে ভুবনেশ্বর কুমার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে ভারত ২০০ রানে গুটিয়ে যায়। ভারতের ইনিংসে উল্লেযোগ্য ধাওয়ান ৫৩, ধোনি ৪৭, রায়না ৩৪ ও কোহলি ২৩ রান করেন। আর বাংলাদেশের পক্ষে এই ম্যাচে প্রথম ম্যাচের ৫ উইকেটের মত মুস্তাফিজুর রহমান ৬ উইকেট নিয়ে একাই ভারতীয় শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন। রুবেল এবং নাসির দুটি করে উইকেট লাভ করেন। এদিকে, বৃষ্টির কারণে ওভার ৩ ওভার কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ ৪৭ ওভার খেলার সুযোগ পাবে। প্রথম ওয়ানডেতে ভারতকে ৭৯ রানে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। আজ দ্বিতীয় ম্যাচ জিতলেই ভারতীয়দের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতবেন টাইগাররা। এর আগে সফরকারীদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ড্র করে বাংলাদেশ। ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হয়েছিল ম্যাচটি। বাংলাদেশ দলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রথম ম্যাচে জয়ী একাদশই রেখছে বাংলাদেশ। তবে সফরকারীদের স্কোয়াডে ৩টি পরিবর্তন এসেছে। বাদ গেছেন আজিঙ্কা রাহানে, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা। তাদের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন অক্ষর প্যাটেল, আম্বাতি রাইডু ও ধাওয়ান কুলকারনি। বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান। ভারত একাদশ: শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলি, আম্বাতি রায়ুডু, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভুবনেশ্বর কুমার, অক্ষর পেটেল, ধাওয়াল কুলকার্নি।


     এই বিভাগের আরো খবর