,

আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় রাজন সর্বোচ্চ পাঠকের তালিকায় ৪

সময় ডেস্ক : সিলেটে ১৩ বছরের এক কিশোরকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনায় বাংলাদেশ স্তব্ধ, হতবাক, প্রতিবাদমুখর। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও চলছে নিন্দা, প্রতিবাদের ঝড়। দেশের মিডিয়াগুলোতে পৈশাচিক এ হত্যার খবর গুরুত্বের সঙ্গে আসছে। এবার বিশ্বমিডিয়াতেও খবরটি স্থান পেয়েছে। বিবিসিতে ‘বাংলাদেশ: আউট ক্রাই ওভার ভিডিও অব বয়,১৩ বিটেন টু ডেথ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিশুটিকে (১৩) খুঁটির সাথে বেঁধে ক্রমাগত পেটান তিন যুবক। হাত-পাসহ শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে বারবার লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর এই দৃশ্য মুঠোফোনে ভিডিও করেন তাঁদেরই একজন। শিশুটির শেষ আকুতি ছিল, ‘আমারে পানি খাওয়াও!’ তখন তার চোখ-মুখ বেয়ে অঝোরে ঘাম ঝরছিল। এই আর্তনাদেও মন গলেনি। শিশুটিকে তাঁরা বলেন, ‘পানির বদলা ঘাম খা!’ কিন্তু‘ ঘাম খেতে হয়নি। ততক্ষণে মৃত্যু হয় শিশুটির। আল জাজিরার শিরোনাম ছিল,‘ বাংলাদেশ হান্টস এ্যাটাকারস অব টিন বিটেন ডেথ’। এএফপির বরাত দিয়ে শিশু রাজনের ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বের প্রভাবশালী এই গণমাধ্যমটি। বিশ্বের প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এএফপির শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ ফিউরি এস টেনস ফেটাল বিটিনিং ইজ পোস্টেড অনলাইন’। ‘বাংলাদেশি বয় মিসটেকেন ফর থিফ বিটেন টু ডেথ’ শিরোনামে ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে এশিয়া ওয়ান নামের সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি পত্রিকা। এ ছাড়াও বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এপিসহ বিশ্বের প্রায় সবগুলো সংবাদমাধ্যমই শিশু রাজনের হত্যা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের শিরোনাম ছিল-‘চুরির ‘শাস্তি’, কিশোরকে পিটিয়ে খুন বাংলাদেশে’। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেঁদেই চলেছে ছেলে। তার চুলের মুঠি ধরে রয়েছে এক জন। অন্য জন তার হাত পিছমোড়া করে বাঁধছে খুঁটির সঙ্গে। চেঁচিয়েই চলেছে ছেলে, ‘ছেড়ে দাও’। কিন্তু কে শোনে তার কথা। লাঠির ঘা কখনও পড়ছে পায়ে, কখনও পিঠে, কখনও মাথায়। এ ভাবেই চলল টানা ৩০ মিনিট। এক সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ছেলে। মারধর তবু থামল না। ক্রমে শান্ত হয়ে গেল তেরো বছরের সামিউল আলম রাজনের দেহটা। এতেও রাগ মিটল না হত্যাকারীদের। গোটা ঘটনাটা ভিডিও করে রেখেছিল ছড়িধারীদের এক জন। পরে সেটি ফেসবুকে দিয়ে দেয় সে। গর্বের সঙ্গে জানায়, ‘চুরির শাস্তি’। ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁও-এর ঘটনা। খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে ছেয়ে যায় ফেসবুক, টুইটার। আজ সিলেটের রাস্তায় পা মিলিয়েছিলেন শ’খানেক নারী-পুরুষ। অভিযুক্তদের এক জনকে ঘটনার দিনই ধরে ফেলেছিল স্থানীয় মানুষ। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তাকে। চাপের মুখে পড়ে বাকিদের হন্যে হয়ে খুঁজছে বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু কেন এ ভাবে হত্যা করা হল সামিউলকে? শিশুশ্রমিক ছেলেটির বাবা গাড়ি চালান। অভিযুক্তদের দাবি, একটি ভ্যান রিকশা চুরি করেছিল তেরো বছরের ছেলেটি। সেই অপরাধেই তাকে তুলে এনে শাস্তি দিতে চেয়েছিল ওই তিন জন। ‘মৃত্যুদন্ড’ দিয়েও সাধ মেটেনি। তাই তারা ফেসবুকেও পোস্ট করে দেয় হত্যাকান্ডটি। পুলিশ জানায়, তখনই তাদের দেখে ফেলে স্থানীয় লোকজন। ২২ বছরের মুহিত আলমকে ধরে ফেলেন তাঁরা। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘বাকিদের ধরতে আলমকে জেরা করা হচ্ছে।’’ পাকিস্তানের প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল জিও নিউজের অনলাইন ভার্সন, দৈনিক জং, ও বিবিসি উর্দু প্রায় একই শিরোনামে সংবাদটি ছাপে। জিও নিউজে শিরোনাম ছিল- ‘বাংলাদেশ : রিকশা চুরির অভিযোগে ১৩ বছরের কিশোরকে নির্মমভাবে হত্যা’। দৈনিক জং পত্রিকাও একই শিরোনাম করে। তবে পত্রিকাটিতে রাজনকে নির্যাতনের একাধিক ছবি ছাপা হয়। বিবিসি উর্দু শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশে চুরির অবিযোগে ১৩ বছরের শিশুকে হত্যা’। বিবিসি উর্দুর এ সংবাদটি সর্বোচ্চ পঠিতের তালিকায় চার নাম্বারে রয়েছে।


     এই বিভাগের আরো খবর