,

লাখাইয়ে দু’দল গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত ৩ ॥ আহত শতাধিক দু’দফায় সংঘর্ষ ৪ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ॥ ৪১ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ

লাখাই প্রতিনিধি ॥ লাখাইয়ে তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। দু’দফায় সংঘর্ষের প্রথম দিন প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী উভয়ের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইট পাটকেল নিক্ষেপে প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পরবর্তীতে গত রবিবার ৪ ঘন্টাব্যাপি রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষে ২ জন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক আহত হয়। নিহতরা হলেন উপজেলার সিংহ গ্রামের মৃত মনাই মিয়ার ছেলে কদম আলী (৬০) এবং একই গ্রামের ছায়েদ মিয়ার পুত্র বকুল মিয়া (৩২) ঘটনাস্থলে এবং ইমরান মিয়া (২৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানি মেডিকেলে মারা যায় বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ও পুলিশ সুত্রে যানা যায়, গত ১৭ই জুলাই শুক্রবার স্থানীয় বুল্লা বাজারে ফল ব্যবসায়ী উপজেলার পুর্ব সিংহগ্রামের শাহজান মিয়ার সাথে খেজুর ও আম কেনা নিয়ে বাক বিতান্ডা হয় উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মলাই মিয়ার পুত্র জাকির হোসেনের। বিষয়টি স্থানীয় লোকজন প্রাথমিকভাবে মিমাংসা করে দিলেও পরে লাখাই থানা ওসি মোজাম্মেল হক স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেন। একই দিন বিকালে বুল্লাবাজারে একপক্ষ অপরপক্ষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনলেও গত রবিবার সকাল ১০ টায় তেঘরিয়া সিংহগ্রামবাসী ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে সিংহ গ্রামের ২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত: মোঃ আবুল কাসেম, নজরুল ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, আব্দুল করিম, জাহির মিয়া, সিলেট এম.এ.জি উসমানী হাসপাতালে মুত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এদিকে সংবাদ পেয়ে লাখাই থানা ওসি মোজাম্মেল হক এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এ সময় পুলিশ ৪ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস এবং ৪১ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে সিংহগ্রামের হুমায়ূন কবির, শাকিল মিয়ার ঘর সহ প্রায় ১৩টি বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাতের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পরবর্তী অভিযানে ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ ১৫ জনকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করে। এদিকে ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের লক্ষ্যে গত সোমবার হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মুশফিউল আলম আজাদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের হাসান, অপরাহ্নে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মিজানুর রহমান পিপিএম, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজিদুর রহমান, লাখাই থানা ওসি মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন এবং ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বলেন। এ সময় ঘটনার সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ্বাস দেন এবং পরবর্তীতে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য উপস্থিত সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। এদিকে নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত শেষে সিংহগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য লাখাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারের মাঝে নগদ ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।


     এই বিভাগের আরো খবর